উৎকর্ষের অনন্য প্রতিক : বাংলাদেশিদের পথ প্রদর্শক
হাসান মাহমুদ
বাংলাদেশিদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে অত্যন্ত গর্বের ও আনন্দের একটি দিন। আমেরিকায় বাংলাদেশি অভিবাসিদের মুখ উজ্জ্বল করেছেন তিনি। একজন বাংলাদেশির এই পদে অধিষ্ঠিত হওয়ার লাখ লাখ প্রবাসি আনন্দিত ও গর্বিত।
ঢাকাস্থ যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস থেকে তাদের ভেরিফাইড ফেসবুক পেইজে তাঁকে প্রশংসায় ভাসিয়ে ছবিসহ গত ২৬ আগস্ট বিস্তারিত স্ট্যাটাস দেয়া হয়েছে বাংলাদেশি আমেরিকান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শরীফুল এম. খানকে নিয়ে।
তাতে বলা হয়েছে—
‘ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শরীফুল এম. খানকে অভিনন্দন। তিনি আমেরিকার উৎকর্ষের অনন্য প্রতিক এবং বাংলাদেশি আমেরিকান জনগোষ্ঠির জন্য একজন পথ প্রদর্শক। যুক্তরাষ্ট্রের বিমান বাহিনীতে এই পদমর্যাদা অর্জনকারী প্রথম বাংলাদেশি-আমেরিকান হিসেবে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল খানের এই ডেডিকেশন ও সেবার মূল্যবোধ মাতৃভূমির সুরক্ষা এবং যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তার অগ্রযাত্রায় উজ্জ্বলভাবে প্রতিফলিত হয়েছে।’
দূতাবাসের এই স্ট্যাটাস দেয়ার পর তাতে প্রথম দিনে লাইক পড়েছে ২৫ হাজারের মতো। অভিনন্দন জানিয়ে মন্তব্য করেছেন তিন হাজারের মতো, প্রায় দেড় হাজার মানুষ স্ট্যাটাসটি শেয়ার দিয়েছেন।
গত জুন মাসে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হিসেবে যাদের পদোন্নতি দিয়েছেন শরীফুল খান তাদের মধ্যে অন্যতম। এই পদোন্নতিকে অনন্য এক ফাইল ফলক হিসেবে দেখা হচ্ছে।
বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক কর্নেল শরীফুল এম. খানকে পদোন্নতি দিয়ে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পদ মর্যাদায় অভিষিক্ত করার সংবাদটি দ্রুত ছড়িয়ে যায়। সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত এম. ওসমান সিদ্দিক গত ১৯ আগস্ট পেন্টাগনে আয়োজিত পদোন্নতি অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। তিনি সামাজিক মাধ্যমে এক পোস্টে বলেছেন—
‘বাংলাদেশের সন্তান শরীফুল খান আজ ইতিহাস সৃষ্টি করলেন। যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীতে এই প্রথম কোনো বাংলাদেশি-আমেরিকান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পদে উন্নীত হলেন।’
গত ১৩ জুন ওয়াশিংটন ডিসির পেন্টাগনে আনুষ্ঠানিক এক অনুষ্ঠানে তাঁর এই পদোন্নতি ঘোষণা দেয়া হয়।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শরীফুল খান ১৯৯৭ সালে ইউনাইটেড স্টেটস এয়ার ফোর্স একাডেমি থেকে পলিটিক্যাল সায়েন্সে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। এর পরবর্তী সময়ে তিনি ওয়েবস্টার ইউনিভার্সিটি, ন্যাশনাল ডিফেন্স ইন্টেলিজেন্স কলেজ, স্কুল অব অ্যাডভান্সড এয়ার অ্যান্ড স্পেস স্টাডিজ, ন্যাটো স্কুল, নেভাল ওয়ার কলেজ, এমআইটি ও জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়সহ মার্কিন সামরিক ও বেসামরিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একাধিক উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করেন।
শরীফুল খানের শপথ পাঠ করান যুক্তরাষ্ট্র স্পেস ফোর্সের ভাইস চিফ অব স্পেস অপারেশন্স জেনারেল শন ব্রাটন। বর্তমানে তিনি পেন্টাগনে ‘গোল্ডেন ডোম ফর আমেরিকা’র ডিরেক্টর অব স্টাফ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এ পদে তিনি কৌশল, নীতি, পরিকল্পনা ও মাল্টি-ফাংশনাল কার্যক্রম সমন্বয় করার পাশাপাশি শিল্প, একাডেমিয়া, ন্যাশনাল ল্যাব ও সরকারি সংস্থাগুলোর সঙ্গে অংশীদারিত্ব গড়ে তুলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা সক্ষমতা উন্নয়নে কাজ করছেন।
কর্মজীবনে শরীফুল খান মহাকাশ নিয়ন্ত্রণ, স্যাটেলাইট অপারেশন, স্পেস সিস্টেম, লঞ্চ এবং ন্যাশনাল রিকনাইসেন্স অফিসে স্যাটেলাইট অপারেটর হিসেবে কাজ করেছেন। ২০০১ সালে তিনি কুয়েতের আলি আল সালেম বিমান ঘাঁটিতে মোতায়েন হন এবং ২০০৭ সালে ‘অপারেশন সাইলেন্ট সেনট্রি’র সময় ডিপ্লয়মেন্ট কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি স্কোয়াড্রন ও উইং উভয় পর্যায়ের কমান্ড করেছেন। কলোরাডোর শ্রিভার স্পেস ফোর্স বেসে ৩১০তম স্পেস উইং-এর কমান্ডার হিসেবে প্রায় দেড় হাজার সামরিক সদস্য ও ১৯টি ইউনিটের কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন। এছাড়া তিনি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের নীতি বিভাগেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
তার দীর্ঘ সামরিক জীবনে উল্লেখযোগ্য পদগুলোর মধ্যে রয়েছে— ৫ম স্পেস অপারেশনস স্কোয়াড্রনে অপারেশনস অফিসার, ২১তম স্পেস অপারেশনস স্কোয়াড্রনে এক্সিকিউটিভ অফিসার, ৩৭৯তম স্পেস রেঞ্জ স্কোয়াড্রনের কমান্ডার, যুক্তরাষ্ট্র প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে এয়ার ফোর্স স্ট্র্যাটেজি ডিভিশনের ডেপুটি, ৩১০তম স্পেস উইং-এর কমান্ডার এবং স্পেস ট্রেনিং অ্যান্ড রেডিনেস কমান্ডে মোবিলাইজেশন অ্যাসিস্ট্যান্ট।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শরীফুল খান অসংখ্য সামরিক পদক ও সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য— লেজিয়ন অব মেরিট, ডিফেন্স মেরিটোরিয়াস সার্ভিস মেডেল, মেরিটোরিয়াস সার্ভিস মেডেল, জয়েন্ট সার্ভিস কমেন্ডেশন মেডেল, আর্মড ফোর্সেস এক্সপেডিশনারি মেডেল এবং এয়ার অ্যান্ড স্পেস অ্যাচিভমেন্ট মেডেল।
দীর্ঘ সামরিক জীবনে দেশপ্রেম, নিষ্ঠা ও নেতৃত্বগুণের স্বীকৃতিস্বরূপ শরীফুল খানের এই পদোন্নতি বাংলাদেশি-আমেরিকান কমিউনিটির জন্য অত্যন্ত গৌরবের। রাষ্ট্রদূত ওসমান সিদ্দিক বলেছেন—
‘ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শরীফুল খান কেবল যুক্তরাষ্ট্রের সশস্ত্র বাহিনীর গর্বই নন, তিনি বাংলাদেশি অভিবাসী সমাজেরও এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।’
ব্রিগেডিয়ার শরীফুল এম. খান প্রথম কোন বাংলাদেশি-আমেরিকান যিনি যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীতে এই শীর্ষ পদে পদোন্নতি পেয়েছেন।