Monday, December 29, 2025
spot_img
Homeসম্পাদকীয়আফ্রিকার সতর্কবার্তা সোলার জিওইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে

আফ্রিকার সতর্কবার্তা সোলার জিওইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে

আফ্রিকা যখন বৈশ্বিক জলবায়ু আলোচনায় ক্রমেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিচ্ছে, তখন পরিবেশবিষয়ক জাতিসংঘের এই সপ্তাহের বৈঠক নাইরোবিতে হওয়াকে যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক কর্মসূচিতে না থাকলেও, এর পাশাপাশিই মহাদেশটির কূটনীতিকেরা একটি গুরুতর ইস্যু নিয়ে সুর তুলেছেন। তারা মনে করছেন, সূর্যের রশ্মি কমিয়ে পৃথিবীকে ঠান্ডা করার যে প্রযুক্তি, অর্থাৎ সোলার জিওইঞ্জিনিয়ারিং, সেটিকে সমাধান হিসেবে প্রচার বন্ধ করার সময় এসেছে। এই অবস্থানের সঙ্গে একমত না হওয়ার কারণ খুব কমই আছে।

আফ্রিকান দেশগুলোর উদ্বেগ স্পষ্ট। তারা চায় না যে তাদের ভূখণ্ড পরীক্ষাগারের মতো ব্যবহৃত হোক, যেখানে উচ্চ বায়ুমণ্ডলে কণা ছড়িয়ে সূর্যালোক প্রতিফলিত করার মতো অনিশ্চিত এবং পরীক্ষাহীন প্রযুক্তি প্রয়োগ করা হবে। তাদের মতে এ ধরনের উদ্যোগ পরিবেশগত ঝুঁকি, নৈতিক প্রশ্ন এবং ভূরাজনৈতিক সমস্যার জন্ম দিতে পারে। তাই তারা একটি বৈশ্বিক ‘নন ইউজ’ চুক্তির পক্ষে চাপ দিচ্ছে, যার মাধ্যমে সরকারি তহবিল, বাইরের পরিবেশে পরীক্ষা, পেটেন্ট এবং সরকারি পর্যায়ে প্রযুক্তিটির প্রচার নিষিদ্ধ হবে।

এই ধরনের চুক্তির প্রয়োজন ব্যাখ্যা করা কঠিন নয়, কারণ সোলার জিওইঞ্জিনিয়ারিং কোনোভাবেই গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমায় না। বরং সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে বৃষ্টিপাতের ধরণ বদলে যাওয়া, কৃষি ব্যবস্থায় চাপ তৈরি হওয়া এবং সবচেয়ে ভয়াবহ ঝুঁকি হলো হঠাৎ করে প্রযুক্তির ব্যবহার বন্ধ হলে তাপমাত্রা দ্রুত বেড়ে যাওয়ার ঘটনা, যাকে টার্মিনেশন শক বলা হয়। এই উদ্বেগের জোরেই আফ্রিকান দেশগুলো গত বছরের জাতিসংঘ বৈঠকে সোলার রেডিয়েশন মডিফিকেশন সংক্রান্ত একটি সুইস সমর্থিত প্রস্তাব প্রত্যাহারে বাধ্য করে।

তবুও একটি শিল্প গড়ে উঠছে, যার দাবি বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব গ্রহণ করা সম্ভব। যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরায়েলের একটি যৌথ প্রতিষ্ঠান ভবিষ্যতে বিভিন্ন সরকারকে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ সেবা দিতে স্প্রে প্রযুক্তি তৈরি করছে। অন্যদিকে কয়েকটি দেশ ইতোমধ্যে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে। মেক্সিকো ২০২৩ সালে আকাশসীমায় অনুমতি ছাড়া পরিচালিত পরীক্ষার ঘটনার পর এ ধরনের পরীক্ষা নিষিদ্ধ করে।

সম্প্রতি গবেষকেরা সতর্ক করে বলেছেন, যুক্তরাজ্য প্রথম বড় সরকার হিসেবে সোলার রেডিয়েশন মডিফিকেশন বিষয়ে উল্লেখযোগ্য অর্থায়ন করেছে তার একটি উদ্ভাবনী সংস্থার মাধ্যমে। দেশটি এখন ক্ষুদ্র পর্যায়ের মাঠপর্যায়ের পরীক্ষা ও তথাকথিত ‘ক্লাইমেট কুলিং’ প্রযুক্তির গবেষণা সমর্থন করছে, যা অনেক বিশেষজ্ঞের মতে অপরিণত এবং নিরাপত্তা প্রমাণে অক্ষম। তাই নীতিনির্ধারকদের এ বিষয়ে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন।

গবেষণা ও প্রযুক্তি উন্নয়নে যেমন বিনিয়োগ বাড়ে, তেমনি রাজনৈতিক ইঙ্গিতও তৈরি হয়। ঝুঁকিপূর্ণ প্রযুক্তির জন্য শক্তিশালী সমর্থক গোষ্ঠী গড়ে ওঠে। বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকায়, কারণ দেশটি বিশ্বে তেল ও গ্যাসের সবচেয়ে বড় উৎপাদক। বর্তমান প্রশাসন শক্তি ক্ষেত্রে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠাকে অর্থনৈতিক কৌশলের কেন্দ্রবিন্দু করেছে। সোলার জিওইঞ্জিনিয়ারিং তাদের কাছে এমন এক পথ, যা কার্বননির্ভর শিল্পে প্রভাব না ফেলেও তাপমাত্রাজনিত ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণের সুযোগ দেয়। বৈশ্বিক শক্তি সরবরাহের পাশাপাশি জলবায়ুর নিয়ন্ত্রণক্ষমতা অর্জন যে কিছু শক্তিশালী গোষ্ঠীর কাছে আকর্ষণীয় হবে, তা স্পষ্ট।

আফ্রিকান সরকারের প্রস্তাবিত নন ইউজ চুক্তি ভূমি মাইন ও রাসায়নিক অস্ত্র নিষিদ্ধ করার মতোই এক গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত। কিছু প্রযুক্তির ক্ষমতা এত ব্যাপক যে তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে এবং বিশ্বব্যাপী ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। তাই সতর্কতার নীতি প্রয়োগ করা জরুরি। অন্য অনেক নতুন প্রযুক্তির ক্ষেত্রে যেমন সাবধানতা অবলম্বন করা হয়, এখানে কেন নয়। তাদের বক্তব্য স্পষ্ট যে এই ক্ষমতা কিছু দেশের হাতে সীমাবদ্ধ থাকা উচিত নয়।

আফ্রিকার এই অবস্থান গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা প্রয়োজন। এটি কোনোভাবে জলবায়ু নীতিকে দুর্বল করে না। বরং জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় বাস্তবসম্মত উদ্যোগকে অগ্রাধিকার দিতে সহায়তা করবে। এর মধ্যে রয়েছে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমানো, নবায়নযোগ্য শক্তিতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং যেখানে ক্ষতি ইতোমধ্যে স্থায়ী হয়ে গেছে সেখানে অভিযোজন ব্যবস্থায় অর্থায়ন নিশ্চিত করা।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments