‘আওয়ার ওয়ার্ক, আওয়ার প্রাইড অ্যান্ড আওয়ার প্রগ্রেস’ শ্লোগানকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্রের নিউজার্সির আটলান্টিক সিটিতে অনুষ্ঠিত হলো অ্যালায়েন্স অব সাউথ এশিয়ান আমেরিকান লেবার তথা অ্যাসালের ১৮তম বার্ষিক কনভেনশন। গত ৫ ও ৬ ডিসেম্বর শেরাটন আটলান্টিক সিটি হোটেলের বিশাল হলরুমে উৎসবমুখর এই আয়োজন দক্ষিণ এশিয়ার আট দেশের অভিবাসীদের এক অনন্য মিলনমেলায় রূপ নেয়। রেকর্ডসংখ্যক জনপ্রতিনিধি এবং বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য থেকে আগত অংশগ্রহণকারীদের সরব উপস্থিতিতে পুরো অনুষ্ঠানমঞ্চ হয়ে ওঠে প্রাণবন্ত। পাশাপাশি কনভেনশনে নতুন ন্যাশনাল কমিটির নামও ঘোষণা করা হয়।
কনভেনশনের স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন সংগঠনের ন্যাশনাল প্রেসিডেন্ট ও প্রতিষ্ঠাতা, মূলধারার এক সুপরিচিত লেবার ইউনিয়ন নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি। আর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন ১৮তম কনভেনশন কমিটির চেয়ার, একজন অধ্যাপক ও গবেষক। দু’দিনব্যাপী এই আয়োজনে কি নোট বক্তব্য প্রদান করেন নিউইয়র্ক স্টেট কম্পট্রোলার এবং সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত।
ন্যাশনাল প্রেসিডেন্ট, ন্যাশনাল সেক্রেটারি জেনারেল এবং নিউজার্সি চ্যাপ্টারের প্রেসিডেন্টের যৌথ পরিচালনায় কনভেনশনের শুরুতে শপথ বাক্য পাঠ করান সারাহ ওসাকিয়া এবং মিনহা মাহজাবীন। অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্রের মূলধারার নির্বাচিত কর্মকর্তা, রাজনীতিবিদ ও শ্রমিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন। নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের গভর্নরও অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে না পেরে শুভেচ্ছা বার্তা পাঠান।
অনুষ্ঠানে অ্যাসালের বিভিন্ন চ্যাপ্টারের নেতারা তাদের সদস্যদের পরিচয় তুলে ধরেন এবং আগামীর কর্মপরিকল্পনা উপস্থাপন করেন। ন্যাশনাল প্রেসিডেন্ট তাঁর বক্তব্যে অ্যাসালের প্রাধান্যপ্রাপ্ত লক্ষ্য তুলে ধরে বলেন, এবারের থিমের মূল শক্তি হচ্ছে অভিবাসী শ্রমজীবী মানুষের সম্মান, কাজ এবং উন্নয়নের যাত্রা। তিনি জানান, দক্ষিণ এশীয় অভিবাসীদের অধিকার সুসংহত করতে অ্যাসাল গত কয়েক বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে এবং বিভিন্ন যৌক্তিক দাবি মূলধারার রাজনীতিতে শক্তভাবে উপস্থাপন করছে।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, ইমিগ্র্যান্ট কমিউনিটির প্রতিটি সমস্যাকে জনপ্রতিনিধিদের আলোচ্য বিষয়ে পরিণত করে তার স্থায়ী সমাধানে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে সংগঠনটি। অ্যাসালের ২২টি চ্যাপ্টারের কর্মকাণ্ডের প্রশংসা করে তিনি বলেন, সদস্যদের কঠোর পরিশ্রমের ফলেই অ্যাসাল আজকের শক্ত অবস্থানে পৌঁছেছে এবং এই ধারা ভবিষ্যতেও অব্যাহত রাখতে হবে।
বিদায়ী ন্যাশনাল প্রেসিডেন্ট নতুন ন্যাশনাল কমিটির নাম ঘোষণা করেন। নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন বিদায়ী সেক্রেটারি জেনারেল এবং প্রেসিডেন্ট ইমিরাটস হন বিদায়ী ন্যাশনাল প্রেসিডেন্ট। এছাড়া এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং সেক্রেটারি জেনারেলের দায়িত্ব পান দুজন নতুন নেতৃত্ব। জানা গেছে, খুব শিগগিরই নবনির্বাচিত ন্যাশনাল কমিটির শপথ এবং অভিষেক অনুষ্ঠিত হবে।
কি নোট স্পিকাররা তাদের বক্তব্যে অ্যাসালের কাজের ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, সংগঠনটি অভিবাসী কমিউনিটির ঐক্য প্রতিষ্ঠা এবং তাদের অগ্রগতিতে বিশেষ ভূমিকা রাখছে। যুক্তরাষ্ট্রে শ্রম পরিবেশ উন্নয়ন, ন্যায্য মজুরি নিশ্চিতকরণ ও শ্রমিক অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে অ্যাসালের অবদান ইতোমধ্যে প্রশংসিত হয়েছে।
কনভেনশন কমিটির চেয়ার তাঁর বক্তব্যে বলেন, ১৮তম বার্ষিক কনভেনশন উদ্বোধন করতে পেরে তিনি সম্মানিত। তিনি সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা নেতার অবদানের কথা উল্লেখ করেন এবং জানান যে কমিউনিটির স্বার্থে অ্যাসালের কার্যক্রম ইতোমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে প্রশংসা কুড়িয়েছে।
সেক্রেটারি জেনারেল কনভেনশনে গত বছরের কার্যক্রম উপস্থাপন করেন এবং বিভিন্ন চ্যাপ্টারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের পরিচয় করান। তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠাতার স্বপ্ন ছিল মূলধারা এবং কমিউনিটির মধ্যে একটি শক্ত সেতুবন্ধন তৈরি করা, যা আজ যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বাস্তবে রূপ নিয়েছে। তিনি বিশ্বাস করেন, আরও কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে এমন একটি পরিবেশ তৈরি করা সম্ভব যেখানে প্রতিটি দক্ষিণ এশিয়ান তাদের আমেরিকান স্বপ্ন পূরণ করতে পারবেন।
অনুষ্ঠানে অ্যাসালের পক্ষ থেকে একাধিক অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয় এবং কনভেনশনকে ঘিরে প্রকাশ করা হয় তথ্যসমৃদ্ধ একটি বিশেষ জার্নাল। দিনব্যাপী এ বর্ণাঢ্য আয়োজনে স্টেট ও সিটির বিভিন্ন পর্যায়ের নির্বাচিত প্রতিনিধি, রাজনীতিবিদ, কমিউনিটি লিডার, সাংবাদিক এবং দক্ষিণ এশীয় আমেরিকানদের বিপুল অংশগ্রহণ উৎসবের আবহকে আরও সমৃদ্ধ করে।



