অস্ট্রেলিয়ায় নতুন আইন কার্যকর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ১৬ বছরের কম বয়সী শিশু-কিশোরদের লাখো অ্যাকাউন্ট বন্ধ হয়ে গেছে। দেশটির সরকার এই পদক্ষেপ নিয়েছে শিশু-কিশোরদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমভিত্তিক সহিংসতা ও আসক্তি থেকে রক্ষা করার উদ্দেশ্যে।
নতুন আইন অনুযায়ী, অস্ট্রেলিয়ার ১৬ বছরের কম বয়সী ব্যবহারকারীরা ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, এক্স, স্ন্যাপচ্যাট, টিকটক, ইউটিউবের মতো জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্মে নিজেরা অ্যাকাউন্ট খুলতে বা ব্যবহার করতে পারবেন না।
২০২৪ সালের নভেম্বর মাসে দেশের প্রধানমন্ত্রী আইন প্রণয়নের ঘোষণা দেন এবং পরে এটি পার্লামেন্টে পাস হয়। প্রধানমন্ত্রী তখন আশ্বস্ত করেন যে, আইন লঙ্ঘনের কারণে শিশু-কিশোরদের বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না। তবে প্ল্যাটফর্মগুলোর ওপর বর্তায় ব্যবহারকারীর বয়স নিশ্চিত করার দায়িত্ব। এই দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন না করলে সংশ্লিষ্ট প্ল্যাটফর্মকে সর্বোচ্চ ৪ কোটি ৪৯ লাখ অস্ট্রেলিয়ান ডলার (৩ কোটি ৩০ লাখ মার্কিন ডলার) জরিমানা প্রদান করতে হতে পারে।
আইনটির সমর্থকরা উল্লেখ করছেন, এটি শিশুদের আসক্তিকর অ্যালগরিদমের হাত থেকে রক্ষা করবে। এই অ্যালগরিদম প্রায়ই সহিংসতা, পর্নোগ্রাফি ও ভুল তথ্যের মতো ক্ষতিকর কনটেন্টের মাধ্যমে শিশুদের প্রভাবিত করে। এছাড়াও, নতুন বিধিনিষেধ সাইবার হেনস্তা (বুলিং) এবং অনলাইনে শিশুদের যৌন ও অন্যান্য শোষণ কমাতে সহায়ক হবে। এর ফলে শিশুদের বাইরে খেলাধুলার সুযোগ বৃদ্ধি পাবে, ঘুমের মান উন্নত হবে এবং শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যও সুস্থ থাকবে।
তবে আইনটির সমালোচকরা বলছেন, প্রযুক্তিগত দিক থেকে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে কি না তা নিয়ে যথেষ্ট উদ্বেগ রয়েছে। তাদের মতে, এটি শিশুদের একাকী ও কোণঠাসা করে ফেলতে পারে এবং অন্যদের অনলাইনের কম নিয়ন্ত্রিত, ঝুঁকিপূর্ণ অংশের দিকে ঠেলে দিতে পারে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, সঠিক বাস্তবায়ন না হলে এই আইন শিশুদের প্রয়োজনীয় অনলাইন শিক্ষা ও যোগাযোগ থেকে বঞ্চিত করতে পারে।
আইনটি কার্যকর হওয়ার পরেই দেশের বড় বড় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্ল্যাটফর্মগুলো বয়স যাচাই ও প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা কার্যকর করতে শুরু করেছে। যদিও এই পদক্ষেপ শিশুদের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ একটি উদ্যোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে, কিন্তু এর বাস্তবায়ন ও প্রভাব নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা ও আলোচনা চলছে।
পরবর্তীতে আইন প্রণয়নকারী কর্তৃপক্ষ এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোকে একসাথে কাজ করে নিশ্চিত করতে হবে যে, শিশুদের সুরক্ষা নিশ্চিত হয় এবং তারা অনলাইনে নিরাপদভাবে ব্যবহার করতে পারে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এটি দীর্ঘমেয়াদে শিশুদের মানসিক ও সামাজিক বিকাশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হবে।



