ত্বকের যত্নে ঘরোয়া সৌন্দর্য পণ্যের ব্যবহার এখন ব্যাপকভাবে জনপ্রিয়। বিশেষ করে LED ফেস মাস্ক নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলছে বিপুল আগ্রহ—ইনফ্লুয়েন্সাররা নিয়মিত এগুলোর আনবক্সিং ভিডিও ও রিভিউ প্রকাশ করছেন। কিন্তু সম্প্রতি এসব পণ্যের বিজ্ঞাপন ঘিরে বড় ধরনের বিতর্ক দেখা দিয়েছে।
বিজ্ঞাপন নিয়ন্ত্রক সংস্থা বেশ কিছু LED ফেস মাস্কের বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ করেছে, কারণ এগুলিতে অনুমোদনহীনভাবে দাবি করা হয়েছিল যে পণ্যগুলো ব্রণ (acne) ও রোসেসিয়া (rosacea) নিরাময়ে কার্যকর। অথচ এই ধরনের চিকিৎসাগত দাবি করার জন্য প্রয়োজনীয় অনুমোদন ছিল না।
ত্বক বিশেষজ্ঞদের একটি বড় অংশ এখনো বিভক্ত এই বিষয়ে—ঘরে ব্যবহৃত LED মাস্ক কি আসলেই ক্লিনিক-গ্রেড যন্ত্রের মতো কার্যকর ফল দিতে পারে? অনেক বিশেষজ্ঞই বলছেন, এখন পর্যন্ত যথেষ্ট বড় পরিসরে ক্লিনিকাল ট্রায়াল হয়নি যাতে ঘরোয়া LED মাস্কের কার্যকারিতা প্রমাণিত হয়।
নিয়ন্ত্রক সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী, এমন কোনো ডিভাইস যদি চিকিৎসা-সংক্রান্ত দাবি করে, তবে সেটিকে অবশ্যই Medicines and Healthcare Products Regulatory Agency (MHRA)-এর নিবন্ধিত তালিকায় থাকতে হবে। কিন্তু MHRA জানিয়েছে, বর্তমানে কোনো LED ফেস মাস্ক তাদের নিবন্ধনে নেই। ফলে ব্রণ বা রোসেসিয়া নিরাময়ের মতো চিকিৎসা-সংক্রান্ত দাবি করা সম্পূর্ণ অননুমোদিত।
Advertising Standards Authority (ASA) কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) ব্যবহার করে এমন বিজ্ঞাপনগুলো চিহ্নিত করে, যেগুলো নিয়ম ভাঙছে বলে সন্দেহ করা হয়েছিল। এরপরই একাধিক ব্র্যান্ডের বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ করা হয়।
একটি LED ফেস মাস্ক ব্র্যান্ডের ওয়েবসাইটে “আমার ব্রণ তিন সপ্তাহে সম্পূর্ণ মিলিয়ে গেছে” এমন দাবি করা হয়েছিল। বিজ্ঞাপনে আগে–পরে তুলনামূলক ছবি দিয়ে দেখানো হয়েছিল যে ত্বকের অবস্থা নাটকীয়ভাবে উন্নত হয়েছে। এছাড়া বিজ্ঞাপনে লেখা ছিল, “চার সপ্তাহে ব্রণ ৮৩% কমে যায়।” কর্তৃপক্ষ জানায়, এই ধরনের চিকিৎসাগত দাবি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, এবং এমন মন্তব্য কোনো গ্রাহকের অভিজ্ঞতা হলেও তা পণ্যটিকে চিকিৎসা-সামগ্রী হিসেবে প্রমাণ করে না।
ব্র্যান্ডটি পরে তাদের বিজ্ঞাপন থেকে “acne treatment”, “healing” ও “rosacea cure” সম্পর্কিত শব্দগুলো সরিয়ে দেয়। তারা ব্যাখ্যা করে যে এখন থেকে এসব উল্লেখ শুধু ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা হিসেবে দেখানো হবে, চিকিৎসাগত দাবি হিসেবে নয়।
আরেকটি জনপ্রিয় ব্র্যান্ডের বিজ্ঞাপনে দেখা যায়, এক নারী LED মাস্ক ব্যবহার করছেন, এবং নিচে ক্যাপশন লেখা—“ব্লু লাইট ব্যবহার করে আমার ব্রণ ও দাগের উন্নতি হয়েছে।” বিজ্ঞাপন কর্তৃপক্ষ জানায়, এখানে “acne treatment” উল্লেখ করা সরাসরি চিকিৎসাগত দাবি, যা অনুমোদনবিহীন। ফলে সেই বিজ্ঞাপনও বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়।
এছাড়া আরও কয়েকটি ব্র্যান্ড, যেমন একটি বিউটি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত “RejuvaLux Mask” এবং “Luyors Retail Inc”-এর মাস্ক বিজ্ঞাপনেও একই সমস্যা ধরা পড়ে। এসব বিজ্ঞাপনে বলা হয়েছিল, LED মাস্ক “acne” ও “rosacea”-এর মতো সমস্যায় কাজ করে বা সমাধান দেয়। সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলো পরে জানায়, তারা ভবিষ্যতে চিকিৎসা-সংক্রান্ত কোনো দাবি আর করবে না।
ASA-এর একজন মুখপাত্র বলেন, “বিজ্ঞাপন মানুষের কেনাকাটার সিদ্ধান্তে প্রভাব ফেলতে পারে। তাই বিজ্ঞাপনদাতারা যেন প্রসাধনী সুবিধা ও চিকিৎসাগত দাবির সীমারেখা মিশিয়ে না ফেলেন, সেটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”
তিনি আরও বলেন, “কোনো পণ্য সম্পর্কে চিকিৎসা বা কার্যকারিতার দাবি করতে হলে তার প্রমাণ থাকা আবশ্যক। আমাদের এই পদক্ষেপ মূলত সেই সব মানুষকে রক্ষা করার জন্য, যারা আসল চিকিৎসা-সমাধান খুঁজছেন।”
এই ঘটনাকে ঘিরে এখন অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন—ঘরে ব্যবহারের LED মাস্ক কি আদৌ নিরাপদ এবং কার্যকর, নাকি এটি কেবল সোশ্যাল মিডিয়ার প্রচারণা নির্ভর এক সৌন্দর্য ট্রেন্ড মাত্র?



