Thursday, November 20, 2025
spot_img
Homeসম্পাদকীয়COP30: তেল ও গ্যাস যুগের অবসান—কেউই খরচ এড়াতে পারবে না

COP30: তেল ও গ্যাস যুগের অবসান—কেউই খরচ এড়াতে পারবে না

বিশ্ব এখন তেল ও গ্যাসের যুগের শেষ দিকের দিকে এগোচ্ছে। কিন্তু এই পরিবর্তনের গতি এখনও পর্যাপ্ত নয়—না পরিবেশের জন্য, না সুষ্ঠু ও ন্যায়সঙ্গত স্বচ্ছন্দ এনার্জি রূপান্তরের জন্য। ব্রাজিলের বেলেমে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলন COP30-এ এরই মধ্যে এই বাস্তবতা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

যেমন বেলেমের আকাশে সকাল শুরু হয় উজ্জ্বল সূর্যের আলো দিয়ে, তারপর অমাজনের মেঘ জমে ভারী বৃষ্টিপাত আনে, তেমনি COP30-ও সূর্যোদয়ের মতো আশাবাদে শুরু হয়। প্রথম দিনে সম্মেলনের এজেন্ডায় প্রধান বিষয়গুলো চূড়ান্ত হয়। কিন্তু তেল ও গ্যাস যুগের ধীর অবসান, জলবায়ু অর্থায়ন, কার্বন সীমা ও জাতিসংঘের প্যারিস চুক্তির লক্ষ্য পূরণের ব্যবধান নিয়ে আলোচনা এবং সিদ্ধান্ত নেওয়া বাকি আছে।

আন্তর্জাতিক শক্তি সংস্থা (IEA) সম্প্রতি ঘোষণা করেছে, জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার এই দশকে শীর্ষে পৌঁছাবে এবং পরবর্তীতে ধীরে ধীরে হ্রাস পাবে। অর্থনীতিবিদদের মতে, এই পরিবর্তন রাজনৈতিক কারণে নয়, বরং নবায়নযোগ্য শক্তির অর্থনীতির জয়জনিত কারণে। আফ্রিকা এমন শক্তি উৎপাদন করতে পারবে যা ২০৪০ সালের প্রয়োজনের প্রায় ১,০০০ গুণ হবে এবং সেই শক্তি রপ্তানি করা সম্ভব হবে। তবে বৈশ্বিকভাবে জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারের হ্রাস এখনও ধীর। এই পরিস্থিতিতে COP30-এর মূল বিতর্ক দাঁড়াচ্ছে—যে দেশগুলোর জন্য ন্যায্য ও সুষ্ঠু রূপান্তর দরকার, তার অর্থ কোথা থেকে আসবে।

বিশ্বের গড় তাপমাত্রা প্রাক-শিল্প যুগের তুলনায় ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি না হয়, সেটি নিশ্চিত করা COP30-এর চ্যালেঞ্জ। উন্নয়নশীল দেশগুলো চায়, ধনী দেশগুলো তাদের ঐতিহাসিক দায়িত্ব অনুযায়ী অর্থ প্রদান করবে, বিশেষত অভিযোজন ও সাস্টেইনেবল প্রজেক্টের জন্য। ধনী দেশগুলো চায়, মূলত কার্বন মার্কেট ও বাণিজ্যিক সুযোগের মাধ্যমে নির্গমন হ্রাস করা হোক। এ সংঘাত কেবল প্রযুক্তিগত নয়, বরং এটা নির্ধারণ করে যে, তেল ও গ্যাসের ন্যায্য ও সুষ্ঠু পরিণতি কাদের খরচ বহন করবে।

অর্থের হিসাব ভয়ঙ্কর। গত বছর উন্নয়নশীল দেশগুলো বছরে ১.৩ ট্রিলিয়ন ডলারের জলবায়ু অর্থায়নের দাবি জানায়, যা তারা বলে প্রয়োজন সাস্টেইনেবল অবকাঠামো ও রেসিলিয়েন্সের জন্য। তবে আসলেই প্রতিশ্রুতির মাত্র $৩০০ বিলিয়ন ২০৩৫ সালের মধ্যে প্রদান করা হবে, যার অনেকটাই ঋণ বা “মোবিলাইজড” প্রাইভেট ফান্ড। বিশ্লেষণ দেখিয়েছে, এই অর্থের মাত্র এক তৃতীয়াংশ বাস্তবে এসেছে। বিশেষভাবে, শ্রমিক ও সম্প্রদায়ের জন্য ন্যায্য রূপান্তরের ক্ষেত্রে মাত্র ৩% অর্থ ব্যবহৃত হয়েছে।

বেলেমের আকাশের মেঘ যেমন জমতে থাকে, COP30-এও মূল পরীক্ষা শুরু হবে—দক্ষিণ ও উত্তর বিশ্ব কীভাবে ন্যায্য দায়িত্ব ভাগাভাগি করবে। উন্নয়নশীল দেশগুলো G77 ও চীনের সমর্থনে “ন্যায্য রূপান্তর ব্যবস্থা” প্রস্তাব করেছে, যা ক্লিন টেক ট্রান্সফার, ঋণমুক্ত অর্থায়ন এবং জলবায়ু সহযোগিতাকে কার্যকর করবে। ধনী দেশগুলো মনে করছে, এটি জলবায়ু লক্ষ্য অর্জনে বিলম্ব ঘটাবে।

বর্তমান সূচি অনুযায়ী, পৃথিবী এই শতকে ২.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস উষ্ণতায় পৌঁছাবে—যা এখনও বিপজ্জনক হলেও এক দশক আগে ৩.৬ ডিগ্রির তুলনায় কম। ধনী দেশগুলো তাদের সরকারি বন্ডের মালিকদের জন্য কোটি কোটি ব্যয় করছে, কিন্তু নিজেদের দায় থেকে উদ্ভূত জলবায়ু সংকটের জন্য অর্থ দিতে কাতর। COP30-এ হয় ধনী দেশগুলো তাদের ন্যায্য অংশ স্বীকার করবে, নয়তো তারা হাত ধরাধরি করে দেখবে পৃথিবী আগুনে ঝলসে যাচ্ছে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments