Monday, October 6, 2025
spot_img
Homeসম্পাদকীয়ট্রাম্পের দুর্বলতায় জ্বলছে ইউক্রেন ও গাজা, গণতান্ত্রিক দেশগুলোর ঐক্য জরুরি

ট্রাম্পের দুর্বলতায় জ্বলছে ইউক্রেন ও গাজা, গণতান্ত্রিক দেশগুলোর ঐক্য জরুরি

বিশ্বের নানা সংকটে একা একজন মার্কিন প্রেসিডেন্টের ভূমিকা সবকিছু বদলে দিতে পারে—এমন ধারণা অনেক সময় অতিমূল্যায়িত হয়। কিন্তু প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেকে যেন এক অঘোষিত বৈশ্বিক সম্রাট হিসেবে উপস্থাপন করতে চেয়েছিলেন। ক্ষমতায় আসার আগেই তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন ইউক্রেন ও গাজার সংঘাত দ্রুত শেষ করবেন। তবে আট মাস পেরিয়ে এখন দৃশ্যপট পুরোপুরি উল্টো। সংঘাত আরও তীব্র হয়েছে, আর ট্রাম্পের সেই বড়াই আজ ভেস্তে গেছে।

সাম্প্রতিক সময়ে রাশিয়ার ড্রোন হামলা ন্যাটো সদস্য পোল্যান্ডে আঘাত হানায় ইউক্রেন যুদ্ধ আরও বিস্তৃত হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। একইভাবে, ইসরায়েলের কাতারে বিমান হামলা গাজার শান্তি প্রক্রিয়াকে কার্যত ধ্বংস করেছে। এই দুই ঘটনায় এক সাধারণ সূত্র স্পষ্ট—মার্কিন দুর্বলতা, আর সেই দুর্বলতার প্রতীক ট্রাম্প।

দৃশ্যত শক্তিশালী দেখানোর জন্য ট্রাম্প নানা পদক্ষেপ নিয়েছিলেন—কখনও নির্বাহী আদেশ জারি করে, কখনও প্রতিবেশী বা অভিবাসীদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিয়ে। কিন্তু কঠিন প্রতিপক্ষের মুখোমুখি হলে তিনি বারবার ব্যর্থ হয়েছেন। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন কিংবা ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু সহজেই তাঁর দুর্বলতা কাজে লাগিয়েছেন। তাঁরা ট্রাম্পকে প্রশংসায় ভোলান, শান্তির ভান করেন, পরে আবার আগের মতো সহিংসতা চালিয়ে যান। ট্রাম্প কেবল অসন্তুষ্টির ফোন কলেই সীমাবদ্ধ থাকেন, যা তাঁর দুর্বলতাকেই প্রকাশ করে।

ফলে সংঘাত কমানোর বদলে ট্রাম্পের হস্তক্ষেপ পরিস্থিতি আরও জটিল করেছে। ইউরোপীয় দেশগুলো আজ হতবাক—কারণ যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্ব এখন আগের মতো দৃঢ় নয়। ট্রাম্পের ইউরোপবিরোধী নীতি, ন্যাটো নিয়ে প্রশ্ন তোলা ও বাণিজ্য যুদ্ধ পশ্চিমাদের একতার ভেতর বিভাজন তৈরি করেছে। এতে কর্তৃত্ববাদী শাসকরা আরও শক্তিশালী হচ্ছে।

পুতিনের পোল্যান্ডে হামলা ছিল ন্যাটোর ঐক্য পরীক্ষা করার কৌশল। আর ট্রাম্পের নীরবতা রাশিয়ার আগ্রাসনকে আরও উৎসাহিত করেছে। আগামীতে ফিনল্যান্ড বা জার্মানি হুমকির মুখে পড়লে ট্রাম্প কিছু করবেন—এমন আস্থার জায়গা নেই। অন্যদিকে, মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েলের আগ্রাসন থামাতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতেও তিনি ব্যর্থ। কাতারে হামলার পরও তিনি কেবল অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন, কিন্তু কোনও কঠোর পদক্ষেপ নেননি।

বিশ্বজুড়ে এখন ঐক্যবদ্ধ গণতান্ত্রিক নেতৃত্বের অভাব স্পষ্ট। যেমন ২০০৩ সালের ইরাক আক্রমণ বা জলবায়ু সংকটে ব্যর্থতার মতোই, আজ ইউক্রেন ও গাজার যুদ্ধও বৈশ্বিক অরাজকতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে পৃথিবীকে। জাতিসংঘ ও ইউরোপ যদি এখনই রাশিয়া ও ইসরায়েলের আগ্রাসন ঠেকাতে কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়, তবে আরও ভয়াবহ বিপর্যয় অনিবার্য।

ট্রাম্পের দিকে তাকিয়ে থাকার মানেই হলো শূন্য আশায় অপেক্ষা করা। এখন গণতান্ত্রিক দেশগুলোকেই এগিয়ে এসে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য একতাবদ্ধভাবে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments