ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে বিজয়ী ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতাদের রায়েরবাজার বধ্যভূমি সফরকে ঘিরে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে এ প্রথম জামায়াত-সমর্থিত কোনো সংগঠন শহীদ স্মৃতিসৌধে গিয়ে দোয়া ও মোনাজাত করল।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এ ঘটনাকে জামায়াতের দীর্ঘদিনের স্বাধীনতাযুদ্ধবিরোধী অবস্থান পরিবর্তনের ইঙ্গিত হিসেবে দেখা হচ্ছে। দলটির দায়িত্বশীল সূত্র জানাচ্ছে, স্বাধীনতাযুদ্ধের বিরোধিতার জন্য ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চাওয়ার প্রশ্নে নেতৃত্ব পর্যায়ে এখন আগের তুলনায় বেশি ইতিবাচক আলোচনা চলছে। তবে বিষয়টি নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে দলটির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পর্ষদ কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা।
এর আগে জামায়াতের সাবেক দুই কেন্দ্রীয় নেতা মুক্তিযুদ্ধবিরোধী ভূমিকার জন্য প্রকাশ্যে অনুশোচনা প্রকাশ করেছিলেন। এদের মধ্যে একজন ইস্তফা দিয়ে বিদেশে থাকাকালীন সময়ে মারা যান। অপরজন মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডিত হয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হন। উভয়ের বক্তব্যেই দলীয় সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা উঠে আসে।
দলীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় জানা গেছে, একাধিকবার আলোচনার পরও সবাই একমত না হওয়ায় এতদিন আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসেনি। তবে সাম্প্রতিক ডাকসু নির্বাচনের পর শীর্ষ নেতাদের মধ্যে সমঝোতার নতুন ধারা দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে তরুণ নেতাদের চাহিদা অনুযায়ী পুরোনো অবস্থান থেকে সরে এসে সময়োপযোগী নীতি গ্রহণে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
কেন্দ্রীয় সূত্রগুলো বলছে, একাত্তরের ভূমিকা ছাড়াও জামায়াত অন্যান্য ক্ষেত্রেও পরিবর্তনের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। যেমন জাতীয় নির্বাচনে শপথধারী সদস্য ছাড়া প্রার্থী মনোনয়ন না দেওয়ার নিয়ম এবার শিথিল করার চিন্তাভাবনা চলছে। একই সঙ্গে অন্য ধর্মাবলম্বীদের প্রতিও উদার নীতি নেওয়ার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।
ডাকসু নির্বাচনে শিবিরের বিজয়ী প্রার্থীরা ছাত্রী সংস্থার সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করার অনুমতি পান, যা অতীতে হয়নি। এরপর বিজয়ী শিক্ষার্থীরা শহীদ বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধে গিয়ে দোয়া করেন এবং স্বাধীনতাযুদ্ধে শহীদদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বও এ উদ্যোগকে সমর্থন জানায়।
রাজনৈতিক মহলে এ ঘটনাকে জামায়াতের ভবিষ্যৎ কৌশলগত অবস্থান পরিবর্তনের ইঙ্গিত হিসেবে গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে।