জার্মানির মিউনিখে অনুষ্ঠিত বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ অটো শোতে এবছর আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল চীনের ইলেকট্রিক গাড়ি নির্মাতারা। ইউরোপের ঐতিহ্যবাহী অটোমোবাইল শিল্পের ঘাঁটিতে দাঁড়িয়ে তারা নিজেদের নতুন মডেল, প্রযুক্তি ও পরিকল্পনা দিয়ে দৃষ্টি কাড়তে সক্ষম হয়েছে।
ইভেন্টজুড়ে বিশাল স্টল ও আধুনিক গাড়ি প্রদর্শনের মাধ্যমে চীনা প্রতিষ্ঠানগুলো স্পষ্ট করে দিয়েছে যে তারা ইউরোপের বাজারে দ্রুত সম্প্রসারণে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। ইউরোপীয় নির্মাতারা এখনো ইলেকট্রিক গাড়ি উৎপাদনে পিছিয়ে থাকলেও চীনা কোম্পানিগুলো ক্রমাগত নতুন মডেল বাজারে আনছে। ফলে প্রতিযোগিতা আরও তীব্র হয়ে উঠেছে।
চীনা কোম্পানিগুলো ইতিমধ্যেই ইউরোপে বাজার দখলে অগ্রগতি অর্জন করেছে। চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে তাদের মার্কেট শেয়ার প্রায় দ্বিগুণ হয়ে ৫ শতাংশেরও বেশি হয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের শুল্ক বাধা সত্ত্বেও তারা বিক্রি ও সম্প্রসারণের উচ্চাকাঙ্ক্ষী লক্ষ্য ঘোষণা করছে।
একটি জনপ্রিয় চীনা কোম্পানি আগামী বছর ইউরোপে সাশ্রয়ী মূল্যের ‘মোনা সিরিজ’ আনার পরিকল্পনা করছে, যা চীনে প্রায় ১৭ হাজার ডলারের কম দামে বিক্রি হয়। অন্যদিকে আরেক শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান ঘোষণা করেছে, তারা ২০২৭ সালের মধ্যে ইউরোপে কমপক্ষে ৫০ হাজার গাড়ি বিক্রি করবে এবং নতুন দুটি ইভি মডেল বাজারে আনবে। এছাড়াও, বিভিন্ন চীনা ব্র্যান্ড শোতে নিজেদের নতুন প্রযুক্তি ও মডেল প্রদর্শন করেছে।
প্রযুক্তি নির্ভর কৌশলকে সামনে রেখে চীনা গাড়ি নির্মাতারা তাদের মডেলগুলোতে বিশাল স্ক্রিন, ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্ট, এমনকি ফ্রিজ ও ম্যাসাজ ফিচারের মতো অতিরিক্ত সুবিধাও যুক্ত করেছে। সাশ্রয়ী দাম, উন্নত ব্যাটারি প্রযুক্তি ও বৃহৎ উৎপাদন সক্ষমতার কারণে ইউরোপীয় প্রতিদ্বন্দ্বীদের তুলনায় তারা বড় সুবিধায় রয়েছে বলে বিশ্লেষকদের অভিমত।
তবে ইউরোপের ঐতিহ্যবাহী নির্মাতারাও পিছিয়ে নেই। মিউনিখের শোতে নামকরা ব্র্যান্ডগুলো তাদের নতুন ইভি মডেল ও উন্নত প্রযুক্তি প্রদর্শন করেছে। বিশেষ করে আধুনিক কম্পিউটারাইজড সিস্টেম এবং স্বয়ংক্রিয় ড্রাইভিং সফটওয়্যারের মাধ্যমে নিজেদের শক্তি প্রদর্শনের চেষ্টা করেছে।
তবুও বিশ্লেষকদের মতে, ইউরোপীয় ব্র্যান্ডগুলো এখনো যথেষ্ট দ্রুততার সঙ্গে বাজারে নতুন প্রযুক্তি ও মডেল আনতে পারছে না। অন্যদিকে চীনা প্রতিষ্ঠানগুলো দেরি না করে একের পর এক নতুন গাড়ি চালু করছে। ফলে প্রতিযোগিতায় ইউরোপীয় ব্র্যান্ডগুলোকে আরও ত্বরান্বিত হতে হবে।
সার্বিকভাবে বলা যায়, ইউরোপের বাজারে চীনা ইলেকট্রিক গাড়ি নির্মাতাদের শক্তিশালী প্রবেশ ইউরোপীয় ব্র্যান্ডগুলোর জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর চীনারা স্পষ্টতই কাউকে অপেক্ষা না করিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে দ্রুত পদক্ষেপে।