কূটনীতি ও শান্তি মধ্যস্থতার জন্য পরিচিত কাতার এবার সরাসরি ইসরায়েলের হামলার শিকার হয়েছে। দোহার কেন্দ্রস্থলে এক বৈঠকে ড্রোন ও বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল, এতে ছয়জন নিহত হন। নিহতদের মধ্যে একজন কাতারি নিরাপত্তা কর্মকর্তা থাকলেও হামাসের কোনো শীর্ষ নেতা হতাহত হননি।
এ ঘটনার মাধ্যমে প্রথমবারের মতো উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদের (জিসিসি) সদস্যরাষ্ট্রে হামলার দায় স্বীকার করল ইসরায়েল। ফলে পারস্য উপসাগরের জ্বালানি সমৃদ্ধ দেশগুলোতে নিরাপত্তা নিয়ে নতুন শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
লন্ডনের এক নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞের মতে, কাতার স্বল্পমেয়াদে কূটনীতি ও আইনি প্রক্রিয়াকেই প্রধান হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করবে। জাতিসংঘ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক ফোরামে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে নিন্দা প্রস্তাব উত্থাপন করার প্রস্তুতিও চলছে। অন্যদিকে, আরব লিগ ও ওআইসির মাধ্যমে সম্মিলিত পদক্ষেপ নেওয়ার চেষ্টা করছে দোহা।
তবে সামরিক প্রতিশোধ নেওয়ার সম্ভাবনা কম বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। বরং কাতার এখন আঞ্চলিক প্রতিরক্ষা জোরদার ও আকাশ প্রতিরক্ষা খাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর বিষয়ে চিন্তা করছে।
এই হামলার পর উপসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যে বিরাজমান মতপার্থক্য অনেকটা পাশে সরিয়ে একধরনের ঐক্য তৈরি হয়েছে। সংযুক্ত আরব আমিরাত ও সৌদি আরবের শীর্ষ নেতারা দোহা সফর করে কাতারের প্রতি সংহতি জানান। বিশ্লেষকদের মতে, উপসাগরীয় রাজতন্ত্রগুলোর ওপর হামলাকে তারা সম্মিলিত হুমকি হিসেবেই দেখছে।
অতীতের অবরোধ ও বিভাজনের ইতিহাস থাকলেও এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। ইসরায়েলের হামলা গোটা উপসাগরীয় অঞ্চলের নিরাপত্তাকে নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকাও প্রশ্নের মুখে পড়েছে। দোহায় মার্কিন সেন্ট্রাল কমান্ড সদরদপ্তর ও হাজারো সেনা থাকা সত্ত্বেও ইসরায়েলের হামলা ঠেকাতে ব্যর্থ হয়েছে ওয়াশিংটন। ফলে অনেক দেশ এখন বিকল্প কৌশলগত অংশীদার খুঁজতে আগ্রহী হয়ে উঠছে।
উপসাগরীয় বিশেষজ্ঞদের মতে, ইসরায়েলের সাম্প্রতিক পদক্ষেপ আঞ্চলিক নিরাপত্তার সমীকরণ বদলে দিতে পারে। জিসিসি দেশগুলো ইসরায়েলকে এখন ইরানের সমপর্যায়ের হুমকি হিসেবে বিবেচনা করতে শুরু করেছে।