যুক্তরাষ্ট্রে ফেডারেল রিজার্ভের এক গভর্নরকে অপসারণের উদ্যোগ সাময়িকভাবে আটকে দিয়েছে ওয়াশিংটন ডিসির একটি ফেডারেল আদালত। এই ঘটনাকে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দীর্ঘদিনের স্বাধীনতার জন্য এক বড় পরীক্ষা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
ইতিহাসে আগে কখনো কোনো প্রেসিডেন্ট ফেড গভর্নরকে সরাননি। তাই এ ঘটনাকে ঘিরে শুরু হয়েছে নজিরবিহীন আইনি লড়াই। আদালতের অন্তর্বর্তী আদেশে বলা হয়েছে, ফেড গভর্নরকে নিয়ে আনা অভিযোগ তাঁর বর্তমান দায়িত্ব পালনের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত নয়। অভিযোগগুলো তাঁর নিয়োগ অনুমোদনের আগের সময়ের, তাই এগুলো অপসারণের যথেষ্ট কারণ হতে পারে না।
গভর্নর শুরু থেকেই মর্টগেজ জালিয়াতির অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন। তাঁর পক্ষ থেকে আদালতে জানানো হয়েছে, এসব অভিযোগ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে তোলা হয়েছে, আর্থিক নীতির অবস্থানের কারণে তাঁকে সরানোর চেষ্টা চলছে। আদালতও পর্যাপ্ত প্রমাণের অভাবে অপসারণ প্রক্রিয়া স্থগিত রাখার নির্দেশ দেয়।
ঘটনার সূত্রপাত গত আগস্টে, যখন প্রেসিডেন্ট তাঁকে বরখাস্তের উদ্যোগ নেন। তবে ফেডারেল রিজার্ভ জানায়, তিনি এখনো দায়িত্বে বহাল আছেন। আদালতের রায়ের পর এই প্রক্রিয়াটি কার্যত থেমে গেছে যতদিন মামলা চলমান থাকবে।
এদিকে, মার্কিন বিচার বিভাগ অভিযোগের তদন্ত শুরু করেছে এবং সংশ্লিষ্ট অঙ্গরাজ্যে গ্র্যান্ড জুরির সমনও জারি হয়েছে বলে জানা গেছে। মামলাটি শেষ পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত গড়াতে পারে বলেও ধারণা করা হচ্ছে। এর ফলাফল ফেডের নীতি নির্ধারণে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের সীমা ও স্বাধীনতার ওপর গভীর প্রভাব ফেলতে পারে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রেসিডেন্ট ইতিমধ্যেই সুদের হার দ্রুত কমানোর দাবি জানিয়েছেন এবং ফেডের বর্তমান নীতি পরিচালনার সমালোচনা করে আসছেন। আগামী সেপ্টেম্বরে ফেডের বৈঠকে সুদের হার কমতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ফেডের আইন অনুযায়ী গভর্নরকে শুধুমাত্র কার্যকালীন অসদাচরণের কারণে অপসারণ করা যেতে পারে। তবে এ বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়া নির্ধারিত নেই। ইতিহাসে এখনো কোনো প্রেসিডেন্ট এই ক্ষমতা ব্যবহার করেননি।
ফেড গভর্নরের আইনজীবী মন্তব্য করেছেন, আদালতের রায় ফেডারেল রিজার্ভের স্বাধীনতাকে অকারণ রাজনৈতিক চাপ থেকে রক্ষার গুরুত্ব নতুন করে প্রমাণ করেছে। অন্যদিকে প্রশাসনের দাবি, প্রেসিডেন্টের রয়েছে ব্যাপক এখতিয়ার এবং এই বিষয়ে আদালতের পর্যালোচনা করার ক্ষমতা নেই।
এখন পুরো দেশ তাকিয়ে আছে মামলার পরবর্তী ধাপের দিকে, যা যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক নীতির ভবিষ্যতের জন্য বড় একটি মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে।