Monday, October 6, 2025
spot_img
Homeএডুকেশনমার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্টকে ঘিরে তীব্র রাজনৈতিক ঝড়

মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্টকে ঘিরে তীব্র রাজনৈতিক ঝড়

২০২০ সালে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের একটি শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট নানা বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন। ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার আন্দোলনের সময় তিনি পদে আসীন হন। সে সময় ক্যাম্পাসে দাসপ্রথার সঙ্গে যুক্ত ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্বের নামে থাকা মূর্তি অপসারণের দাবিতে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেছিল। যদিও পাঁচ বছর পরও সেই মূর্তি অক্ষত রয়েছে, তবে আজ নতুন এক বিতর্কে প্রেসিডেন্টকে ঘিরে উত্তাল রাজনীতি।

সাম্প্রতিক সময়ে তাকে অভিযোগের মুখে পড়তে হয়েছে যে তিনি নাকি সাদা অধ্যাপকদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করেছেন এবং নিয়োগ ও পদোন্নতিতে নাগরিক অধিকার আইনের লঙ্ঘন করেছেন। বিষয়টি ঘিরে কেন্দ্রীয় প্রশাসন সরাসরি তাকে ব্যক্তিগতভাবে ক্ষমা চাইতে বলেছে। তবে তিনি দৃঢ়ভাবে সেই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছেন। তার ভাষায়, “এটি আমার নিজের সুনাম ও বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা রক্ষার লড়াই।”

এর ফলে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের কিছু বিশ্ববিদ্যালয় প্রধানদের মতো প্রশাসনের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে অবস্থান নেওয়া এক বিরল ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়েছেন। তবে তাকে যেভাবে ব্যক্তিগতভাবে টার্গেট করা হচ্ছে, তা শিক্ষা মহলের কাছে অভূতপূর্ব ও উদ্বেগজনক। অনেকেই মনে করছেন, এক কৃষ্ণাঙ্গ নেতাকে আলাদা করে এভাবে চিহ্নিত করা ন্যায্য নয়।

বিশ্ববিদ্যালয়টি বরাবরই বৈচিত্র্যের জন্য পরিচিত। প্রায় ৯০ শতাংশ আবেদনকারীকে ভর্তি দেওয়া হয়, যার বড় অংশই মধ্যবিত্ত শ্রেণির শিক্ষার্থী। ফলে এর সামাজিক কাঠামো অন্যান্য অভিজাত প্রতিষ্ঠানের তুলনায় ভিন্ন। প্রেসিডেন্ট পদে আসার পর তিনি শিক্ষকদের বৈচিত্র্য বাড়ানোর জন্য উদ্যোগ নিয়েছিলেন। এ কারণেই বর্তমানে প্রশাসনের অভিযোগগুলো সরাসরি তার বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হচ্ছে।

প্রেসিডেন্টের শৈশবও ছিল সংগ্রামমুখর। হারলেমে জন্ম নেওয়া এই শিক্ষাবিদ কৈশোরে মাদক ব্যবসার মতো দৃশ্যের সাক্ষী হয়েছেন। তবুও দৃঢ় মনোবল নিয়ে তিনি উচ্চশিক্ষা সম্পন্ন করেন এবং প্রকৌশল বিজ্ঞানে তিনটি ডিগ্রি অর্জন করেন। পরবর্তীতে ক্যালিফোর্নিয়ায় প্রকৌশল অনুষদের ডিন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বৈচিত্র্য রক্ষায় তার কাজই তাকে বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রেসিডেন্ট হওয়ার সুযোগ এনে দেয়।

কিন্তু এখন অভিযোগ উঠেছে, তার গৃহীত নীতিগুলো নাকি “অবৈধ বৈচিত্র্য নীতি।” যদিও সমালোচনার মাঝেও অনেকে তার পাশে রয়েছেন। অনেক শিক্ষক বলছেন, অভিযোগগুলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত এক দশকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকমণ্ডলীর জাতিগত গঠন প্রায় অপরিবর্তিত রয়েছে।

আইনি সহায়তার জন্য তিনি ইতোমধ্যে একজন অভিজ্ঞ আইনজীবী নিয়োগ করেছেন। তার দাবি, তাকে অতীতের নিয়মে অভিযুক্ত করা হচ্ছে, যদিও তখন সেই নিয়ম কার্যকর ছিল না। তার ভাষায়, “এটি যেন নতুন গতিসীমা ঠিক করে চার বছর আগের স্পিডিং-এর জন্য মামলা দেওয়া।”

প্রেসিডেন্টের ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চিত। ডানপন্থী বোর্ড সদস্যদের কেউ কেউ তাকে অপসারণ করতে চান বলে গুঞ্জন রয়েছে। তবে অনেক শিক্ষক তার নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্রগতির দিকগুলো তুলে ধরছেন—যেমন ভর্তি সংখ্যা বৃদ্ধি, আর্থিক উন্নতি এবং র‌্যাঙ্কিং-এ অগ্রগতি।

সবশেষে প্রেসিডেন্ট নিজেই বাইবেলের উদ্ধৃতি টেনে বলেছেন, “আমার বিরুদ্ধে কোনো অস্ত্র গড়া হলেও তা সফল হবে না।” তিনি মনে করেন, এই লড়াই কেবল ব্যক্তিগত নয়, বরং বৈচিত্র্য ও ন্যায়বিচারের প্রশ্নে এক বৃহত্তর প্রতিরোধের প্রতীক।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments