ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে। আজ সকাল আটটা থেকে শুরু হয়ে বিকেল চারটায় শেষ হয় এ ভোটগ্রহণ। তবে চারটার পর আর কাউকে কেন্দ্রে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি, কেবল ভেতরে অবস্থানরত শিক্ষার্থীরা ভোট দেওয়ার সুযোগ পান।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য জানিয়েছেন, নির্বাচনে স্বচ্ছতার কোনো ঘাটতি নেই। তিনি দুপুরে কয়েকটি কেন্দ্র পরিদর্শন করে জানান, ইতোমধ্যে ৭০ শতাংশের বেশি ভোট পড়েছে। তিনি আরও বলেন, কার্জন হলে ভুলক্রমে একটি ছোট ঘটনা ঘটেছিল, যেখানে এক ভোটারকে দুটি ব্যালট দেওয়া হয়। বিষয়টি দ্রুত সমাধান করা হয়েছে এবং দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এ ঘটনা নিয়ে তদন্তের আশ্বাসও দেন উপাচার্য।
শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হলেও প্রার্থীদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন অভিযোগ উঠে এসেছে। কেউ কেউ বলছেন, তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগে বাধা দেওয়া হয়েছে, আবার কেউ অভিযোগ করেছেন পোলিং এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। প্রার্থীদের কেউ কেউ নির্বাচনে ব্যত্যয়, পক্ষপাতমূলক আচরণ এবং প্রোপাগান্ডার অভিযোগ তুলেছেন।
অন্যদিকে, কিছু প্রার্থী আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন যে শিক্ষার্থীরা যোগ্য নেতৃত্ব বেছে নেবেন। কেউ কেউ আবার মুক্ত ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন। টিএসসি কেন্দ্র পরিদর্শনকালে কয়েকজন প্রার্থী বলেন, দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দিতে আসা শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি নির্বাচনের প্রতি আস্থা প্রমাণ করছে।
তবে দুপুরে টিএসসি ভোটকেন্দ্রে আগে থেকেই চিহ্ন দেওয়া একটি ব্যালট পেপার পাওয়ার অভিযোগ উঠে। পরবর্তীতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বিষয়টি খতিয়ে দেখে দাবি করেন, সব ব্যালট পরীক্ষা করা হলেও অন্য কোনো অনিয়ম পাওয়া যায়নি।
এদিকে দায়িত্ব পালনের সময় একটি দুঃখজনক ঘটনা ঘটে। সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে এক সাংবাদিক অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এই মৃত্যুতে সাংবাদিক মহলে শোক নেমে আসে।
নির্বাচন ঘিরে নিরাপত্তার কড়াকড়ি ছিল চোখে পড়ার মতো। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশপথে চেকপোস্ট বসানো হয়, পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্যরাও দায়িত্ব পালন করেন। টিএসসি এলাকায় পুলিশের একটি নিয়ন্ত্রণকক্ষও স্থাপন করা হয়।
উল্লেখ্য, ডাকসু নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা ৩৯ হাজার ৮৭৪ জন। এর মধ্যে ছাত্রী ১৮ হাজার ৯৫৯ এবং ছাত্র ২০ হাজার ৯১৫ জন। ডাকসুর ২৮টি পদের বিপরীতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৪৭১ জন প্রার্থী, যাদের মধ্যে ৬২ জন ছাত্রী। পাশাপাশি ১৮টি হলে মোট ২৩৪টি পদে লড়ছেন ১ হাজার ৩৫ জন প্রার্থী।
এখন শিক্ষার্থীদের নজর ফলাফলের দিকে, যা নির্ধারণ করবে আগামী দিনের নেতৃত্ব।