Monday, October 6, 2025
spot_img
Homeখেলার জগৎফাস্ট বোলিংয়ে আফগানিস্তানের নতুন প্রতীক: ফজলহক ফারুকি

ফাস্ট বোলিংয়ে আফগানিস্তানের নতুন প্রতীক: ফজলহক ফারুকি

আফগানিস্তান মানেই স্পিনের দেশ—মোহাম্মদ নবী, রশিদ খান, আল্লাহ গজনফর, মুজিব উর রেহমানের মতো বিশ্বমানের স্পিনারদের দেশ। তবে সেই দেশে এক যুবক কিশোর বয়সে স্বপ্ন দেখেছিলেন পেস বোলার হওয়ার। আফগানিস্তানের প্রথা অনুযায়ী ধারণা ছিল, আন্তর্জাতিক বা বিদেশি লিগে সুযোগ আসে মূলত স্পিনারদের। সেই কারণে বন্ধুদের কাছে কিশোর ফজলহক ফারুকিকে অনেকবার মজা করতে শুনতে হয়েছে।

ফারুকি নিজে একটি আন্তর্জাতিক লিগে অংশগ্রহণের সময় জানিয়েছিলেন, “সবাই মজা করত। ধারণাটাই এমন ছিল যে, আফগান স্পিনাররাই বিদেশি লিগে খেলবে, ব্যাটসম্যান বা ফাস্ট বোলার নয়।” কিন্তু ফারুকি সেই কুসংস্কার ভেঙে দেখিয়েছেন। আজ তিনি আইপিএল, বিগ ব্যাশ, সিপিএল, পিএসএল ও দ্য হানড্রেডের মতো বড় লিগে আফগানিস্তানের পরিচয় বহন করছেন।

ফজলহক ফারুকি হয়তো দেখতে প্রচণ্ড উচ্চতার বা অতিরিক্ত গতি সম্পন্ন বোলার মনে না হলেও, তার বল দুই দিকেই সুইং করাতে পারার দক্ষতা ব্যাটসম্যানদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তিনি ৮ ম্যাচে ১৭ উইকেট নিয়ে যৌথভাবে সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রাহক ছিলেন, যেখানে তার ওভারপ্রতি রান খরচ মাত্র ৬.৩১। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ৪৭ ম্যাচে ৫৯ উইকেট নিয়ে তার ইকোনমি রেট ৬.৭৯। এর মধ্যে ৩৪ উইকেট পাওয়ার প্লেতে এসেছে, যা স্পিনারদের জন্য সুবিধাজনক পরিস্থিতি তৈরি করে।

নিজের সীমাবদ্ধতা ভালোভাবে জানেন ফারুকি। তিনি বলেন, “আমি লম্বা-চওড়া নই, খুব দ্রুতগতির বোলারও নই। তাই অন্যদের থেকে আলাদা কিছু শিখতে চেয়েছিলাম। সুইং শেখার চেষ্টা করেছি এবং এখন এটি আমার জন্য সহজ।”

ফারুকি আফগানিস্তানের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় বাগলান শহরে বড় হয়েছেন। বিদ্যুৎ ছিল বিলাসিতা, টিভি দেখা ছিল স্বপ্নের মতো। সানরাইজার্স হায়দরাবাদের সময় তিনি বলেছেন, “২০১৭ সাল পর্যন্ত সহজে টিভি দেখার সুযোগ পাইনি। শুধুই স্বপ্ন দেখতাম কখন নিশ্চিন্তে ক্রিকেট ম্যাচ দেখব।”

আফগানিস্তান ক্রিকেট যখন ধীরে ধীরে আন্তর্জাতিক মঞ্চে নিজের অবস্থান করছে, তখন নতুন প্রজন্মের কাছে অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে উঠেছেন স্পিনাররা। তবে ফারুকির শৈশব ছিল ভিন্ন—কোনো শরণার্থী শিবির বা নাটকীয় পালানোর গল্প নেই। তার চ্যালেঞ্জ ছিল গ্রামে ক্রিকেটের সরঞ্জামের অভাব। তিনি বলেন, “আমাদের গ্রামে প্রথমে ব্যাট-বল ছিল না। টেনিস বল দিয়েই খেলতাম। পরে বোর্ড একাডেমি খোলার পর ফ্রি ব্যাট-বল পেয়েছি। সেখান থেকেই আমার যাত্রা শুরু।”

আজ ফারুকি আফগান দলে স্পিনারদের মতোই অপরিহার্য। তবে তিনি দেশের প্রথম ফাস্ট বোলিং আইকন হিসেবেও পরিচিত, যিনি প্রজন্মের পর প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করতে পারেন। তিনি চান আফগান তরুণেরা শুধু ভালো স্পিনার নয়, ভালো ফাস্ট বোলার হওয়ায় অনুপ্রাণিত হোক।

ফারুকির বড় মঞ্চের সুযোগ এসেছে এশিয়া কাপের মাধ্যমে। আজ হংকংয়ের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে আফগানিস্তান তাদের এশিয়া কাপ যাত্রা শুরু করবে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments