চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সাম্প্রতিক রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর থেকে ক্যাম্পাসজুড়ে অস্থিরতা বিরাজ করছে। শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয় এখনো উত্তপ্ত পরিবেশ কাটিয়ে উঠতে পারেনি। এমন পরিস্থিতিতে বামপন্থি বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের নেতাকর্মীরা আন্দোলন জোরদার করতে নতুন একটি প্ল্যাটফর্ম গড়ে তুলেছেন—‘অধিকার সচেতন শিক্ষার্থী’।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, সংঘর্ষ-পরবর্তী সময়ে সরাসরি দলীয় ব্যানারে না এসে বামপন্থি নেতারা এ প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করছেন। তাদের দাবি, এতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সম্পৃক্ত করা সহজ হবে। তবে অনেকেই মনে করছেন, এটি আসলে বামপন্থিদের বিকল্প ব্যানার মাত্র।
গত বৃহস্পতিবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারে ‘অধিকার সচেতন শিক্ষার্থী’র ব্যানারে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ ও মশাল মিছিল করে আন্দোলনকারীরা। এ সময় তারা প্রক্টর অফিসের সামনে অবস্থান নিয়ে দেওয়ালে লাল রং নিক্ষেপ করেন। পরদিন শুক্রবার বিকেলে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে প্রশাসনের ব্যর্থতার অভিযোগ তোলেন এই প্ল্যাটফর্মের ব্যানারে থাকা নেতারা। শনিবারও তাদের কর্মসূচি অব্যাহত থাকে—প্রশাসনিক ভবনের নাম পরিবর্তন করে স্লোগান লেখা, দেওয়াল লিখন ও গ্রাফিতি আঁকা হয়।
এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টরকে হেনস্তার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ভবনের সামনে ক্ষোভ প্রকাশ করে সমাবেশও করেন।
এই প্ল্যাটফর্ম নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। কেউ কেউ বলছেন, বামপন্থিরা দায় এড়াতে এ কৌশল নিয়েছেন। আবার অনেকের মতে, প্রশাসনের দীর্ঘদিনের ব্যর্থতার কারণে শিক্ষার্থীদের ঐক্যবদ্ধ করার প্রয়াস হিসেবেই এই পদক্ষেপ।
‘অধিকার সচেতন শিক্ষার্থী’র আন্দোলনের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট নেতারা প্রকাশ্যে খুব বেশি কিছু বলতে চাননি। তবে আন্দোলনে যুক্ত থাকা কয়েকজন জানিয়েছেন, মূলত নির্দলীয় ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতেই এ উদ্যোগ। আন্দোলন সফল হলে এই প্ল্যাটফর্ম টিকে থাকবে কি না—তা পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
ক্যাম্পাসে চলমান এই পরিস্থিতি প্রশাসনের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ প্রশমিত করতে না পারলে অচিরেই আবারও বড় ধরনের উত্তেজনা তৈরি হতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।