গাজায় চলমান ভয়াবহ পরিস্থিতি থামাতে নতুন প্রস্তাব নিয়ে এগিয়ে এসেছে যুক্তরাষ্ট্র। ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসকে দেওয়া হয়েছে ‘শেষ সতর্কবার্তা’। তবে প্রস্তাবটি গৃহীত না হলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে বলে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। এ পর্যন্ত ইসরায়েলি হামলায় ৬৪ হাজার ৫০০-এর বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং অঞ্চলটিতে আনুষ্ঠানিকভাবে দুর্ভিক্ষ ঘোষণা করা হয়েছে।
মাসের পর মাস ধরে যুক্তরাষ্ট্র, কাতার ও মিসরের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতির আলোচনা চলছে। তবে ইসরায়েল বারবার আলোচনা প্রত্যাখ্যান করছে অথবা সাড়া দিচ্ছে না। সম্প্রতি হামাস ইসরায়েলের দেওয়া একটি প্রস্তাব মেনে নিয়েছিল, যেখানে গাজায় আটক ইসরায়েলি জিম্মিদের কিছু অংশ মুক্ত করার কথা ছিল। কিন্তু পরে ইসরায়েল এবং যুক্তরাষ্ট্র অবস্থান পাল্টে কঠোর শর্ত আরোপ করে—সব জিম্মিকে মুক্তি এবং হামাসের পূর্ণ আত্মসমর্পণ।
সর্বশেষ প্রস্তাবে বলা হয়েছে, শুরুতেই সব ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দিতে হবে। এর বিনিময়ে ইসরায়েল অজ্ঞাতসংখ্যক ফিলিস্তিনি বন্দী ছেড়ে দেবে। তবে যুদ্ধ থামবে না; শুধু আলোচনার পথ খোলা থাকবে। বিশ্লেষকদের মতে, এতে ইসরায়েলের হামলা চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ থেকেই যাবে।
হামাস জানিয়েছে, জনগণের ওপর আগ্রাসন থামাতে যে কোনো উদ্যোগকে তারা স্বাগত জানায়। তবে তাদের অবস্থান পরিষ্কার—জিম্মি মুক্তির বিনিময়ে অবশ্যই যুদ্ধ বন্ধের ঘোষণা দিতে হবে, সেনা প্রত্যাহার করতে হবে এবং গাজার জন্য একটি স্বাধীন প্রশাসনিক কমিটি গঠন করতে হবে।
অন্যদিকে ইসরায়েলি কর্মকর্তারা বলছেন, সব জিম্মি মুক্তি ও হামাসের অস্ত্র সমর্পণ ছাড়া যুদ্ধ থামানো সম্ভব নয়। বিশ্লেষকদের মতে, ইসরায়েল প্রকাশ্যে সমর্থন দেখালেও পরবর্তীতে অগ্রহণযোগ্য শর্ত যোগ করে চুক্তি ব্যর্থ করার কৌশল নিয়েছে আগেও, এবারও সেই সম্ভাবনা রয়েছে।
গাজার ওপর ইসরায়েলের নতুন সামরিক অভিযান শুরু হতে পারে বলে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে সুউচ্চ ভবন ধ্বংস করা হচ্ছে এবং গাজা সিটির বাসিন্দাদের সরতে বলা হয়েছে।
এই প্রস্তাব বাস্তবায়নযোগ্য কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, যুদ্ধ শেষ করার কোনো প্রকৃত আগ্রহ ইসরায়েলের নেই; বরং পরিস্থিতি দীর্ঘায়িত করাই তাদের লক্ষ্য। যুক্তরাষ্ট্রও শক্ত অবস্থান নিতে অনাগ্রহী। এর ফলে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা কম।
এদিকে গাজার বাস্তব চিত্র ভয়াবহ। সীমিত সরঞ্জামে চিকিৎসকেরা লড়াই করছেন, অনাহারে শিশু মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে এবং অবশিষ্ট অবকাঠামোও ধ্বংসের মুখে। এ অবস্থায় নতুন প্রস্তাব কতটা কার্যকর হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়ে গেছে।