ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হচ্ছে আজ মঙ্গলবার। গত ২৯ জুলাই ঘোষিত তফসিলের পর ১৩ দিনের নির্বাচনী প্রচারণায় বিভিন্ন মত ও পথের শিক্ষার্থীদের মধ্যে যে সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি ও উৎসবমুখর আবহ সৃষ্টি হয়েছিল, সেটি গণতান্ত্রিক উত্তরণের পথে থাকা বাংলাদেশের জন্য একটি ইতিবাচক দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। তবে একই সময়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের, বিশেষ করে নারী প্রার্থীদের, নিয়ে সাইবার বুলিং হওয়া উদ্বেগজনক বিষয় হিসেবে উঠে এসেছে।
চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানোত্তর জনআকাঙ্ক্ষার প্রেক্ষাপটে এবারের ডাকসু নির্বাচন বিশেষ তাৎপর্য বহন করছে। আবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রায় পাঁচ মাস আগে এটি অনুষ্ঠিত হওয়ায় সবার দৃষ্টি আজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে। শান্তিপূর্ণ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হলেও, এটিই প্রত্যাশিত। কারণ এই নির্বাচন অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের জন্যও পরীক্ষাক্ষেত্র হিসেবে বিবেচিত হবে।
স্বাধীনতার পর দীর্ঘ ৫৪ বছরে ডাকসুর মাত্র সাতটি নির্বাচন হয়েছে। সর্বশেষ ২০১৯ সালের নির্বাচনটি নানা বিতর্কের জন্ম দিয়েছিল। অথচ বাংলাদেশের প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ডাকসু ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। নব্বইয়ের গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে দেশে গণতন্ত্রের যাত্রা শুরু হলেও পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিজেদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠনকে ব্যবহার করেছে। ফলে দখলদারত্ব ও পেশিশক্তিনির্ভর রাজনীতির শিকার হতে হয়েছে সাধারণ শিক্ষার্থীদের। সেই নিপীড়নের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের বিদ্রোহই ছিল চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম বাঁকবদলকারী ঘটনা।
বর্তমান শিক্ষার্থীরা দখলদারত্ব, নিপীড়ন ও গেস্টরুম সংস্কৃতির অবসান চান। এবারের নির্বাচনে দলীয় ও স্বতন্ত্র মিলে ১০টি প্যানেল এবং আরও বেশ কয়েকজন স্বতন্ত্র প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। প্রার্থীদের ইশতেহারে গেস্টরুম ও গণরুম সংস্কৃতি বিলুপ্ত করার প্রতিশ্রুতি বিশেষভাবে উঠে এসেছে। শিক্ষার্থীরা আশা করছেন, নির্বাচিতরা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকে নিপীড়নমুক্ত করতে কার্যকর ভূমিকা রাখবেন।
ভোটগ্রহণের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান কর্মকর্তা জানিয়েছেন, নির্বাচনের পরিবেশ প্রত্যাশিতভাবেই শান্তিপূর্ণ রয়েছে। তবে সাইবার বুলিংয়ের অভিযোগ প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া ভোটের সময়সীমা ও বুথসংখ্যা নিয়েও শিক্ষার্থীদের মধ্যে উদ্বেগ রয়েছে। এবারের নির্বাচনে হলে কোনো কেন্দ্র রাখা হয়নি; আটটি কেন্দ্রে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ চলবে। একজন শিক্ষার্থীকে ৪১টি ভোট দিতে হবে বলে পর্যাপ্ত সময়ের অভাব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক সময়সীমা বিকেল ৫টা পর্যন্ত বাড়ানোর দাবি জানালেও কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়নি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় অর্ধেক শিক্ষার্থী নারী এবং উল্লেখযোগ্য অংশ অনাবাসিক। তাদের নির্বিঘ্ন ভোটদান নিশ্চিত করাই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। ইতিমধ্যেই ভোটারদের নিরুৎসাহিত করতে গুজব ও অপতথ্য প্রচারের অভিযোগ পাওয়া গেছে। সবকিছু সত্ত্বেও প্রত্যাশা রইল, শিক্ষার্থীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিয়ে নিজেদের প্রতিনিধি নির্বাচন করবেন।
এবারের ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন হোক দেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।