Monday, October 6, 2025
spot_img
Homeবিশেষ প্রতিবেদনপরিচালকদের যাতায়াত খরচেই ব্যাংকের কোটি টাকা ব্যয়

পরিচালকদের যাতায়াত খরচেই ব্যাংকের কোটি টাকা ব্যয়

এক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে পরিচালকদের যাতায়াত খাতে কোটি টাকার বেশি ব্যয়ের তথ্য। ২০২৪ সালে শুধু এই খাতেই খরচ হয়েছে প্রায় এক কোটি টাকা। এর আগের বছরও যাতায়াত বাবদ ব্যয় কোটি টাকার ওপরে ছিল।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪ সালে পরিচালকদের পেছনে মোট ব্যয় হয়েছে এক কোটি ২৮ লাখ ৪৯ হাজার ৪৮৬ টাকা। এর মধ্যে ফি বাবদ দেওয়া হয়েছে ৩৯ লাখ ২৭ হাজার ২০০ টাকা, মিটিং খাতে খরচ হয়েছে পাঁচ লাখ ২৪ হাজার ৫২৯ টাকা এবং যাতায়াত বাবদ দেখানো হয়েছে ৮৩ লাখ ৯৭ হাজার ৭৫৭ টাকা। আগের বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালে পরিচালকদের পেছনে খরচ হয়েছিল এক কোটি ২৬ লাখ ৭৮ হাজার ৫২৭ টাকা, যার মধ্যে এক কোটি ৪ লাখ ১৩ হাজার ৭৬৮ টাকা ব্যয় হয় যাতায়াতের জন্য।

ব্যাংকের দাবি, পরিচালকরা ঢাকার বাইরে কিংবা বিদেশে অবস্থান করায় যাতায়াত খাতে বেশি ব্যয় হয়েছে। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী, পরিচালকেরা কেবল মিটিং ফি নিতে পারেন, যাতায়াত বাবদ কোনো খরচ দেখানোর সুযোগ নেই। এ ধরনের ব্যয়কে অনিয়ম হিসেবেই গণ্য করা হয়।

প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার বেতন-ভাতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। ২০২৪ সালে সিইও বেতন-ভাতা বাবদ নিয়েছেন এক কোটি ৬১ লাখ ৩৯ হাজার ৬৮১ টাকা, যা মাসে গড়ে সাড়ে ১৩ লাখ টাকার বেশি। এর আগের বছরও এই খাতের ব্যয় ছিল প্রায় সমপরিমাণ। এমনকি আর্থিক সমস্যার মধ্যেও সিইওর মূল বেতন বেড়ে দাঁড়ায় মাসে ৭ লাখ ৫৯ হাজার ৬৯৮ টাকা।

শুধু সিইও নন, অন্যান্য কর্মীদের বেতন-ভাতার খরচও বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। ২০২৪ সালে এ খাতে ব্যয় হয়েছে ২০৫ কোটি টাকার বেশি, যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় ২৫ কোটি টাকা বেশি।

আর্থিক প্রতিবেদনে আরও দেখা যায়, ২০২৪ সালে প্রতিষ্ঠানটির বিনিয়োগ আয় হয়েছে ৮৪৩ কোটি টাকা, অথচ আমানতকারীদের মুনাফা বাবদ দিতে হয়েছে ১,৩৫২ কোটি টাকা। ফলে বিনিয়োগজনিত ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫০৯ কোটি টাকার বেশি।

খেলাপি ঋণও আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। ২০২৩ সালে যেখানে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল প্রায় ৩ হাজার ৩০০ কোটি টাকা, সেখানে ২০২৪ সালে তা দাঁড়ায় ১৩ হাজার ৮৮ কোটি টাকায়। খেলাপির হার এক বছরে ২৫ শতাংশ থেকে লাফিয়ে ৯০ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে।

প্রতিষ্ঠানটির দায় সম্পদের চেয়ে বেড়ে যাওয়ায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে। ২০২৪ সালের শেষে মোট সম্পদ দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৯ হাজার ২২০ কোটি টাকা, যেখানে দায় হয়েছে ২১ হাজার ৩৬৯ কোটি টাকা। অথচ কয়েক বছর আগেও সম্পদ দায়ের চেয়ে বেশি ছিল।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতে, পরিচালকদের যাতায়াত খাতে অর্থ ব্যয় করার নিয়ম নেই। কেউ এটি করলে তা স্পষ্ট অনিয়ম। এরকম অনিয়মের পাশাপাশি ক্রমবর্ধমান খেলাপি ঋণই আজ এসব আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মার্জারের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments