যুক্তরাষ্ট্রের একটি ফেডারেল আদালত হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য স্থগিত হওয়া প্রায় ২.২ বিলিয়ন ডলারের ফেডারেল অনুদান পুনরায় চালুর নির্দেশ দিয়েছে। আদালতের রায়ে বলা হয়েছে, চলতি বছরের ১৪ এপ্রিলের পর থেকে হার্ভার্ডের প্রতি আরোপিত সব অনুদান স্থগিতাদেশ এবং বাতিলকরণ চিঠি কার্যকর হবে না।
রায়ে স্বীকার করা হয় যে, সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ইহুদিবিদ্বেষের (এন্টিসেমিটিজম) প্রভাব ছিল এবং তা মোকাবিলায় প্রতিষ্ঠানটি আরও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারত। তবে আদালতের মতে, অনুদান স্থগিতকরণের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদ্যমান এন্টিসেমিটিজমের কার্যত কোনো যোগসূত্র নেই। বরং প্রশাসন উদ্দেশ্যমূলকভাবে দেশের শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে টার্গেট করেছে, যা প্রথম সংশোধনী, ‘অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ প্রসিডিউর অ্যাক্ট’ (APA) এবং টাইটেল VI-এর পরিপন্থী।
হার্ভার্ড কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এই রায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবিধানিক অধিকার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং শিক্ষা ও গবেষণার স্বাধীনতা রক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। তারা ভবিষ্যতের আইনি অগ্রগতিও নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করবে।
প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় জানানো হয়, তারা এই রায়কে “গুরুতর ভুল” মনে করছে এবং আপিল করবে। হোয়াইট হাউসের এক বিবৃতিতে দাবি করা হয়, হার্ভার্ড করদাতাদের অর্থ পাওয়ার সাংবিধানিক অধিকার রাখে না এবং ভবিষ্যতের অনুদানের জন্য অযোগ্য থাকবে।
উল্লেখ্য, গত এপ্রিল মাসে প্রশাসন হার্ভার্ডের জন্য বরাদ্দকৃত দুই বিলিয়ন ডলারের বেশি অনুদান স্থগিত করে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়কে ১০টি শর্ত মানার নির্দেশ দেওয়া হয়, যার মধ্যে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ভর্তির সীমাবদ্ধতা আরোপ, বহিরাগত সংস্থার মাধ্যমে একাডেমিক নিরীক্ষা, এবং বৈচিত্র্য, সমতা ও অন্তর্ভুক্তি বিষয়ক সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধের দাবি অন্তর্ভুক্ত ছিল। আদালতের মতে, এই শর্তগুলোর অধিকাংশই আদর্শিক ও শিক্ষাদর্শন সংক্রান্ত, এবং ইহুদিবিদ্বেষের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে সম্পর্কিত নয়।
আদালতের রায়ে আরও বলা হয়েছে, অনুদান বাতিলের সিদ্ধান্তে কোনো নির্দিষ্ট ঘটনার উল্লেখ করা হয়নি বা বিশ্ববিদ্যালয় কীভাবে টাইটেল VI ভঙ্গ করেছে তার সুনির্দিষ্ট প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়নি। বরং এসব পদক্ষেপ বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান গবেষণা কার্যক্রমে গুরুতর প্রভাব ফেলেছে, যা জাতীয় ও বৈশ্বিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
ফলে আদালত সব ধরনের অনুদান স্থগিতাদেশ ও বাতিলকরণ অবৈধ ঘোষণা করে তা প্রত্যাহারের নির্দেশ দিয়েছে এবং প্রশাসনকে ভবিষ্যতে এ ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ থেকে বিরত থাকতে বলেছে।
হার্ভার্ডের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা মুক্তচিন্তার পরিবেশ বজায় রেখে শিক্ষা ও গবেষণার উৎকর্ষতা ধরে রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকবে।