Monday, October 6, 2025
spot_img
Homeখেলার জগৎস্কালোনির সাত বছর: এক কোচ যিনি বদলে দিয়েছেন আর্জেন্টিনার ফুটবল ভাগ্য

স্কালোনির সাত বছর: এক কোচ যিনি বদলে দিয়েছেন আর্জেন্টিনার ফুটবল ভাগ্য

২০১৮ সালের রাশিয়া বিশ্বকাপের পর আর্জেন্টিনার ফুটবল দল গভীর হতাশার মধ্য দিয়ে যায়। শেষ ষোলো পর্ব থেকে ছিটকে যাওয়ার ব্যর্থতার দায়ে তখনকার প্রধান কোচ পদ থেকে সরে যান। আগের তিন বড় টুর্নামেন্টে রানার্সআপ হলেও বিশ্বকাপে দল প্রত্যাশা অনুযায়ী পারফরম্যান্স দেখাতে ব্যর্থ হয়। এ অবস্থা থেকে আর্জেন্টিনার ফুটবল প্রেমিকরা হতাশ হয়ে পড়েন। আন্তর্জাতিক ফুটবলের জন্য বিরতি নেওয়া হয় দেশের প্রধান তারকারও।

তবে থেমে থাকার কোনো বিকল্প ছিল না। দলের সম্ভাব্য খেলোয়াড়দের নিয়েই নতুন করে শুরু করতে হত। তখন প্রশ্ন ছিল—কীভাবে আবার দলকে শক্তিশালী করা সম্ভব এবং কে হবেন দলের নতুন প্রধান কোচ।

২০১৮ সালের আগস্টে দেশটির ফুটবল ফেডারেশন একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেন। তৎকালীন অনূর্ধ্ব-২০ দলের প্রধান কোচকে জাতীয় দলের অন্তর্বর্তী কোচ হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। সেই সিদ্ধান্তই পরবর্তীতে আর্জেন্টিনার ফুটবল ইতিহাসে ‘যুগান্তকারী’ হিসেবে বিবেচিত হয়। নতুন দায়িত্ব গ্রহণের কয়েকদিনের মধ্যে তিনি অনূর্ধ্ব-২০ দলকে শিরোপা জিতিয়ে ফেডারেশনের বিশ্বাস সঠিক প্রমাণ করেন।

প্রথম ম্যাচে, আগস্টের শুরুতে, আর্জেন্টিনা ৩–০ গোলে গুয়াতেমালার বিরুদ্ধে জয় পায়। তারপর থেকে এই কোচ দলের দায়িত্বে থেকে ধাপে ধাপে দলকে গড়ে তোলেন। একের পর এক জয় ও অসামান্য ফলাফলের মাধ্যমে তিনি আর্জেন্টিনাকে ২৮ বছরের শিরোপাখরা কাটিয়ে ৩৬ বছর পর বিশ্বকাপ জয় এনে দেন। তাঁর অধীনে দল ফিফা র‍্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে পৌঁছে।

সাত বছরের এই সময়ে দলের অধীনে ৮৬টি ম্যাচে ৬৪টি জয়, ১৪টি ড্র এবং মাত্র ৮টি হার হয়েছে। একটি সময়ে টানা ৩৫ ম্যাচ অপরাজিত থাকার রেকর্ডও তিনি গড়েছেন। প্রথম ম্যাচ ও সর্বশেষ ম্যাচ—দুইটিতেই আর্জেন্টিনা ৩–০ ব্যবধানে জয় লাভ করেছে। সাম্প্রতিকতম ম্যাচে দেশটির মাটিতে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে ভেনেজুয়েলার বিপক্ষে জয় উদযাপন করেন অধিনায়ক।

বিশ্বকাপের ব্যর্থতার পর জাতীয় দলের অন্যতম প্রধান তারকা অনিশ্চিত থাকলেও, কোচের সহায়ক ও বোঝাপড়া মেসিকে আবারও জাতীয় দলে ফিরিয়ে আনেন। এরপর তারা একত্রে একটি ভয়বিহীন ও শক্তিশালী দল গড়ে তোলেন, যারা বিশ্বের যেকোনো প্রতিপক্ষের সঙ্গে যেকোনো ভেন্যুতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে সক্ষম। কোচ এবং অধিনায়কের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ফুটবল অঙ্গনে নতুন উদাহরণ স্থাপন করেছে।

২০১৯ সালের আগস্টে স্থায়ীভাবে প্রধান কোচ হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত এই কোচ পরবর্তী সময়ে দুইবার চুক্তি নবায়ন করেছেন এবং ২০২৬ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করবেন। তিনি সবসময় খেলোয়াড়দের অবদানকে প্রাধান্য দিয়েছেন এবং নিজেকে অগোচরের নায়ক হিসেবে রাখতেই পছন্দ করেন।

বর্তমানে আর্জেন্টিনা দক্ষিণ আমেরিকান বাছাইপর্বে শীর্ষে অবস্থান করছে। মূল চ্যালেঞ্জ এখন বিশ্বকাপ ট্রফি ধরে রাখা, যা জয়ের চেয়ে কঠিন বলে বিবেচিত। ২০২৬ বিশ্বকাপে অধিনায়ক অংশ নিলে হয়তো এটি তাঁর জাতীয় দলের শেষ বিশ্বকাপ হয়ে থাকবে। তবে কোচের সাফল্য ও নীতি ইতোমধ্যেই আর্জেন্টিনার ফুটবল ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছে।

প্রথম ম্যাচে স্কালোনির অধীনে দলের একাদশ ছিল হেরোনিমো রুয়ি, রেনজো সারাভিয়া, হেরমান পেজ্জেলা, রামিরো ফুনেস মোরি, নিকোলাস তালিয়াফিকো, জিওভানি লো সেলসো, লিয়ান্দ্রো পারেদেস, এজেকিয়েল পালাসিওস, ক্রিস্তিয়ান পাভন, জিওভানি সিমিওনে এবং গঞ্জালো মার্তিনেজ। ম্যাচে বদলি হিসেবে ছিলেন আলান ফ্রাঙ্কো, ওয়ালতার কানেমান, সান্তিয়াগো আসকাবার, ফ্রাঙ্কো ভাজকেজ, মাতিয়াস ভার্গাস এবং ফ্রাঙ্কো চেরভি।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments