Monday, October 6, 2025
spot_img
Homeঅন্যান্যস্বর্ণকণ্ঠ খন্দকার ফারুক আহমেদ

স্বর্ণকণ্ঠ খন্দকার ফারুক আহমেদ

যুগের পর যুগেও এমন শিল্পী খুব একটা জন্মায় না। নায়ক রাজ রাজ্জাকের লিপে ছবির গানই ছিল স্বর্ণকণ্ঠ শিল্পী খন্দকার ফারুক আহমেদের গাওয়া। ‘আমি নিজের মনে নিজেই যেন গোপনে ধরা পড়েছি…’, ‘আমার এ গান তুমি শুনবে জানি শুনবে…’—এমন সুধা মেশানো বাংলা রোম্যান্টিক গান আজকাল কোথাও আর সৃষ্টি হয় না। বাংলাদেশের সঙ্গীত জগতে তারকা খ্যাতি পেয়েছিলেন কণ্ঠশিল্পী খন্দকার ফারুক আহমেদ। অসংখ্য চলচ্চিত্রে তিনি গান গেয়ে অনন্য খ্যাতির দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তাঁকে স্মরণ করার অনেক বিষয় রয়েছে।

১৯৬১ সালের ৩ জানুয়ারিতে শাহবাগের রেডিওতে অপার সম্ভাবনা নিয়ে সঙ্গীত জীবন শুরু করেছিলেন খন্দকার ফারুক আহমেদ। রেডিওতে তাঁর প্রথম গানটি ছিল ‘জোয়ারের গান সাগর শোনে’। আনোয়ারউদ্দিন খাঁন, নজমুল হুদা ও সত্য সাহা তাঁকে চিনতে ভুল করেননি। ১৯৬১-৬৫ পর্যন্ত খন্দকার ফারুক আহমেদের গাওয়া অনেক মিষ্টি, রোম্যান্টিক রেডিও’র গান হারিয়ে গেছে। তা সংরক্ষণ করা হয়নি।

নায়ক রাজ রাজ্জাকের লিপে সুরকারদের প্রথম পছন্দ ছিলেন আধুনিক গানের স্বর্ণকণ্ঠ খন্দকার ফারুক আহমেদ। ‘নীল আকাশের নীচে আমি রাস্তা চলেছি একা’, ‘আমি নিজের মনে নিজেই যেন গোপনে ধরা পড়েছি’, ‘আমার এ গান তুমি শুনবে জানি শুনবে’, ‘না হয় একটু কিছু ওগো তুমি বলো’, ‘আর কত দূরে উড়ে যাবি ওরে আমার বলাকা মন,’ ‘কোথায় তোমায় যেন দেখেছি’, ‘রিক্ত হাতে যারে ফিরায়ে দিলে ওগো বন্ধু’, ‘আমার বউ কেন কথা কয় না’—এমন বহু চলচ্চিত্রের গান ছিল ইন্সট্যান্ট হিট। রেডিওতে তাঁর গাওয়া ‘বাসন্তী রঙ শাড়ি পরে’, ‘সেদিন তুমি কী যেন কী ভাবছিলে’, ‘প্রথম দেখার সেই দিন’, ‘কে যেন আড়াল হতে ডাকে আমারে’, ‘সোহাগী লো কী দেব বলো’সহ অনেক গান পুরো দেশ জুড়ে ধ্বনিত হয়েছিল।

আলোর মিছিল ছবিতে ‘দিন বদলের দিন এসেছে’ গানটির জন্য তিনি প্রথম গায়ক হিসেবে বাচসাস পুরষ্কার জিতে নেন। উক্ত গান এবং মালকা বানু ছবিতে ‘কে তুমি গো পুকুর ঘাটে সখী’ গান দুটোর জন্য খন্দকার ফারুক আহমেদকে ১৯৭৪ সালের সেরা গায়ক হিসেবে পুরষ্কৃত করা হয়। টিভির জন্মলগ্ন থেকেই তিনি যুক্ত ছিলেন। ১৯৬৯ সালে জহীর রায়হান সম্পাদিত দ্যা এক্সপ্রেস পত্রিকার জরীপে বছরের সেরা গায়ক মনোনীত হয়েছিলেন। ১৯৭২ সালে বোম্বেতে এক অনুষ্ঠানে খন্দকার ফারুক আহমেদের গান শুনে শচীন দেব বর্মণ তাঁকে বুকে জড়িয়ে ধরে আশীর্বাদ করেছিলেন।

বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত ও একুশে সঙ্গীতের প্রথম রেকর্ডে তাঁর কণ্ঠের সরব উপস্থিতি ছিল। ‘জাগো অনশন বন্দী ওঠরে যত’, ‘কারার ওই লৌহ কপাট’ গান দুটি তিনি বিভিন্ন মাধ্যমে বলিষ্ঠভাবেই পরিবেশন করতেন। ফিল্ম গানে সাবিনা ইয়াসমীনের সাথে তাঁর জুটি ছিল শ্রেষ্ঠ রোমান্টিক জুটি। ‘কাছে এসো যদি বলো’, ‘নীল নীল আহা কত নীল’, ‘গান না যদি গল্প বলি’, ‘তোমার এ উপহার আমি চিরদিন রেখে দেব’, ‘তুমি কেন বোঝ না যে’সহ আরো বহু কালজয়ী গান গেয়েছেন এ জুটি।

এছাড়া শাহনাজ রহমতুল্লাহর সাথে ‘ঝিরিঝিরি হাওয়া আর একটু একটু ছোঁয়া’, ‘শুধু একবার বলে যাও’, ফেরদৌসী রহমানের সাথে ‘আমি কার জন্য পথ চেয়ে রবো’, শাম্মী আখতারের সাথে ‘ঢাকা শহর আইসা আমার আশা ফুরাইছে’ ও সামিনা চৌধুরীর সাথে ‘আজ কোন কাজ নেই আজ আমাদের ছুটি’ গানগুলো উল্লেখযোগ্য।

১৯৯৭ সালে ব্রেইন স্ট্রোক করার পর চলাফেরায় ও কথাবার্তায় সীমাবদ্ধতা ছিল তাঁর। এরপরও ওস্তাদ বারীণ মজুমদারের সাহায্যার্থে ১৯৯৯ সালের ৩ ডিসেম্বর ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্সটিটিউটে সাবিনা ইয়াসমীনকে নিয়ে অনুষ্ঠান করেছিলেন। ২০০১ সালে ৬১ বছর বয়সে মারা যান খন্দকার ফারুক আহমেদ। রেডিও, টিভি ও চলচ্চিত্রের সঙ্গীতকে শক্ত ভিত্তির উপর দাঁড় করানোর অন্যতম কারিগর খন্দকার ফারুক আহমেদ আজ এক বিস্মৃত নাম।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments