নির্বাচনি রোডম্যাপ ঘোষণায় দুলছে দেশ
নির্বাচনি হাওয়ায় দুলছে সারা বাংলাদেশ। উচ্ছ্বাস ও উত্তেজনা দুটিই রয়েছে। জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার, ২৮ আগস্ট নির্বাচন কমিশনের মিডিয়া সেন্টারে এ রোডম্যাপ ঘোষণা করেন নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ। তিনি এটিকে ‘ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষ্যে কর্মপরিকল্পনা’ বলে উল্লেখ করেছেন। রমজানের আগেই ভোট অনুষ্ঠিত হবে—এমনটাই ধারণা দিয়েছেন তারা।
প্রবাসীদের ভোটাধিকার দেওয়ার লক্ষ্যে তাদের নিবন্ধন কার্যক্রম চলবে আগামী ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত। প্রবাসি ভোটার তালিকা মুদ্রণ হবে ১-৫ ডিসেম্বর। আগামী ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত প্রবাসীদের কাছে ব্যালট পাঠানো হবে। নির্বাচনের এক সপ্তাহ আগে তারা ভোট দিয়ে দেশে ব্যালট পেপার ফেরত পাঠাবেন। আগামী জাতীয় নির্বাচনে প্রবাসী বাংলাদেশীরা এই প্রথম ভোট দিতে যাচ্ছেন। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে আগামী নভেম্বরে ব্যালট পেপার পাঠাবার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ঘোষণা মতে, ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ফলে ডিসেম্বর নাগাদ তফসিল ঘোষণা হতে পারে। কিন্তু তফসিলেরও আগে ব্যালট পেপার পাঠানো হলে প্রার্থীর নাম কীভাবে দেওয়া হবে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। নির্বাচনী কর্মকর্তারা বলছেন, প্রবাসী বাংলাদেশীদের কাছে যে ব্যালট পেপার পাঠানো হবে তাতে কোনও প্রার্থীর নাম থাকবে না। নির্বাচন কমিশন অনুমোদিত প্রতীকসমূহ ব্যালট পেপারে অঙ্কিত থাকবে। প্রার্থী চূড়ান্ত হবার পর ভোট দিয়ে ডাকযোগে পাঠিয়ে দিতে হবে। ভোটের চিঠি ভোটের দিনে খোলা হবে।
নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের যে রোডম্যাপ ঘোষণা করেছে তার আলোকে নভেম্বরে প্রবাসীদের কাছে ব্যালট পেপার পাঠানো হবে। কারণ এসব ব্যালট পেপারের মধ্যে ভোট দিতে কম সময় লাগলে ভোটের দিনে তা পৌঁছতে পারবে না। এদিকে, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ২৪টি কাজকে গুরুত্ব দিয়ে রোডম্যাপ ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ও ভোটগ্রহণের সম্ভাব্য সময়সীমা সম্পর্কে কিছুই উল্লেখ নেই। এমনকি আসন বণ্টন, নির্বাচনে সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ ও তা মোকাবিলায় ইসির পদক্ষেপ সম্পর্কেও কিছু উল্লেখ নেই।
২০০৮ সালের নির্বাচন সামনে রেখে রোডম্যাপ বা কর্মপরিকল্পনা ঘোষণার রেওয়াজ শুরু হয়। ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করা হয়েছিল ২০২২ সালের সেপ্টম্বরে। ওই রোডম্যাপে নির্বাচনের লক্ষ্য, চ্যালেঞ্জ ও চ্যালেঞ্জ উত্তরণের উপায় উল্লেখ ছিল। কিন্তু বর্তমান এএমএম নাসির উদ্দিন কমিশন তাদের রোডম্যাপে এসব কিছুই উল্লেখ করেনি। নির্বাচনের প্রস্তুতিমূলক কাজগুলো কোন সময়ের মধ্যে শেষ করা হবে, শুধু সেসব বিষয় উল্লেখ করেছে।
রোডম্যাপে রয়েছে নির্বাচনের প্রস্তুতিমূলক ২৪টি কাজের তালিকা। কোনটি কখন সম্পন্ন হবে, তা উল্লেখ করা হয়েছে রোডম্যাপে। এমনকি ওইসব কার্যক্রম ইসির কোন বিভাগ বাস্তবায়ন করবে তাও বলে দেওয়া হয়েছে।
রোডম্যাপ অনুযায়ী রাজনৈতিক দলসহ সব অংশীজনকে সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে সংলাপ শুরু হবে। শেষ হতে সময় লাগবে এক থেকে দেড় মাস। এ সময়ে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সুশীল সমাজ, নারী সমাজের প্রতিনিধি, ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সম্পাদক, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব, পর্যবেক্ষক সংস্থার প্রতিনিধি, নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ও আহত মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে সংলাপ হবে।
চলতি বছরে তিনবার ভোটার তালিকা হালনাগাদ করছে নির্বাচন কমিশন। ইতোমধ্যে দু’বার তালিকা প্রকাশ করেছে। তৃতীয় তালিকার খসড়া প্রকাশ করবে আগামী ৩১ অক্টোবর থেকে ১ নভেম্বর। ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত যাদের বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হবে, তারা ভোটার হতে পারবেন। ওই তালিকা চূড়ান্ত হবে ২৭-৩০ নভেম্বরের মধ্যে।