শেখ এনামুল কবীর
Episode-2#
Time Management বা সময়ের সঠিক ব্যবহার কি?
Time Management কেন করতে হয়?
Time Management কিভাবে করা যায়?
কথায় আছে, ‘জীবন অনেক ছোট, কিন্তু জীবনের গল্পটা অনেক বড়’। আমাদের সামনে আছে চিরন্তন সত্য বাণী- ‘প্রত্যেক প্রাণীকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। কিন্তু তারপরও জীবনকে এগিয়ে নেয়ার জন্য আমাদের অনেক কিছু করার প্রয়োজন হয়; অনেক কিছু করতে হয়। আমরা সব কিছুই করি জীবনে সাকসেস পাবার জন্য। আর এই সাকসেসের মূলমন্ত্র হলো- প্রোপার ইউজ অব টাইম বা সময়ের সঠিক ব্যবহার। যে ব্যক্তির কথার চেয়ে কাজের পরিমাণ বেশি, সাকসেস তার কাছেই এসে ধরা দেয়। তখনই স্বপ পূরণ হওয়া সম্ভব যখন আপনি সময়ের মূল্য দিতে শিখবেন। জীবনকে স্টাবলিস্ট করার ইফেকটিভ ফরমুলা হলো- টাইমের প্রোপার ইউটিলাইজ করা।
বন্ধুরা আজ নয়, কাল থেকে শুরু করবো- আমরা প্রায়ই এমন করে থাকি। এটা আমাদের জীবনে অনেক বড় ফাঁকি। কখনো কী এভাবে ভেবে দেখেছেন? এটা যদি মেনে নিই তাহলে প্রশ আসে- এভাবে আর কতদিন নিজেকে ফাঁকি দেবো আমরা? আজ আপনি কাজ আর রেসপনসিবিলিটি থেকে বাঁচার জন্য সময়কে ফাঁকি দিচ্ছেন, সময়ও আপনাকে ফাঁকি দিয়ে আপনার কালো চুলগুলো সাদা করে দেবে, টেরও পাবেন না। জন্ম নেয়ার সাথে সাথে আমাদের জীবন ঘড়ি চলতে শুরু করে। একটু একটু করে আমরা বড় হতে থাকি। ধীরে ধীরে আমরা বুঝতে শুরু করি আমাদের ভালো মন্দের দিকগুলো। স্কুল জীবনেই আমরা ভাবতে শুরু করি বড় হয়ে কী হব।
কখনো মনে হয় শিক্ষক হব, ইঞ্জিনিয়ার হব, ডাক্তার হব, পাইলট হব আরো অনেক চিন্তা ভাবনা আমাদের মাথায় ঘুরপাক খেতে থাকে। অন্যদিক থেকে আমাদের সময় কমতে থাকে। কে না চায় সুখের জীবন! আসলে বাস্তব জীবনটা এমন নয়। বাস্তব জীবনে ভালো কিছু করতে হলে স্ট্রাগল করতে হয়, নিজের মনে ডিটারমিনেশন
রাখতে হয়। কন্টিউয়াসলি হার্ড ওয়ার্ক করে যেতে হয়। একটু ভেবে দেখুন, জীবনে সাকসেস পাওয়া যদি সহজ কাজ হতো তাহলে আমাদের আশেপাশের সবাই সমাজে আপার লেবেলে বসবাস করতো।
সবাই সময়ের সঠিক ব্যবহার করতে পারে না বলেই সাকসেস সবার কাছে ধরা দেয় না। জীবনে সাকসেস পেতে হলে কথার চেয়ে কাজের পরিমাণ বাড়িয়ে দিন, সাফল্য আপনার কাছে ধরা দেবে। আপনি একজন মানুষ হিসেবে জীবনে কত কিছু করতে চান। সমাজে উঁচু স্থানে বাস করা, আরাম আয়েসের জীবন যাপন, নিজের ডিমান্ডের পাশাপাশি
পরিবারের সবার ডিমান্ড ফুলফিল করবেন, আরো কত চিন্তা ভাবনা। কিন্তু আপনি যদি টাইমকে কাজে লাগাতে না পারেন, বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেয়া, কাজে ফাঁকিবাজি করা, গান বাজনা, হৈ-হুলোড় যদি আপনার প্যাশন হয়ে থাকে, তাহলে একটু আগে যেসব কথা বললাম তা শুধু আপনার কল্পনা ছাড়া আর কিছুই নয়।
স্বপ অনেকেই দেখে থাকে কিন্তু সবাই ডেস্টিনেশনে পৌঁছাতে পারে না। প্রাপারলি টাইম ইউজ করা হয়নি বলেই ক্লাসের First Student টা আপনাকে টপকে গিয়েছে। এখনো প্রাপারলি টাইম ইউজ করছেন না সে কারণেই অনেক সুযোগ আপনার হাতছাড়া হয়ে যাবে। আপনি ভ্যালু অব টাইম বুঝতে পারছেন না, ভালো জবটাও আপনার হাতছাড়া হয়ে যাবে। আপনি সময়কে কাজে লাগাতে ব্যর্থ মানে আপনি নিজে, আপনার ফ্যামিলি, আপনার রিলেটিভ সবাই আপনার ওপর বিরক্ত।
সব থেকে কঠিন রিয়েলিটি হলো- যখন দেখবেন, যাদের সাথে আপনি স্টুডেন্ট লাইফ পার করেছেন, যারা আপনার খেলার সাথি ছিল কিংবা আপনারই ক্লাসমেট ছিল- তারা যখন বড় পজিশনে জব করছে, নিজের সুন্দর ক্যারিয়ারে স্টাটবলিস্ট হয়েছে, সবার ফেবারেট হয়ে বেঁচে আছে, তাদের চোখে মুখে তেমন ফ্রাস্টেশন দেখা যাবে না, যেমন ফ্রাস্টেশনে আপনি ভুগবেন। তখন হাজারো আফসোস করে কোনো লাভ হবে না। চলে যাওয়া সময় নেভার কাম ব্যাক। দিনের শুরুতে আপনি ভাবছেন আপনার হাতে অনেক কাজ, অনেক সময়। কিন্তু দিন শেষে দেখা যায় কিছু কাজ হয়েছে, কিছু কাজ বাকি থেকে গেছে। এমন কিছু কাজ পিছিয়ে যায় যা করা খুব অ্যাসেনশিয়াল ছিলো।
এমনটা হওয়ার মেইন কারণ হলো আপনি প্রোপারলি টাইম ম্যানেজমেন্ট করতে পারেননি। সেজন্য কিছু কাজ করা যেতে পারে। মনে রাখতে হবেমানুষ যন্ত্র নয়। লাগাতার কাজ করা মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। ঘন্টার পর ঘণ্টা কাজ করার ফলে আমাদের মাঝে ক্লান্তি দেখা দেয়। এতে প্রোডাক্টিভিটি কমে যায়। তাই সবকিছু ঠিকমতো করার জন্য রুটিন করা খুবই জরুরি। খেয়াল রাখতে হবে দিন শেষে যেন কোন কাজ বাকি না থাকে। ঘুমানোর আগে কিংবা কাজ শেষ করে যখন পারেন তখনি একটু হিসাব করে নিন- আজকে কী কী করা দরকার ছিলো, আর কী কী বাদ গেলো। মনে রাখা দরকার- সময়ের কাজ সময়ের মধ্যে করতে পারলেই নিজেকে বিনোদনের জন্য সময় দেয়া সম্ভব।
সময় এমনই এক নিষ্ঠুর যাযাবর যা আপনার সামনে দিয়েই চলে যায় কিন্তু ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। কথায় আছে সময় কারো জন্য অপেক্ষা করে না। সময়ের সাথে তাল মিলানোর মাধ্যমে আমাদের প্রতিদিনের কাজ করা সম্ভব। সতর্কতার সাথে টাইম ম্যানেজমেন্ট করতে পারলেই আপনার জন্য অনেক কিছু সহজ হবে। কিভাবে টাইম ম্যানেজমেন্ট করা যায়? টাইম ম্যানেজমেন্ট নিয়ে ১০টি টিপস।
১. সকাল সকাল বিছানা ছাড়ুন: ‘সকাল সকাল বিছানা ছাড়ুন’ কথাটা শুনতে একটু কেমন যেন লাগছে- তাই না? আমরা তো সবাই সকালেই উঠি। কিন্তু খুব সকালে আমরা কজন উঠি? আপনি যদি সকাল পাঁচটা থেকে ছয়টার মধ্যে ঘুম থেকে উঠতে পারেন তাহলে দিনের দুই থেকে তিন ঘন্টা অতিরিক্ত পাবেন। এই সময়ে আপনি আপনার পড়াশোনা বা যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজ সেরে নিতে পারবেন- যা আপনাকে অন্যদের থেকে অনেক অনেক এগিয়ে রাখবে।
২. আগের রাতে কাজের লিস্ট তৈরি করুন: প্রতিদিন রাতে আগামী দিন অর্থাৎ পরের দিন কী কী কাজ করবেন সেগুলোর একটি লিস্ট করতে হবে। এ ক্ষেত্রে শুধুমাত্র গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো রাখবেন। চাইলে দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় কাজগুলো রাখতে পারেন। তবে শুধুমাত্র যেগুলো আপনার লক্ষ্য পূরণ করতে সক্ষম শুধুমাত্র সেগুলোকেই রাখলে ভালো হয়।
৩. গুরুত্বপূর্ণ কাজ প্রথমে করুন: আমাদের একটি অভ্যাস হলো, সামনে যে কাজটি আসে সেটিকেই আমরা প্রথমে করে ফেলি। ছোট ছোট অংশে ভাগ করে আমরা কাজ করি। আর এর ফাঁকেই গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো পরের দিনের জন্য বাকি থেকে যায়। একজন সফল ব্যক্তি সবসময়ই তার গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো প্রথমে করে এবং তাই হওয়া উচিত।
৪. নিজের প্রাইম টাইমকে খুঁজে নিন: নিজেকে একটি প্রশ করুন- ‘দিনের কোন সময়ে আমার পড়তে বা কাজ করতে ভালো লাগে’। সকলের ক্ষেত্রেই দিনের এমন একটি সময় থাকে যখন শরীরে এনার্জি ও কাজে অ্যাটেনশন বেশি থাকে। সেই সময়টিকে সিলেক্ট করে নিতে হবে। হয়তো কারো সকাল সকাল কাজ করতে ভালো লাগে, কারো আবার অনেক রাতে বা কারো দুপুরবেলায়।
৫. কাজের ডেডলাইন সেট করুন: কাজের ডেডলাইন হচ্ছে- আপনি কোনো একটি কাজ ঠিক কখন শেষ করবেন সেটাকেই বোঝায়। তাই কোনো কাজ শুরু করার আগেই কাজটির ডেডলাইন সেট করে রাখুন। এমনটা করলে আমাদের ব্রেইন সেই কাজের প্রতি ডিপলি ইন্টারেস্টেড হয়ে ওঠে এবং সে কাজটি শেষ করতে অ্যাকটিভ হয়ে ওঠে। কাজের ডেডলাইন ঠিক করে রাখলে আপনার শরীরে অ্যাড্রিনালিন হরমোন সক্রিয় হয় এবং আপনার সমস্ত অ্যাটেনশন সেই কাজের প্রতি থাকে। এক্ষেত্রে মনে হয় যে, কাজটি করতে না পারলে আমার কতই না ক্ষতি হবে। আর এমন ভাবনাই কাজটি শেষ করতে সাহায্য করে।
৬. মোবাইল থেকে বাঁচুন: আমাদের দিনের কয়েক ঘন্টা সময় সোশ্যাল মিডিয়া অর্থাৎ ফেইসবুক, ইউটিউব ইত্যাদিতে চলে যায়। তাছাড়া, কোনো একটি কাজ শুরু করার সাথে সাথে মোবাইলে নোটিফিকেশন এসে আমাদের কাজের সমস্ত মনোযোগ এক সেকেন্ডে অন্যদিকে নিয়ে যায়। এজন্য যখন আপনি পড়াশোনা বা কাজ করবেন তখন হয় ইন্টারনেট কানেকশন অফ করে দেবেন। আর তা না হলে মোবাইলে DND (Do Not Disturb) নামের একটি অপশন অন করে রাখবেন। এর ফলে মোবাইলে কোনো নোটিফিকেশন এলেই স্ক্রিনে তা ফুটে উঠবে না, আর কোনো আওয়াজওহবে না।
৭. উপযোগী টাইম টেবিল: একটা দিনে আপনি কী কী করবেন এবং কোন সময় কী করবেন তার টাইম টেবিল বানিয়ে নিন। টাইম টেবিল বানানো খুব সহজ কিন্তু এটি পালন করা অনেকের জন্যই বেশ কঠিন। যদি এই টাইম টেবিল মেইনটেইন করতে পারেন, তাহলে আপনাকে কেউ আটকাতে পারবে না।
৮. মোবাইল ভক্তদের থেকে দূরে থাকুন: আমাদের আশেপাশের এমন অনেক বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয় আছে যারা এলভিসদিন শুধু মোবাইল ব্রাউজ করে। তাদের যেন আর কোনো কাজই নেই। তাদের সঙ্গে দূরত্ব বজায়
রাখার চেষ্টা করুন। যারা নিজেদের সময় নষ্ট করে তারা আপনার সময়ের মূল্য দেবে না। এটি আপনার শুনতে খারাপ লাগতে পারে, তবে এমনটা না করলে আপনিও আপনার সময়কে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারবেন না।
৯. Pomodoro টেকনিক ব্যবহার করুন: Pomodoro টেকনিক হলো- কোনো কাজ শুরু করার পর টুয়েন্টি ফাইভ মিনিটস অন্তর অন্তর ফাইভ মিনিটস ইন্টারভেইল নেয়া। এমন করলে আপনার সেই কাজের প্রতি অ্যাটেনশন বেশি থাকবে। কাজটির প্রতি আপনি ডিস্টার্ব ফিল করবেন না। চাইলে এটি ট্রাই করে দেখতে পারেন। পড়াশনার ক্ষেত্রেও এই টেকনিক ব্যাবহার করা যেতে পারে।
১০. স্টপওয়াচ ব্যবহার করুন : কোনো কাজ শুরু করার আগে আপনি স্টপ ওয়াচ অন করতে পারেন। এতে কাজটি ফিনিশ করতে ঠিক কতক্ষণ সময় লাগছে সেটি বুঝতে পারবেন। এইভাবে আপনি আপনার কাজের জন্য নির্দিষ্ট সময়সীমা করে রাখবেন। এমনটা করলে পরবর্তীতে আপনি আপনার কাজের স্পিড বা গতি বাড়াতে পারবেন। (চলবে)