Monday, October 6, 2025
spot_img
Homeঅন্যান্যলেক অন্টারিওর জলরেখায় মনোরম এক সন্ধ্যা

লেক অন্টারিওর জলরেখায় মনোরম এক সন্ধ্যা

নজরুল মিন্টু

লেক অন্টারিওর ওপর সন্ধ্যা নামছিল ধীর লয়ে। গাঢ় নীল জলের ভিতর থেকে উঁকি দিচ্ছিল টরন্টোর
স্কাইলাইন। দূরে সিএন টাওয়ারের অবয়ব দাঁড়িয়ে ছিল বন্দর-প্রহরীর মতো। সময়ের কাঁটা ছুঁইয়ে তিন
শতাধিক অতিথিকে নিয়ে যাত্রা শুরু করল প্রমোদ তরী ‘ইয়াঙ্কি লেডি’।

মৃদু বাতাসে তরী জল চিরে এগোয়, আর কোথাও কাছাকাছি সিগালের ডাক ভেসে এসে যোগ করে
নাবিক-সন্ধ্যার একান্ত সুর। টরন্টো আইল্যান্ডসের গাছের ছায়া জলরেখায় ক্ষুদ্র ছাতার মতো ছড়িয়ে ছিল;
আলো-ছায়ার খেলায় দিগন্তজোড়া নীলিমা মনকে ভিজিয়ে দিচ্ছিল এক অন্যরকম প্রশান্তিতে।
গতকাল ছিল টরন্টোর বাংলাদেশি রিয়েলটরদের সংগঠন ‘বিআরসি’র নৌবিহার। ডেকে পা রাখতেই
বোঝা গেল—একটি সুশৃঙ্খল আয়োজন। প্রবেশ থেকে আসন বিন্যাস সবকিছু ছিল পরিপাটি; সুনিয়ন্ত্রিত
রেজিস্ট্রেশন অতিথিদের নির্ভার সময় কাটানোর স্বাচ্ছন্দ্য নিশ্চিত করেন আয়োজকরা।
অতিথিদের সমাগমে প্রমোদ তরীর তিনটি ডেকই গমগম করছিল। কোথাও গানের সুর, কোথাও কুশল
বিনিময়ের উষ্ণতা, কোথাও বা ক্যামেরার ফ্ল্যাশে বন্ধুত্বের নতুন ফ্রেম। মনে হলো এ নৌবিহার কেবল
ভ্রমণ নয়, এটি এক সন্ধ্যার প্রতিশ্রুতি। শহরের আলো পিছনে ফেলে তরী ছুটে চলল নীল জলের পথরেখায়
প্রায় সাত ঘন্টার এক স্মরণীয় যাত্রা।

প্রধান ডেকে আয়াজন করা হয় সুরের আসর। মহুয়া পারিয়াল কণ্ঠ খুলতেই জল-হাওয়া যেন নতুন এক
তালে দুলে উঠল; পরিচিত বাংলা গানের অনুরণন তরঙ্গে তরঙ্গে ছড়িয়ে পড়ল। কিছুক্ষণ পর মঞ্চে সামিত
বড়ুয়া তার প্রাণচঞ্চল পরিবেশনায় দর্শকসারি নেচে উঠল স্বতঃস্ফূর্ত তালে। গানের বিরতিতে যে
করতালির ঢেউ উঠছিল, তা মিলেমিশে যাচ্ছিল লেকের ছোট ছোট ঢেউয়ের সঙ্গে সুর আর প্রকৃতির এমন সখ্য
সচরাচর মেলে না।

ইয়াঙ্কি লেডির দ্বিতীয় তলায় ছিল যেন অঘোষিত আলাপের মঞ্চ। নতুন-পুরোনো রিয়েলটর, তাদের পরিবার, মিডিয়া ও কমিউনিটির অতিথিদের জম্পেশ আড্ডা জমে উঠে। যে শহর প্রতিদিন প্রতিযোগিতার নামে মানুষকে ছুটতে শেখায়, সেই শহরের বুকেই এই এক সন্ধ্যায় ছিল থামার সুযোগ কথায়, হাসিতে, স্মৃতির অ্যালবামে।
উপরের ডেক ছিল অনন্ত আকাশ দেখার বারান্দা। এখান থেকে শহরের আলো দেখায় নদীর স্রোতের মতো, আর জলতলের কালো-নীল ক্যানভাসে শুয়ে থাকে অসংখ্য ক্ষুদ্র তারা। বাতাসের ঠান্ডা ছোঁয়ায়
বোঝা যায় জীবন কত গভীর, আনন্দ কত সরল। কেউ কেউ রেলিং ধরে নীরবে দাঁড়িয়ে, কেউ বা জোড়া ছবি
তুলছেন; যে যেভাবে পারেন, নিজের মতো করে রাতটিকে মনে গেঁথে নিচ্ছেন।

পর্ববদলে চলে সঞ্চালনা সুবিন্যস্ত পরিকল্পনা, সময়ানুবর্তিতা, আর জনপ্রিয় উপস্থাপিকা মুক্তার স্নিগ্ধ
কণ্ঠ। কৃতজ্ঞতার কয়েকটি বাক্যে আয়োজকদের প্রতি ধন্যবাদ জানাতে গিয়ে বোঝা গেল, অদৃশ্য পরিশ্রমের
পিঠে দাঁড়িয়েই এমন সন্ধ্যার জন্ম হয়। সেই পরিশ্রমের স্বাক্ষর মিলল খাবারের টেবিলেও।

খাওয়া-দাওয়ার এ পর্বটি ছিল আনন্দের আরেকটি অধ্যায়। রেডহট তন্দুরির পরিবেশিত খাবারে ছিল দক্ষ
হাতের স্বাক্ষর—স্বাদের ভারসাম্য, পরিবেশনের শৃঙ্খলা, অতিথির রুচির প্রতি যত্ন। পরিশেষে মুন্নি’স কিচেনের
মিষ্টান্ন টরন্টোর রাতের আলোয় দাঁড়িয়ে একটুখানি মিঠে সুখ, যেন নৌবিহারের গল্পে শেষ পৃষ্ঠার স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ স্বাক্ষর।

সবশেষে ছিল রাফেল অতিথিদের আগ্রহ ছিল চোখে পড়ার মতো। একে একে ঘোষিত হলো দশজন
বিজয়ীর নাম; করতালি আর উচ্ছ্বাসে ডেক ভরে উঠল উৎসবের ছন্দে।

সময়ের স্রোত গা বেয়ে রাত বাড়তে থাকে। ডেকে দাঁড়িয়ে যারা ফোনের ক্যামেরায় মুহূর্তগুলো বন্দি
করলেন, তারা হয়তো একদিন ছবির দিকে তাকিয়ে বুঝবে। সব হাসি কেবল ছবি নয়; সেগুলো ব্যস্ত
জীবনের ফাঁকে খুঁজে পাওয়া অবকাশের স্মৃতি।

রাত এগারোটায় নোঙর ফেলল প্রমোদ তরী। তীর ছোঁয়ার সঙ্গে সঙ্গেই কানে আসতে শুরু করলো শহরের
পরিচিত শব্দ স্ট্রিট কার, গাড়ি, নৈশ কোলাহল।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments