Wednesday, December 31, 2025
spot_img
Homeবিশেষ প্রতিবেদনপরিত্যক্ত সাবওয়ে স্টেশনে মামদানির শপথ

পরিত্যক্ত সাবওয়ে স্টেশনে মামদানির শপথ

নিউইয়র্কে নতুন বছরকে ঘিরে যখন টাইমস স্কয়ারে হাজারো মানুষের উৎসবের প্রস্তুতি চলবে, ঠিক তার আগমুহূর্তে এক ব্যতিক্রমী সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন নবনির্বাচিত মেয়র জোহরান মামদানি। তিনি ঘোষণা দিয়েছেন, ৩১ আগস্ট মধ্যরাতে নিউইয়র্ক সিটি হলের নিচে অবস্থিত একটি পরিত্যক্ত সাবওয়ে স্টেশনে তিনি শপথ নেবেন। ঐতিহাসিক এই স্টেশনটি তৈরি হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের তথাকথিত ‘গিল্ডেড এজ’ বা সমৃদ্ধির যুগে, যা আজও নগরটির অতীত ঐতিহ্যের স্মারক হিসেবে পরিচিত।

৩৪ বছর বয়সী নবনির্বাচিত মেয়রের এই শপথ অনুষ্ঠান হবে এমন এক স্থানে, যা বর্তমানে কোনো যাত্রী পরিবহনে ব্যবহৃত হয় না। স্থানটি এখন কেবল স্থানীয় পাঁচ নম্বর ট্রেনের ঘোরার পথ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এই অপ্রচলিত স্থান বেছে নেওয়ার পেছনে প্রতীকী গুরুত্বের কথা তুলে ধরেছেন তিনি। তাঁর মতে, এটি একটি নতুন যুগের সূচনার বার্তা বহন করে, যা অতীতের গৌরব ও ভবিষ্যতের সম্ভাবনাকে একসূত্রে যুক্ত করে।

এক বিবৃতিতে নবনির্বাচিত মেয়র বলেন, এই স্টেশন এমন একটি শহরের স্মৃতিচিহ্ন, যা একসময় সাহসের সঙ্গে সুন্দর ও বড় কিছু গড়ে তুলেছিল এবং শ্রমজীবী মানুষের জীবনমান বদলে দেওয়ার মতো উদ্যোগ নিয়েছিল। তাঁর মতে, সেই উচ্চাকাঙ্ক্ষা যেন কেবল ইতিহাসের পাতায় সীমাবদ্ধ না থাকে বা সিটি হলের নিচে চাপা পড়ে না যায়। বরং শহরের শাসনকাঠামোর কেন্দ্র থেকে সেই চেতনাকেই আবার ফিরিয়ে আনার লক্ষ্য নিয়ে তিনি এই আয়োজন করছেন।

তিনি আরও বলেন, নতুন সুযোগ ও পরিবর্তনের এই সময়ে লাখ লাখ নিউইয়র্কবাসীর নেতৃত্ব দেওয়ার সুযোগ পাওয়া তাঁর জন্য সম্মানের। শহরের দীর্ঘ ও সমৃদ্ধ ঐতিহ্যকে সামনে এগিয়ে নেওয়ার দায়িত্ব নিতে পারা তিনি নিজের জন্য গর্বের বলে মনে করেন।

উল্লেখ্য, ১৯০৪ সালে নিউইয়র্কে যেসব ২৮টি সাবওয়ে স্টেশন প্রথম চালু হয়েছিল, এই স্টেশনটি ছিল তাদের একটি। পরে ১৯৪৫ সালে সাবওয়ে ব্যবস্থার আধুনিকায়নের সময় এটিকে বন্ধ করে দেওয়া হয়। ঐতিহাসিক গুরুত্বের কারণে ১৯৭৯ সালে এটিকে শহরের ল্যান্ডমার্ক হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয় এবং ২০০৪ সালে এটি জাতীয় ঐতিহাসিক স্থানের তালিকায় স্থান পায়।

নতুন মেয়রকে শপথবাক্য পাঠ করাবেন অঙ্গরাজ্যের অ্যাটর্নি জেনারেল। শপথ অনুষ্ঠানের পর একই দিনে স্থানীয় সময় দুপুরে সিটি হলের সিঁড়িতে আরেকটি আনুষ্ঠানিক আয়োজন থাকবে। সেখানে ভার্মন্ট অঙ্গরাজ্যের এক সিনেটর তাঁকে পুনরায় শপথ পাঠ করাবেন। এরপর ব্রডওয়েতে একটি বড় উৎসবের আয়োজন করা হবে, যেখানে সাধারণ মানুষ অংশ নেবেন।

অ্যাটর্নি জেনারেল এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, সাবওয়ে স্টেশন বেছে নেওয়া একটি যথার্থ সিদ্ধান্ত। কারণ, গণপরিবহন ব্যবস্থা নিউইয়র্কবাসীর জন্য এক ধরনের সমতা ও সংযোগের প্রতীক। তাঁর মতে, যে লাইনেই মানুষ যাতায়াত করুক না কেন, সবাই এমন একটি শহরের অধিকারী হওয়া উচিত, যেখানে তারা নিরাপদ ও মর্যাদার সঙ্গে জীবনযাপন করতে পারে।

এই শপথ অনুষ্ঠানে সাবেক মেয়রদের মধ্যে কেবল একজন প্রগতিশীল ডেমোক্র্যাট সাবেক মেয়র উপস্থিত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। অন্য দুই সাবেক মেয়র এখনো তাঁদের উপস্থিতি নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত জানাননি। বিদায়ী মেয়রও বিষয়টি স্পষ্ট করেননি। এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, নবনির্বাচিত মেয়রের সঙ্গে কথা বলে তিনি নিশ্চিত হতে চান, যেন তাঁর উপস্থিতি অনুষ্ঠানে কোনো ধরনের বিঘ্ন সৃষ্টি না করে।

এদিকে, শপথ গ্রহণের আগেই নতুন মেয়রের একটি সিদ্ধান্ত নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়েছে। ফায়ার ডিপার্টমেন্টের প্রধান হিসেবে এক অভিজ্ঞ ইএমএস কর্মকর্তাকে নিয়োগ দেওয়ার পর একজন প্রযুক্তি উদ্যোক্তা তাঁর অভিজ্ঞতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। এর জবাবে নবনির্বাচিত মেয়র সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বলেন, অভিজ্ঞতাই তাঁর সিদ্ধান্তের মূল ভিত্তি। কারণ, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জরুরি চিকিৎসাসেবায় তিন দশকের বেশি সময় কাজ করেছেন এবং ফায়ার ডিপার্টমেন্টে আসা অধিকাংশ কলই ইএমএস কর্মীদের সামলাতে হয়।

তিনি আরও বলেন, কোনো ব্যক্তিগত বা রাজনৈতিক সমালোচনা সেই কর্মকর্তার দক্ষতা ও যোগ্যতাকে খাটো করতে পারে না। বর্তমান মেয়রের মেয়াদ শেষ হওয়া পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার পূর্ণ অধিকার রয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

সব মিলিয়ে, পরিত্যক্ত সাবওয়ে স্টেশনে শপথ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিউইয়র্কের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক ব্যতিক্রমী অধ্যায় হিসেবে আলোচিত হচ্ছে। এটি যেমন শহরের অতীত ঐতিহ্যকে স্মরণ করায়, তেমনি ভবিষ্যতের জন্য নতুন দৃষ্টিভঙ্গির ইঙ্গিতও দিচ্ছে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments