ভ্রমণ বলতে অনেকের কাছেই প্যারিস, বালি কিংবা নিউইয়র্কের মতো পরিচিত গন্তব্যের কথা মনে আসে। কিন্তু পৃথিবীর মানচিত্রে এমন কিছু জায়গা আছে, যেখানে মানুষের উপস্থিতির চেয়ে প্রকৃতি, প্রাণী আর বিচ্ছিন্নতার অনুভূতিই বেশি স্পষ্ট। এসব স্থানে গেলে দেখা মেলে এমন এক ভিন্ন পৃথিবীর, যা বিশ্বের ৯০ শতাংশ পর্যটক কখনো প্রত্যক্ষ করেননি। প্রাণ-প্রকৃতি, সংস্কৃতি ও ইতিহাসে সমৃদ্ধ এই স্থানগুলো ভ্রমণপ্রেমীদের জন্য একেবারেই আলাদা অভিজ্ঞতা এনে দেয়। নিচে তেমনই দশটি ব্যতিক্রমী গন্তব্যের সংক্ষিপ্ত বিবরণ তুলে ধরা হলো।
ডেনমার্কের ফ্যারো দ্বীপপুঞ্জ উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরের বুকে নিঃশব্দে দাঁড়িয়ে থাকা এক বিস্ময়। আইসল্যান্ড ও নরওয়ের মাঝামাঝি অবস্থিত এই ১৮টি আগ্নেয়গিরির দ্বীপে মানুষের তুলনায় ভেড়ার সংখ্যাই বেশি। খাড়া পাহাড়, সবুজ উপত্যকা আর জলপ্রপাত যেখানে সরাসরি সমুদ্রে গিয়ে মিশেছে, সেই দৃশ্য অনেকের কাছেই অবিশ্বাস্য মনে হয়। রঙিন ঠোঁটের পাফিন পাখির অবাধ বিচরণ এবং ক্ষুদ্র গ্রামগুলোর নির্জনতা এখানে প্রকৃত নিঃসঙ্গতার স্বাদ দেয়। তবে যোগাযোগব্যবস্থা কঠিন হওয়ায় এখানে পৌঁছানো সহজ নয়।
নরওয়ের স্বালবার্ড দ্বীপপুঞ্জ আর্কটিক অঞ্চলের এক অভিনব জনপদ। এখানে মানুষের চেয়ে মেরু ভালুক ও শিয়ালের মতো প্রাণীর আধিক্য বেশি। জনবসতি ছাড়িয়ে বের হলে নিরাপত্তার জন্য অস্ত্র বহন বাধ্যতামূলক। বছরের চার মাস সূর্য অস্ত যায় না, আবার চার মাস সূর্য ওঠে না। বিচ্ছিন্ন জনপদে বসবাস করা আড়াই হাজার মানুষের জীবনযাত্রা পৃথিবীর অন্য যে কোনো স্থানের তুলনায় সম্পূর্ণ আলাদা।
ইয়েমেনের সোকোট্রা দ্বীপ আরব উপদ্বীপ থেকে লাখ লাখ বছর ধরে বিচ্ছিন্ন থাকায় একেবারেই স্বতন্ত্র বাস্তুতন্ত্র গড়ে তুলেছে। এখানকার ড্রাগন ব্লাড গাছ, মরুভূমির গোলাপ কিংবা অদ্ভুত প্রাণীকুল পৃথিবীর অন্য কোথাও সহজে দেখা যায় না। প্রায় জনমানবশূন্য সৈকত, গুহা আর স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জীবনধারা এই দ্বীপকে এক ভিন্ন গ্রহের অনুভূতি দেয়।
হিমালয়ের কোলে অবস্থিত ভুটান পর্যটন নীতির জন্য বিশ্বজুড়ে আলোচিত। এ দেশে প্রবেশের জন্য প্রতিদিন নির্ধারিত ফি দিতে হয়, যা জাতীয় আয়ের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। মাথাপিছু সুখের ধারণাকে গুরুত্ব দেওয়া এই দেশটি আধুনিকতার সঙ্গে ঐতিহ্যের ভারসাম্য বজায় রেখেছে। রাজধানী থিম্পুতে হাঁটলে প্রাচীন আর আধুনিক জীবনের মিশ্রণ চোখে পড়ে।
চিলির ইস্টার দ্বীপ প্রশান্ত মহাসাগরের বুকে অবস্থিত বিশ্বের সবচেয়ে বিচ্ছিন্ন জনবসতিগুলোর একটি। বিশাল মোয়াই ভাস্কর্য ছাড়াও এখানে রয়েছে সমৃদ্ধ পলিনেশীয় সংস্কৃতি এবং আগ্নেয়গিরির গর্ত। রাতের আকাশ এতটাই স্বচ্ছ যে খালি চোখেই মিল্কিওয়ে ও ম্যাজেলানিক মেঘপুঞ্জ দেখা যায়।
আফ্রিকার পূর্ব উপকূলে অবস্থিত মাদাগাস্কার জীববৈচিত্র্যের এক অনন্য ভাণ্ডার। এখানকার অধিকাংশ উদ্ভিদ ও প্রাণী পৃথিবীর আর কোথাও নেই। বাওবাব গাছ, লেমুর আর পাথরের বন এই দেশকে রূপকথার মতো করে তুলেছে।
পাপুয়া নিউগিনিতে রয়েছে ৮০০টির বেশি ভাষা এবং অসংখ্য ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠী। বহু জনগোষ্ঠী এখনো আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে সীমিত পরিচয়ে আবদ্ধ। দুর্গম যোগাযোগব্যবস্থার মধ্যেও এখানকার সংস্কৃতি ও উৎসব অভিযাত্রীদের আকর্ষণ করে।
বিশ্বের সবচেয়ে বড় দ্বীপ গ্রিনল্যান্ডের অধিকাংশ অংশ বরফে ঢাকা। জনসংখ্যা কম হলেও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে এটি অতুলনীয়। নর্দার্ন লাইটস আর মধ্যরাতের সূর্য দেখার অভিজ্ঞতা অনেক পর্যটকের স্বপ্ন।
রাশিয়ার ট্রান্স-সাইবেরিয়ান রেলপথ পৃথিবীর দীর্ঘতম রেলযাত্রাগুলোর একটি। মস্কো থেকে ভ্লাদিভোস্তক পর্যন্ত প্রায় ৯ হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে দেখা মেলে বন, হ্রদ ও সাইবেরিয়ার বিস্তীর্ণ প্রান্তর।
মধ্য এশিয়ার তুর্কমেনিস্তান রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বিচিত্রতার জন্য পরিচিত। রাজধানী আশগাবাতে সাদা মার্বেলের স্থাপত্য আর অভিনব নগর পরিকল্পনা দেশটিকে আলাদা পরিচয় দিয়েছে।
এই দশটি গন্তব্যে ভ্রমণ মানে শুধু জায়গা দেখা নয়, বরং পৃথিবীর একেবারে ভিন্ন বাস্তবতার মুখোমুখি হওয়া।



