রাজধানী ঢাকায় বিপুল মানুষের উপস্থিতিতে বিএনপির চেয়ারপারসন ও তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার জানাজা সম্পন্ন হয়েছে। রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণে এদিন রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে দেখা যায় জনসমাগমের বিরল দৃশ্য।
আজ বুধবার বিকেল ৩টা ৩ মিনিটে রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে জানাজা শুরু হয় এবং ৩টা ৫ মিনিটে তা শেষ হয়। জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতিব জানাজা পরিচালনা করেন। জানাজা উপলক্ষে সকাল থেকেই মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ ও আশপাশের এলাকায় মানুষ জড়ো হতে শুরু করে। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে এই জনসমাগম সংসদ ভবন এলাকা ছাড়িয়ে আশপাশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে।
সরেজমিনে দেখা যায়, সংসদ ভবন এলাকা থেকে কারওয়ান বাজার পর্যন্ত সড়কে বিপুল মানুষ জানাজায় অংশ নেন। একই সঙ্গে আসাদ গেট থেকে মোহাম্মদপুর টাউন হলের কাছাকাছি এলাকা, আগারগাঁও মেট্রো স্টেশন থেকে শ্যামলীর শিশু মেলার আশপাশের সড়কগুলোতেও মানুষের ঢল নামে। কালো পোশাক ও ব্যাজ পরা মানুষ, হাতে দলীয় পতাকা নিয়ে জানাজাস্থলে অবস্থান নেন ভোর থেকেই।
জানাজা শুরুর আগে প্রয়াত নেত্রীর জ্যেষ্ঠ পুত্র জানাজাস্থলে উপস্থিত হয়ে সবার কাছে মায়ের জন্য দোয়া কামনা করেন। তিনি বলেন, সবাই যেন মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করেন, যাতে তাঁর মা জান্নাত লাভ করেন। তাঁর বক্তব্যের সময় জানাজাস্থলে উপস্থিত মানুষের আবেগঘন পরিবেশ তৈরি হয়। এ সময় দলের স্থায়ী কমিটির একজন সদস্যও সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন।
এই জানাজায় দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব অংশ নেন। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, সশস্ত্র বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা, নৌ ও বিমানবাহিনীর প্রধানরা জানাজায় উপস্থিত ছিলেন। পাশাপাশি সরকারের উপদেষ্টারা, বিশিষ্ট কবি ও চিন্তক, নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সাবেক প্রধান, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব এবং রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তারাও জানাজায় অংশ নেন।
নিজ দলের নেতাকর্মীদের উপস্থিতিও ছিল চোখে পড়ার মতো। দলের মহাসচিব, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব, স্থায়ী কমিটির সদস্যসহ কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের অসংখ্য নেতাকর্মী জানাজায় অংশ নেন। প্রয়াত নেত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসকসহ ঘনিষ্ঠজনেরাও সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
এ ছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারাও জানাজায় অংশ নেন। জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতৃবৃন্দ, জাতীয় নাগরিক পার্টি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গণসংহতি আন্দোলন এবং গণ অধিকার পরিষদের নেতারাও উপস্থিত ছিলেন। আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকেও সহমর্মিতা জানাতে একজন প্রতিবেশী দেশের জাতীয় পরিষদের স্পিকার জানাজায় অংশ নেন এবং প্রয়াত নেত্রীর পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে সমবেদনা জানান।
অন্যদিকে, আরেক প্রতিবেশী দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকায় এসে প্রয়াত নেত্রীর জ্যেষ্ঠ পুত্রের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং তাঁর দেশের পক্ষ থেকে শোকবার্তা হস্তান্তর করেন।
এর আগে সকাল ৯টা ১৭ মিনিটের দিকে জাতীয় পতাকায় মোড়ানো একটি গাড়িতে প্রয়াত নেত্রীর মরদেহ একটি বেসরকারি হাসপাতাল থেকে গুলশানে নেওয়া হয়। মরদেহটি প্রথমে তাঁর দীর্ঘদিনের বাসভবনে নেওয়ার কথা থাকলেও পরে তা পরিবারের জ্যেষ্ঠ সদস্যের গুলশানের বাসভবনে নেওয়া হয়। সেখানে পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়স্বজনরা শেষ শ্রদ্ধা জানান। মরদেহের পাশে বসে পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত করা হয়।
বেলা ১১টা ৫ মিনিটে ওই বাসভবন থেকে মরদেহ নিয়ে জানাজাস্থলের উদ্দেশে রওনা হন পরিবারের সদস্যরা। গাড়িবহরে লাল সবুজ রঙের একটি বাসও ছিল। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে জানাজাস্থলে পৌঁছান প্রয়াত নেত্রীর নিকটজনরা।
জানাজা ও দাফন কার্যক্রম ঘিরে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়। হাসপাতাল এলাকা, জাতীয় সংসদ ভবন ও জিয়া উদ্যানসংলগ্ন এলাকায় রাত থেকেই বিজিবি মোতায়েন করা হয়। পাশাপাশি সেনাবাহিনী, পুলিশ, র্যাবসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করেন।
এই জানাজা শুধু একটি রাজনৈতিক নেত্রীর বিদায় নয়, বরং বাংলাদেশের রাজনীতির একটি দীর্ঘ অধ্যায়ের সমাপ্তিকে স্মরণ করার উপলক্ষ হয়ে ওঠে বলে মনে করছেন উপস্থিত অনেকেই।



