ইরান যদি পুনরায় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র বা পারমাণবিক কর্মসূচি সক্রিয় করার চেষ্টা করে, তাহলে দেশটির ওপর আবারও বড় ধরনের সামরিক হামলা চালানো হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। একই সঙ্গে তিনি ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসকে অবিলম্বে অস্ত্র সমর্পণের আহ্বান জানিয়েছেন। এ আহ্বানে সাড়া না দিলে সংগঠনটিকে চরম মূল্য দিতে হবে বলেও সতর্ক করেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় এক সংবাদ সম্মেলনে এসব মন্তব্য করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
গতকাল সোমবার ফ্লোরিডার মার-এ-লাগো রিসোর্টে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প এ অবস্থান স্পষ্ট করেন। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ইরানের প্রতিটি কর্মকাণ্ড গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং তেহরান কোনো ধরনের সামরিক বা পারমাণবিক সক্ষমতা পুনর্গঠনের পথে এগোলে তার কঠোর জবাব দেওয়া হবে।
সংবাদ সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ইঙ্গিত দেন, গত জুনে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাপক বিমান হামলার পরও ইরান গোপনে অস্ত্র কর্মসূচি পুনর্গঠনের চেষ্টা করতে পারে। তাঁর ভাষ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের কাছে এমন তথ্য রয়েছে যে ইরান আবারও অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম মজুতের চেষ্টা করছে। তিনি দাবি করেন, ইরান কোথায় কী করছে, সে বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র অবগত রয়েছে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় সব ধরনের প্রস্তুতি তাদের রয়েছে। ট্রাম্প বলেন, তিনি আশা করেন ইরান এমন কোনো পদক্ষেপ নেবে না, যা নতুন করে সামরিক সংঘাতকে উসকে দিতে পারে।
মধ্যপ্রাচ্যের চলমান সংকট প্রসঙ্গে গাজার পরিস্থিতিও সংবাদ সম্মেলনে গুরুত্ব পায়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জানান, গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তির দ্বিতীয় ধাপে অগ্রসর হওয়ার বিষয়ে তিনি আগ্রহী। এই ধাপে গাজায় আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়েনের পরিকল্পনা রয়েছে, যাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং চুক্তির বাস্তবায়ন তদারক করা যায়। তবে হামাস এখনো অস্ত্র সমর্পণে অস্বীকৃতি জানানোয় অসন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি।
ট্রাম্প বলেন, ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি চুক্তির শর্ত মেনে চললেও হামাস সেই পথে হাঁটছে না। তাঁর মতে, চুক্তির মূল শর্তগুলোর একটি হলো অস্ত্র সমর্পণ, যা বাস্তবায়ন না হলে শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলেন, হামাস যদি অস্ত্র সমর্পণ না করে, তাহলে তাদের জন্য ভয়াবহ পরিণতি অপেক্ষা করছে। এই বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি হামাসের ওপর চাপ আরও বাড়ানোর ইঙ্গিত দেন।
অন্যদিকে বৈঠকে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী গাজার সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়েও নিজের অবস্থান তুলে ধরেন। তিনি জানান, গাজায় জিম্মি থাকা সর্বশেষ ইসরায়েলি সেনার মরদেহ ফেরত না পাওয়া পর্যন্ত রাফা সীমান্ত খোলা হবে না। একই সঙ্গে তিনি বলেন, এই বিষয়টির সমাধান না হলে যুদ্ধবিরতি চুক্তির পরবর্তী ধাপেও এগোনো সম্ভব হবে না। ইসরায়েলের এই অবস্থান গাজা সংকটের ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন করে অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে।
বৈঠকে সিরিয়া ও লেবাননের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়েও দুই দেশের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে আলোচনা হয়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জানান, এই অঞ্চলে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে বিভিন্ন বিকল্প নিয়ে ভাবা হচ্ছে। গাজায় তুরস্কের শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়েনের সম্ভাবনা নিয়েও আলোচনা হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। তাঁর মতে, এ ধরনের উদ্যোগ পরিস্থিতি শান্ত রাখতে সহায়ক হতে পারে, যদিও বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত নয়।
সামগ্রিকভাবে ইরান, গাজা ও প্রতিবেশী অঞ্চলগুলোর পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান যে আরও কঠোর হচ্ছে, তা ট্রাম্পের বক্তব্যে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। একই সঙ্গে যুদ্ধবিরতি ও কূটনৈতিক উদ্যোগের কথাও উঠে এসেছে, যা মধ্যপ্রাচ্যের ভবিষ্যৎ রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকেরা।



