বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছে চীন। দেশটির প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াং এক শোকবার্তায় এই বর্ষীয়ান রাজনীতিকের প্রয়াণে চীনের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের সরকার ও তাঁর পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা ও আন্তরিক সহানুভূতি জানিয়েছেন। একই সঙ্গে দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়নে তাঁর অবদান শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেছেন তিনি।
মঙ্গলবার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে পাঠানো এক আনুষ্ঠানিক শোকবার্তায় চীনের প্রধানমন্ত্রী এই শোক ও সমবেদনার বার্তা দেন। শোকবার্তায় তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর মৃত্যু সংবাদে তিনি গভীরভাবে শোকাহত। চীন সরকার এবং চীনের জনগণের পক্ষ থেকে তিনি বাংলাদেশের সরকার ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি আন্তরিক সহমর্মিতা প্রকাশ করেন।
চীনের প্রধানমন্ত্রী তাঁর বার্তায় আরও উল্লেখ করেন, প্রয়াত এই নেতা বাংলাদেশের একজন বর্ষীয়ান রাজনীতিক ছিলেন এবং চীনের জনগণের একজন পুরোনো বন্ধু হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তাঁর রাজনৈতিক জীবনের নানা পর্যায়ে বাংলাদেশ ও চীনের সম্পর্ককে এগিয়ে নিতে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। বিশেষ করে তাঁর প্রধানমন্ত্রিত্বকালে দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি বন্ধুত্ব, সমতা এবং পারস্পরিক সুফলের ভিত্তিতে সর্বাত্মক সহযোগিতামূলক অংশীদারত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়। এর ফলে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধিত হয় বলে শোকবার্তায় উল্লেখ করা হয়েছে।
শোকবার্তায় আরও বলা হয়, বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যকার সম্পর্ক উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে প্রয়াত নেত্রীর অবদানকে চীনের পক্ষ থেকে গুরুত্বের সঙ্গে মূল্যায়ন করা হয়। দুই দেশের কূটনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং উন্নয়নমূলক সহযোগিতা জোরদারে তাঁর ভূমিকা ছিল তাৎপর্যপূর্ণ। এ কারণে তাঁর প্রয়াণকে শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, বরং চীন–বাংলাদেশ বন্ধুত্বের ক্ষেত্রেও একটি বড় ক্ষতি হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
চীনের প্রধানমন্ত্রী তাঁর চিঠিতে দুই দেশের দীর্ঘদিনের বন্ধুত্বের বিষয়টি বিশেষভাবে তুলে ধরেন। তিনি উল্লেখ করেন, চীন সরকার বাংলাদেশকে একটি ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে দেখে থাকে। এই বন্ধুত্বকে আরও গভীর ও সুদৃঢ় করতে চীন সবসময় আগ্রহী। শোকবার্তায় বলা হয়, চীন সরকার বাংলাদেশের সঙ্গে একযোগে কাজ করতে প্রস্তুত, যাতে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে আরও উচ্চতর পর্যায়ে উন্নীত করা যায় এবং এর মাধ্যমে উভয় দেশ ও জনগণের জন্য আরও বেশি সুফল নিশ্চিত হয়।
প্রধান উপদেষ্টার কাছে পাঠানো এই শোকবার্তা কেবল আনুষ্ঠানিক সৌজন্যের প্রকাশ নয়, বরং এটি দুই দেশের পারস্পরিক শ্রদ্ধা, বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার প্রতিফলন হিসেবেও দেখা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশ ও চীনের সম্পর্ক যে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধুত্বপূর্ণ ও সহযোগিতামূলক, এই শোকবার্তা সেই বাস্তবতাকেই আরও স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছে।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে প্রয়াত এই নেত্রীর ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ ও আলোচিত। তাঁর নেতৃত্বকালীন সময়ে দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সম্পর্কেও বিভিন্ন মাত্রায় পরিবর্তন ও অগ্রগতি দেখা গেছে। বিশেষ করে চীনের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে তাঁর অবদান আজও দুই দেশের কূটনৈতিক পরিসরে গুরুত্বের সঙ্গে স্মরণ করা হয়। চীনের প্রধানমন্ত্রীর শোকবার্তায় সেই স্বীকৃতির প্রতিফলন স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে।
সব মিলিয়ে, চীনের প্রধানমন্ত্রীর এই শোকবার্তা বাংলাদেশের প্রতি চীনের সহানুভূতি ও বন্ধুত্বের বার্তাই বহন করে না, বরং প্রয়াত নেত্রীর অবদানকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সম্মানের সঙ্গে স্মরণ করার একটি দৃষ্টান্ত হিসেবেও বিবেচিত হচ্ছে।



