বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া আর নেই। দীর্ঘ অসুস্থতার সঙ্গে লড়াই শেষে তিনি ইন্তেকাল করেছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। তাঁর মৃত্যুতে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নেমে এসেছে গভীর শোক এবং অনিশ্চয়তার আবহ।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার ভোরে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। দলের স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য জানান, ভোর সাড়ে ছয়টার দিকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান পরিবারের পক্ষ থেকে তাঁকে এই দুঃসংবাদটি নিশ্চিত করেন। এরপরই বিষয়টি দলের সর্বোচ্চ পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়ে।
দলের মিডিয়া সেলের এক সদস্য জানান, ভোর ছয়টার কিছু পর রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুর সময় দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানসহ পরিবারের নিকটাত্মীয়রা হাসপাতালে উপস্থিত ছিলেন। হাসপাতালে থাকা অবস্থায় শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত চিকিৎসকরা তাঁকে বাঁচাতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালান, তবে শেষ পর্যন্ত সব চেষ্টা ব্যর্থ হয়।
দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর জানাজা আগামীকাল বুধবার রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে অনুষ্ঠিত হতে পারে। জানাজার সময়সূচি ও আনুষ্ঠানিকতা নিয়ে দলের নীতিনির্ধারক মহলে আলোচনা চলছে।
খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন জটিল রোগে ভুগছিলেন। কারাবন্দি থাকা অবস্থায় এবং পরবর্তী সময়ে তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে। মুক্তি পাওয়ার পর চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে লন্ডনে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসা গ্রহণের পর তাঁর শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছিল বলে দলীয় সূত্রে জানানো হয়। তবে বয়সজনিত দুর্বলতা, দীর্ঘদিনের অসুস্থতা এবং শারীরিক ও মানসিক ধকলের কারণে তিনি পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠতে পারেননি।
চিকিৎসকদের মতে, নানা রোগের জটিলতা ধীরে ধীরে তাঁর শরীরকে আরও দুর্বল করে তোলে। মাঝেমধ্যেই তাঁকে গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে। সর্বশেষ গত ২৩ নভেম্বর তাঁকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর এক মাসের বেশি সময় ধরে তিনি সেখানেই চিকিৎসাধীন ছিলেন। এই দফায় তাঁর শারীরিক অবস্থার তেমন উন্নতি হয়নি এবং শেষ পর্যন্ত তিনি চিকিৎসায় সাড়া দেননি।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে খালেদা জিয়া ছিলেন এক প্রভাবশালী ও আলোচিত নেতা। সামরিক শাসনের পর গণতান্ত্রিক ধারায় রাজনীতিতে তাঁর উত্থান এবং একাধিকবার সরকারপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন তাঁকে দেশের রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে নিয়ে যায়। সমর্থকদের কাছে তিনি ‘দেশনেত্রী’ ও ‘আপসহীন নেত্রী’ নামে পরিচিত ছিলেন। তাঁর নেতৃত্বে বিএনপি দীর্ঘ সময় ধরে দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে ভূমিকা রেখেছে।
তাঁর মৃত্যুতে শুধু বিএনপিই নয়, দেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক পরিমণ্ডলেও এক শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন এবং নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে শোকবার্তা জানানো হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও তাঁর মৃত্যু নিয়ে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে।
খালেদা জিয়ার বিদায়ের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতির একটি অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি ঘটল। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে তিনি যেমন প্রশংসিত হয়েছেন, তেমনি সমালোচনার মুখোমুখিও হয়েছেন। তবু তাঁর প্রভাব, ভূমিকা এবং অবদান দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে বিশেষভাবে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।



