যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শান্তি প্রচেষ্টা বিশ্বজুড়ে ইতিবাচক সাড়া ফেলেছে বলে মন্তব্য করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের বিশেষ দূত। তাঁর ভাষ্য অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এই উদ্যোগকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে এবং বহু দেশ এটি প্রশংসার চোখে দেখছে।
ইউক্রেনের রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গে শান্তি আলোচনা শেষ হওয়ার পর সোমবার ভোরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে রুশ বিশেষ দূত এ মন্তব্য করেন। বিদেশি রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে বিনিয়োগ ও অর্থনৈতিক সহযোগিতাবিষয়ক দায়িত্বে থাকা এই প্রতিনিধি বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবং তাঁর দলের শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা এখন বৈশ্বিক আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছে।
গত রোববার যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের মার-এ-লাগো অবকাশযাপনকেন্দ্রে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের রাষ্ট্রপ্রধানের মধ্যে সরাসরি শান্তি আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। দীর্ঘদিন ধরে চলমান ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ বন্ধের লক্ষ্যে এই বৈঠককে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। আলোচনার পর দুই নেতা যৌথ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত হয়ে অগ্রগতির বিষয়ে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেন।
সংবাদ সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে চলমান যুদ্ধ থামবে কি না, তা কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই স্পষ্ট হয়ে যাবে। তাঁর মতে, আলোচনার গতি যদি ইতিবাচক থাকে, তাহলে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই একটি সমঝোতায় পৌঁছানো সম্ভব। তবে পরিস্থিতি জটিল হলে এই প্রক্রিয়া দীর্ঘ সময় নিতে পারে বলেও ইঙ্গিত দেন তিনি।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট আরও জানান, যুদ্ধ বন্ধের জন্য একটি সমঝোতার খুব কাছাকাছি এখন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেন। তাঁর দাবি, উভয় পক্ষই শান্তির প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করছে এবং বাস্তবসম্মত সমাধানের দিকে এগোচ্ছে। শান্তি প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিতে তিনি ইউক্রেনের পার্লামেন্টে ভাষণ দেওয়ার সম্ভাবনার কথাও উল্লেখ করেন। যদিও তিনি বলেন, এটি আদৌ প্রয়োজনীয় কি না, সে বিষয়ে তিনি পুরোপুরি নিশ্চিত নন। তবে যদি এই উদ্যোগ প্রতি মাসে হাজার হাজার মানুষের প্রাণ বাঁচাতে সাহায্য করে, তাহলে তিনি এমন পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত।
অন্যদিকে ইউক্রেনের রাষ্ট্রপ্রধান বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকে শান্তি কাঠামোর প্রায় সব দিক নিয়েই আলোচনা হয়েছে। তাঁর বক্তব্য অনুযায়ী, প্রস্তাবিত ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনার প্রায় ৯০ শতাংশ বিষয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে ঐকমত্য হয়েছে। বিশেষ করে ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চয়তার প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শতভাগ সমঝোতা হয়েছে বলে তিনি জানান।
প্রায় চার বছর ধরে চলমান এই যুদ্ধে ইউরোপের নিরাপত্তা পরিস্থিতি মারাত্মকভাবে প্রভাবিত হয়েছে। রাশিয়ার পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, যুদ্ধ বন্ধ করতে হলে ইউক্রেনের দনবাস অঞ্চল পুরোপুরি মস্কোর নিয়ন্ত্রণে ছেড়ে দিতে হবে। এই অঞ্চলের বেশির ভাগ এলাকা বর্তমানে রুশ বাহিনীর দখলে রয়েছে। পাশাপাশি, ইউক্রেনের রুশ নিয়ন্ত্রিত অন্যান্য অংশের দখলও স্থায়ী করতে চায় মস্কো।
মার্কিন প্রেসিডেন্টের প্রস্তাবিত শান্তি পরিকল্পনাতেও দনবাস অঞ্চলকে রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে দেওয়ার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। তবে এ বিষয়ে ইউক্রেন স্পষ্ট আপত্তি জানিয়েছে। ইউক্রেনের রাষ্ট্রপ্রধান সম্প্রতি বলেছেন, শান্তি প্রস্তাবের এই অংশ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র কিছুটা নমনীয় অবস্থান নেবে বলে তিনি আশা করছেন।
সাম্প্রতিক বৈঠকে উভয় নেতা স্বীকার করেছেন, দনবাস অঞ্চলের ভবিষ্যৎ এখনো চূড়ান্তভাবে নির্ধারিত হয়নি। তবে এই ইস্যুতে একটি গ্রহণযোগ্য সমাধানের দিকে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে বলেও তাঁরা উল্লেখ করেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, দনবাস নিয়ে মস্কো ও কিয়েভের মধ্যে সমঝোতায় পৌঁছানো কঠিন হলেও অসম্ভব নয়। আলোচনার ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে একটি টেকসই সমাধান বেরিয়ে আসতে পারে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
বিশ্লেষকদের মতে, এই শান্তি উদ্যোগ শুধু ইউক্রেন ও রাশিয়ার জন্য নয়, বরং বৈশ্বিক স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। যুদ্ধ বন্ধ হলে আন্তর্জাতিক অর্থনীতি ও কূটনৈতিক সম্পর্কেও এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।



