কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের লেদা রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। ক্যাম্প-২৪ নামে পরিচিত এই আশ্রয়শিবিরে আগুনে অন্তত অর্ধশত বসতঘর পুড়ে গেছে। তবে এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। স্থানীয় প্রশাসন ও ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা গেছে, গতকাল রোববার রাত আনুমানিক ১০টার দিকে আগুনের সূত্রপাত হয়। দীর্ঘ সময়ের চেষ্টার পর দিবাগত রাত একটার দিকে আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও আশ্রয়শিবিরের বাসিন্দাদের ভাষ্য অনুযায়ী, আগুনের সূত্রপাত হয় ক্যাম্পের এফ-ব্লকের ছনখোলা নামক একটি বসতি এলাকা থেকে। আগুন লাগার পর মুহূর্তের মধ্যেই তা আশপাশের ঘরগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে। আশ্রয়শিবিরের অধিকাংশ ঘর বাঁশ ও ত্রিপল দিয়ে নির্মিত হওয়ায় আগুন দ্রুত বিস্তার লাভ করে। এতে করে খুব অল্প সময়ের মধ্যে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি ঘটে।
আশ্রয়শিবিরের একজন রোহিঙ্গা নেতা জানান, আগুন লাগার সময় অধিকাংশ পরিবার ঘরের ভেতরেই অবস্থান করছিল। হঠাৎ আগুন ছড়িয়ে পড়ায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে পুরো ক্যাম্পজুড়ে। মানুষজন ঘর থেকে বের হয়ে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিতে শুরু করে। তবে দ্রুত সরে যেতে পারায় বড় ধরনের প্রাণহানি এড়ানো সম্ভব হয়েছে বলে তিনি জানান।
লেদা আশ্রয়শিবিরের দায়িত্বশীল মাঝি বলেন, এই ক্যাম্পে প্রায় ৭০ হাজার রোহিঙ্গা বসবাস করে। ঘরগুলো একটির সঙ্গে অন্যটি লাগানো অবস্থায় নির্মাণ করা হয়েছে। ফলে কোথাও আগুন লাগলে তা খুব দ্রুত বিস্তার লাভ করে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, একটি ঘরের চুলা থেকে আগুনের সূত্রপাত হতে পারে। তবে প্রকৃত কারণ নিশ্চিত হতে আরও তদন্ত প্রয়োজন।
খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের চারটি ইউনিট দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে। ফায়ার সার্ভিসের কক্সবাজার স্টেশনের উপসহকারী পরিচালক জানান, প্রায় তিন ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়। আগুনে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণে বিস্তারিত তদন্ত শেষে সুনির্দিষ্ট তথ্য জানানো হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
এদিকে আশ্রয়শিবিরে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা টেকনাফ ১৬ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক জানান, আলীখালী ও লেদা ক্যাম্পের মধ্যবর্তী অংশে এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। আগুন লাগার কারণ অনুসন্ধানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে। একই সঙ্গে ভবিষ্যতে এমন ঘটনা প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের বিষয়টিও বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে।
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার কার্যালয়ের অধীন লেদা ক্যাম্পের ইনচার্জ জানান, অগ্নিকাণ্ডে এফ-ব্লক ও সি(এ)-ব্লকের বেশ কিছু ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির পূর্ণাঙ্গ তথ্য সংগ্রহের কাজ চলছে। তথ্য সংগ্রহ শেষ হলে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরগুলোতে ঘনবসতি ও দাহ্য নির্মাণসামগ্রী ব্যবহারের কারণে প্রায়ই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় বসতঘর পুড়ে গিয়ে অসংখ্য পরিবার নিঃস্ব হয়ে পড়ে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আগুন প্রতিরোধে সচেতনতা বৃদ্ধি ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের ওপর গুরুত্বারোপ করেছে।



