রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান ঘটাতে নতুন করে কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার হচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে আবারও যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে বসতে পারেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। চলমান যুদ্ধ পরিস্থিতি, সম্ভাব্য শান্তি পরিকল্পনা এবং ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা নিশ্চয়তা নিয়ে আলোচনার লক্ষ্যেই এই সফরকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জানিয়েছেন, রোববার তিনি যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাচ্ছেন এবং সেখানে মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সরাসরি বৈঠকের সম্ভাবনা রয়েছে। তাঁর ভাষায়, যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় যে শান্তি পরিকল্পনার খসড়া তৈরি হয়েছে এবং নিরাপত্তা নিশ্চয়তা নিয়ে যে আলাদা প্রস্তাবগুলো আলোচনায় রয়েছে, সেগুলোই এই বৈঠকের মূল আলোচ্য বিষয় হবে। যুদ্ধ বন্ধে কার্যকর কোনো সমাধানে পৌঁছাতে এই আলোচনা সহায়ক হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন তিনি।
তবে রাশিয়ার পক্ষ থেকে এই উদ্যোগকে ভিন্নভাবে দেখা হচ্ছে। মস্কোর এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে রাশিয়া যে প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করছে, তার সঙ্গে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের পরিকল্পনার মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। ফলে আলোচনা হলেও চূড়ান্ত সমাধানে পৌঁছানো সহজ হবে না বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি।
বর্তমান যুদ্ধ পরিস্থিতিতে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দনবাস অঞ্চল সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। দোনেত্স্ক অঞ্চলের প্রায় ৭৫ শতাংশ এবং পার্শ্ববর্তী লুহানস্ক অঞ্চলের প্রায় ৯৯ শতাংশ বর্তমানে রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এই দুটি অঞ্চল একত্রে দনবাস নামে পরিচিত। ইউক্রেনের দাবি, এই অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ ও ভবিষ্যৎ ব্যবস্থাপনা যেকোনো শান্তিচুক্তির ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
ইউক্রেন শান্তিচুক্তির অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে শক্তিশালী নিরাপত্তা নিশ্চয়তা চাইছে। প্রেসিডেন্ট ইঙ্গিত দিয়েছেন, দনবাসের যে অংশ এখনো রাশিয়ার দখলে যায়নি, সেখানে একটি বেসামরিক মুক্ত অর্থনৈতিক অঞ্চল গঠন করা যেতে পারে। তাঁর মতে, এটি যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চলের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার এবং স্থিতিশীলতা ফেরাতে সহায়ক হতে পারে।
গত শুক্রবার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনার প্রায় ৯০ শতাংশ কাজ ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। বাকি অংশও দ্রুত সম্পন্ন করার চেষ্টা চলছে, যাতে পরিকল্পনাটি শতভাগ প্রস্তুত অবস্থায় উপস্থাপন করা যায়। তিনি আরও জানান, কোনো সময় নষ্ট না করে দ্রুত সিদ্ধান্তে পৌঁছানোই তাঁদের লক্ষ্য।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক বার্তায় তিনি লেখেন, সময় নষ্ট করার সুযোগ নেই এবং অদূর ভবিষ্যতে মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠকে সম্মত হওয়া গেছে। তাঁর মতে, নতুন বছরের আগেই গুরুত্বপূর্ণ কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হতে পারে।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, তাঁর অনুমোদন ছাড়া ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের হাতে বাস্তব কোনো সিদ্ধান্ত কার্যকর করার সুযোগ নেই। তিনি দাবি করেন, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলোচনা এগিয়ে নেওয়া সম্ভব এবং একইভাবে রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের সঙ্গেও সমঝোতার পথ খোলা আছে। তিনি শিগগিরই রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কথা বলবেন বলেও আশা প্রকাশ করেন।
এদিকে মস্কো জানিয়েছে, আলোচনা ধীরগতিতে এগোলেও ধারাবাহিক অগ্রগতি হচ্ছে। তবে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চল থেকে সেনা প্রত্যাহারের প্রশ্নে কড়া অবস্থান নিয়েছে কিয়েভ। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট স্পষ্ট করে বলেছেন, রাশিয়া যদি সমানভাবে সেনা প্রত্যাহার না করে, তাহলে ইউক্রেনও দনবাস অঞ্চল থেকে তাদের সেনা সরাবে না। এ বিষয়ে এখনো রাশিয়ার পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য আসেনি।
এর মধ্যেই যুদ্ধ পরিস্থিতি আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। গতকাল রাতে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে একাধিক বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা জানান, এটি ছিল রাশিয়ার নতুন একটি বিমান হামলা। রাজধানীর মেয়র বলেন, ইউক্রেনের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সক্রিয়ভাবে হামলা প্রতিহত করছে এবং বাসিন্দাদের আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে হতাহতের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরু হওয়ার পর থেকে এই যুদ্ধ ইউরোপের নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে গভীর সংকটে ফেলেছে। নতুন করে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় আলোচনা শুরু হলে যুদ্ধ বন্ধে কোনো অগ্রগতি আসে কি না, সেদিকেই এখন আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি।



