ইউক্রেনের দখল করা ভূখণ্ড নিয়ে কোনো ধরনের আপস করা হবে না বলে আবারও কঠোর অবস্থান তুলে ধরেছে রাশিয়া। মস্কোয় চলতি বছরের শেষ সংবাদ সম্মেলনে দেশটির রাষ্ট্রপ্রধান এই বার্তা স্পষ্ট করে দেন। তিনি বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে ভূখণ্ড সংক্রান্ত বিষয়ে রাশিয়ার অবস্থান অপরিবর্তিত রয়েছে এবং এখানে কোনো ছাড়ের সুযোগ নেই।
সংবাদ সম্মেলনে রাষ্ট্রপ্রধান উল্লেখ করেন, ইউক্রেনের নেতৃত্বের বক্তব্য থেকেই পরিষ্কার যে তারা ভূখণ্ড নিয়ে আলোচনায় আগ্রহী নয়। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট প্রকাশ্যে জানিয়েছেন, তাদের সংবিধান অনুযায়ী কোনো ভূখণ্ড হস্তান্তরের সুযোগ নেই। এই বাস্তবতা সামনে রেখেই রাশিয়া নিজেদের দাবি তুলে ধরছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
রাশিয়ার রাষ্ট্রপ্রধানের দাবি অনুযায়ী, ইউক্রেনের চারটি অঞ্চল যেগুলো বর্তমানে রুশ সেনাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, সেগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে রাশিয়ার অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে। একই সঙ্গে ২০১৪ সালে দখল করে রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত করা ক্রিমিয়া নিয়েও ইউক্রেনকে তাদের দাবি পরিত্যাগ করতে হবে বলে জানান তিনি। এসব ইস্যুতে কোনো ধরনের আপস সম্ভব নয় বলে সংবাদ সম্মেলনে বারবার জোর দেওয়া হয়।
রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজধানীর একটি বড় প্রদর্শনী হলে আয়োজিত এই সংবাদ সম্মেলন প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টা ধরে চলে। এতে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি, অর্থনীতি, নিরাপত্তা পরিস্থিতিসহ ৭০টির বেশি বিষয়ে আলোচনা করা হয়। দেশি গণমাধ্যমের পাশাপাশি বিদেশি সংবাদমাধ্যমের সাংবাদিকরাও এতে অংশ নেন।
এই সংবাদ সম্মেলনের আরেকটি উল্লেখযোগ্য দিক ছিল সরাসরি সাধারণ নাগরিকদের অংশগ্রহণ। ফোন কল, খুদে বার্তা এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের মাধ্যমে রুশ নাগরিকরা রাষ্ট্রপ্রধানের কাছে প্রশ্ন পাঠান। আয়োজকদের তথ্যমতে, ২০ লাখের বেশি প্রশ্ন জমা পড়ে। সেখান থেকে বিষয়ভিত্তিক প্রশ্ন বাছাই করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সহায়তায় উত্তর দেওয়া হয়।
ভূখণ্ড নিয়ে বক্তব্যের পাশাপাশি দনবাস অঞ্চল নিয়েও নিজের অবস্থান তুলে ধরেন রাশিয়ার রাষ্ট্রপ্রধান। তাঁর দাবি, দনবাসের যেসব এলাকা এখনো পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি, সেগুলোও রাশিয়ার হাতে ছেড়ে দিতে হবে। তবে ইউক্রেনের পক্ষ থেকে এই দাবিকে কঠোরভাবে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। কিয়েভের অবস্থান হলো, দনবাসে যেসব এলাকা এখনো তাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, সেগুলো কোনো অবস্থাতেই হস্তান্তর করা হবে না।
সংবাদ সম্মেলনে সামরিক পরিস্থিতি নিয়েও কথা বলেন রাশিয়ার রাষ্ট্রপ্রধান। তাঁর বক্তব্য অনুযায়ী, যুদ্ধের কৌশলগত নিয়ন্ত্রণ এখনো রুশ সেনাদের হাতেই রয়েছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, চলতি বছরের শেষ হওয়ার আগেই সেনারা আরও কিছু ভূখণ্ড নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিতে পারবে।
পশ্চিমা বিশ্লেষকদের হিসাব বলছে, ২০২৫ সালের সাম্প্রতিক মাসগুলোতে রাশিয়ার সেনাবাহিনী ধীরে হলেও রণক্ষেত্রে অগ্রসর হচ্ছে। প্রতিদিন গড়ে ১২ থেকে ১৭ বর্গকিলোমিটার এলাকা তাদের নিয়ন্ত্রণে আসছে বলে বিভিন্ন পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে। যদিও এই অগ্রগতি যুদ্ধের সামগ্রিক গতিপ্রকৃতি বদলে দেবে কি না, সে বিষয়ে মতভেদ রয়েছে।
রাশিয়ার এই বার্ষিক সংবাদ সম্মেলন আন্তর্জাতিক পরিসরে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। পশ্চিমা দেশগুলোর কর্মকর্তারা এটি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেন। রাশিয়ার নেতৃত্ব দেশের জনগণের সামনে যুদ্ধ ও আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি কীভাবে উপস্থাপন করছে, সেটি বোঝার চেষ্টা করেন তাঁরা।
উল্লেখ্য, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রার সামরিক অভিযান শুরু করে রাশিয়া। যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের ধারণা অনুযায়ী, এই যুদ্ধে উভয় পক্ষের সেনা সদস্যসহ ২০ লাখের বেশি মানুষ হতাহত বা নিখোঁজ হয়েছেন। তবে রাশিয়া ও ইউক্রেনের কেউই হতাহত ও নিখোঁজের নির্ভরযোগ্য পরিসংখ্যান প্রকাশ করেনি। যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হওয়ায় মানবিক সংকট ও রাজনৈতিক উত্তেজনা আরও গভীর হচ্ছে বলে আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগ বাড়ছে।



