বিশ্ব মহাকাশ অভিযানের ইতিহাসে নতুন একটি অধ্যায় যুক্ত হলো। শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে অতিক্রম করে হুইলচেয়ার ব্যবহারকারী একজন প্রকৌশলী সফলভাবে মহাকাশ ভ্রমণ সম্পন্ন করেছেন। জার্মানির এই প্রকৌশলী বিশ্বের প্রথম হুইলচেয়ার ব্যবহারকারী হিসেবে মহাকাশে যাত্রা করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন। মহাকাশ সফর শেষে তাঁর অনুভূতি ছিল স্পষ্ট, এটি তাঁর জীবনের সেরা অভিজ্ঞতা।
গতকাল শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্য থেকে মহাকাশ পর্যটন সংস্থার একটি রকেটে ছয়জন আরোহী নিয়ে যাত্রা শুরু হয়। ওই যাত্রায় অংশ নেন ওই প্রকৌশলীও। রকেটটি পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের কথিত সীমানা কারমান লাইনের ঠিক ওপরে পৌঁছায়। প্রায় ১০ মিনিটের এই সাবঅরবিটাল অভিযানে তাঁরা ওজনশূন্যতার অভিজ্ঞতা লাভ করেন এবং মহাকাশ থেকে পৃথিবী দেখার সুযোগ পান।
ওই প্রকৌশলী সাত বছর আগে একটি সাইকেল দুর্ঘটনায় মেরুদণ্ডে গুরুতর আঘাত পান। সেই দুর্ঘটনার পর থেকে তাঁকে হুইলচেয়ার ব্যবহার করতে হয়। তবে শারীরিক সীমাবদ্ধতা তাঁর স্বপ্নকে থামিয়ে দিতে পারেনি। দুর্ঘটনার পরও তিনি মহাকাশচারী হওয়ার স্বপ্ন লালন করে গেছেন। নিজের সক্ষমতা এবং ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা যাচাই করতে তিনি অনলাইনে একজন অবসরপ্রাপ্ত মহাকাশ প্রকৌশলীর সঙ্গে যোগাযোগ করেন।
পরবর্তীতে সেই অবসরপ্রাপ্ত প্রকৌশলীর সহায়তায় একটি বেসরকারি মহাকাশ পর্যটন সংস্থার মাধ্যমে তাঁর জন্য এই ঐতিহাসিক অভিযানের পথ খুলে যায়। দীর্ঘ প্রস্তুতি এবং বিশেষ ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে তাঁকে এই অভিযানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
মহাকাশযানটি নিরাপদে পৃথিবীতে ফিরে আসার পর সংস্থাটির প্রকাশিত ভিডিওতে ওই প্রকৌশলী নিজের অনুভূতি প্রকাশ করেন। তিনি জানান, মহাকাশে ভেসে থাকার মুহূর্ত, জানালা দিয়ে দেখা পৃথিবীর দৃশ্য এবং উৎক্ষেপণের প্রতিটি ধাপ ছিল অবিস্মরণীয়। তাঁর ভাষায়, এটি ছিল জীবনের সবচেয়ে আনন্দের অভিজ্ঞতা।
বর্তমানে তিনি ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থায় কর্মরত। দুর্ঘটনার পর তাঁর উপলব্ধি ছিল, প্রতিবন্ধীদের জন্য পৃথিবীর প্রতিটি ক্ষেত্র কতটা চ্যালেঞ্জিং। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই তিনি মনে করেছেন, মহাকাশ গবেষণা এবং অভিযানের ক্ষেত্রেও অন্তর্ভুক্তির সুযোগ থাকা প্রয়োজন।
এই অভিযানে বিশেষভাবে নজর কাড়ে তাঁর স্বতন্ত্র অংশগ্রহণ প্রক্রিয়া। তিনি নিজের হুইলচেয়ার থেকে মহাকাশযানের প্রবেশদ্বারে থাকা একটি বিশেষ বেঞ্চ ব্যবহার করে নিজেই ক্যাপসুলে প্রবেশ করেন। যাত্রাকালীন সময়ে প্রয়োজনে সহায়তার জন্য তাঁর পাশের আসনে ছিলেন অভিযানে সহায়তাকারী একজন অভিজ্ঞ সাবেক ব্যবস্থাপক।
ওই সাবেক ব্যবস্থাপক জানান, অনলাইনে পরিচয়ের সময় ওই প্রকৌশলী তাঁকে সরাসরি প্রশ্ন করেছিলেন, শারীরিক প্রতিবন্ধকতা থাকা সত্ত্বেও তাঁর মতো মানুষের মহাকাশচারী হওয়ার সুযোগ আছে কি না। তাঁর দৃঢ় মনোবল এবং আগ্রহ দেখেই তিনি এই অভিযানে সহায়তা করতে উৎসাহিত হন।
মহাকাশ পর্যটন সংস্থাটি জানায়, এই অভিযানের জন্য ক্যাপসুলে প্রবেশ ও বের হওয়ার সুবিধার্থে অতিরিক্ত গ্রাউন্ড সাপোর্ট সরঞ্জাম যুক্ত করা হয়েছিল। সব ধরনের নিরাপত্তা এবং আরাম নিশ্চিত করেই অভিযানের পরিকল্পনা করা হয়।
সংস্থাটির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, এই অভিযান শুধু একজন ব্যক্তির স্বপ্ন পূরণের গল্প নয়, বরং এটি প্রমাণ করে যে মহাকাশ সবার জন্য উন্মুক্ত হতে পারে। শারীরিক সক্ষমতা যাই হোক, সঠিক পরিকল্পনা ও প্রযুক্তির মাধ্যমে সুযোগ তৈরি করা সম্ভব। এই সফল যাত্রা ভবিষ্যতে প্রতিবন্ধীদের জন্য মহাকাশ অভিযানের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।



