Sunday, December 21, 2025
spot_img
Homeবাংলাদেশহাদি হত্যাকাণ্ডে নতুন মোড়, জামিন পেলেন হান্নান

হাদি হত্যাকাণ্ডে নতুন মোড়, জামিন পেলেন হান্নান

ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান হাদিকে গুলি করার ঘটনায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের মালিক সন্দেহে গ্রেপ্তার হওয়া এক ব্যক্তিকে জামিন দিয়েছেন আদালত। র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তারের পর পুলিশ রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলেও তাঁর সঙ্গে এই হত্যাকাণ্ডের সরাসরি কোনো সম্পৃক্ততার প্রমাণ না পাওয়ায় শেষ পর্যন্ত জামিনের পথ খুলে যায়।

সন্দেহভাজন হিসেবে ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার হওয়া ওই ব্যক্তির জামিন আবেদনের শুনানি অনুষ্ঠিত হয় রোববার। ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তাঁর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জামিন মঞ্জুর করেন। প্রসিকিউশন বিভাগের এক উপকমিশনার জানান, আইনজীবীর আবেদনের ভিত্তিতেই আদালত এই আদেশ দেন।

এই আদেশের ফলে প্রায় এক সপ্তাহ পর কারামুক্ত হওয়ার সুযোগ পেলেন ওই ব্যক্তি। তিনি ঢাকার মোহাম্মদপুর এলাকার বাসিন্দা। গ্রেপ্তারের পর থেকে একাধিকবার আদালতে তিনি দাবি করে আসছিলেন, এই ঘটনার সঙ্গে তাঁর কোনো সম্পর্ক নেই। তাঁর বক্তব্য ছিল, যে মোটরসাইকেল নিয়ে সন্দেহ করা হচ্ছে, সেটি তিনি আগেই একটি বিক্রয়কেন্দ্রে বিক্রি করে দিয়েছেন।

গত ১২ ডিসেম্বর ঢাকা-৮ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রচারণা চালানোর সময় রাজধানীর বিজয়নগর এলাকায় গুলিবিদ্ধ হন ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, একটি মোটরসাইকেলে করে আসা দুই ব্যক্তি তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে পাঠানো হয়। তবে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত বৃহস্পতিবার তিনি মারা যান। পরে মরদেহ দেশে আনা হলে বিপুল মানুষের অংশগ্রহণে জানাজা শেষে তাঁকে দাফন করা হয়।

গুলিবর্ষণের ঘটনার পরদিনই র‍্যাব ওই মোটরসাইকেলের মালিক সন্দেহে ওই ব্যক্তিকে আটক করে পল্টন মডেল থানায় হস্তান্তর করে। তাঁকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে পরদিন আদালতের মাধ্যমে তিন দিনের রিমান্ডে নেয় মামলার তদন্তকারী সংস্থা, গোয়েন্দা পুলিশ।

রিমান্ড শুনানিতে এবং জিজ্ঞাসাবাদের সময় তিনি বারবার দাবি করেন, মোটরসাইকেলটি তিনি আগেই বিক্রি করে দিয়েছেন। এ দাবির পক্ষে তিনি তদন্তকারী সংস্থাকে অনুরোধ করেছিলেন, যেন তাঁকে সংশ্লিষ্ট বিক্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। তাঁর অভিযোগ ছিল, প্রথমদিকে তাঁর কথায় গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।

তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রিমান্ড চলাকালে শেষ পর্যন্ত তাঁকে ওই বিক্রয়কেন্দ্রের মালিকের মুখোমুখি করা হয়। পাশাপাশি বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের তথ্য যাচাই করে দেখা যায়, তাঁর নামে দুটি মোটরসাইকেল নিবন্ধিত রয়েছে। এর একটি সুজুকি জিক্সার এবং অন্যটি ইয়ামাহা ব্র্যান্ডের। কিন্তু হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটি ছিল হোন্ডা ব্র্যান্ডের হর্নেট মডেলের। এ ছাড়া নিবন্ধন নম্বর যাচাই করে দেখা গেছে, সন্দেহভাজনের মোটরসাইকেলের নম্বরের সঙ্গে ঘটনার মোটরসাইকেলের নম্বরের একটি সংখ্যায় অমিল রয়েছে।

রিমান্ড শেষে ১৭ ডিসেম্বর তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়। একই সঙ্গে তদন্ত কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্য সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন আদালত।

এদিকে, পুলিশ জানিয়েছে, গুলিবর্ষণকারী হিসেবে এক যুবককে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, ঘটনার দিন মোটরসাইকেলটি চালাচ্ছিলেন আরেক ব্যক্তি। চিহ্নিত যুবক নিষিদ্ধ ঘোষিত একটি ছাত্র সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সদস্য এবং মহানগর উত্তর শাখার সহসভাপতি ছিলেন বলে পুলিশ দাবি করছে।

এই ঘটনার পর পুলিশ ও র‍্যাব গুলিবর্ষণকারী যুবকের স্ত্রী, মা, বাবাসহ মোট ১৪ জনকে আটক করেছে। তবে প্রধান অভিযুক্ত এখনো পলাতক। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ধারণা, তিনি ও মোটরসাইকেলচালক দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে গেছেন।

ঘটনার পর ইনকিলাব মঞ্চের সদস্যসচিব ১৪ ডিসেম্বর পল্টন থানায় হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলা করেন। পরবর্তীতে ভুক্তভোগীর মৃত্যুর পর মামলাটি হত্যা মামলায় রূপান্তর করা হয়। বর্তমানে মামলাটি তদন্ত করছেন গোয়েন্দা পুলিশের মতিঝিল জোনাল টিমের একজন পরিদর্শক।

এই হত্যাকাণ্ডকে ঘিরে তদন্ত এখনো চলমান। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানিয়েছে, ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারে তারা কাজ করে যাচ্ছে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments