Sunday, December 21, 2025
spot_img
Homeবিশেষ প্রতিবেদনবুর্জ খলিফার রেকর্ড ভাঙতে জেদ্দা টাওয়ার

বুর্জ খলিফার রেকর্ড ভাঙতে জেদ্দা টাওয়ার

বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ভবনের তালিকায় পরিবর্তনের আভাস দিচ্ছে সৌদি আরবের উচ্চাভিলাষী স্থাপনা জেদ্দা টাওয়ার। দীর্ঘ বিরতির পর নতুন উদ্যমে শুরু হওয়া এই প্রকল্পের নির্মাণকাজ এখন দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। নির্ধারিত লক্ষ্য অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যেই ভবনটির কাজ শেষ করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। সেই লক্ষ্য সামনে রেখেই ইতোমধ্যে নির্মাণকাজ প্রায় ৮০ তলা পর্যন্ত পৌঁছেছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ভবন হিসেবে স্বীকৃত সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে অবস্থিত বুর্জ খলিফা। মরুভূমির বুকে দাঁড়িয়ে থাকা এই আইকনিক স্থাপনাটি ২০১০ সালের ৪ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়। প্রায় ৮২৮ মিটার বা ২ হাজার ৭১৭ ফুট উচ্চতার এই ভবনে রয়েছে ১৬০টির বেশি তলা। দীর্ঘদিন ধরেই এটি আধুনিক প্রকৌশল ও স্থাপত্যশৈলীর এক অনন্য উদাহরণ হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে।

তবে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম নিউজউইকের প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, জেদ্দা টাওয়ারের পরিকল্পিত উচ্চতা প্রায় ১ কিলোমিটার। অর্থাৎ নির্মাণ সম্পন্ন হলে এটি বুর্জ খলিফার উচ্চতাকে ছাড়িয়ে যাবে। কয়েক বছর বন্ধ থাকার পর ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে পুনরায় এই প্রকল্পের নির্মাণকাজ শুরু হয়। নতুন করে কাজ শুরুর পর থেকে অগ্রগতির গতি উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের তথ্য অনুযায়ী, জেদ্দা টাওয়ারে বর্তমানে প্রতি সপ্তাহে গড়ে একটি করে নতুন তলা যুক্ত হচ্ছে। এই ধারাবাহিক অগ্রগতি বজায় থাকলে ২০২৮ সালের মধ্যেই নির্মাণকাজ শেষ করার লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হবে বলে আশা করা হচ্ছে। তখন এটি আনুষ্ঠানিকভাবে বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ভবনের স্বীকৃতি পেতে পারে। উল্লেখ্য, শুরুতে এই সুউচ্চ ভবনের নাম ছিল কিংডম টাওয়ার। পরে নাম পরিবর্তন করে জেদ্দা টাওয়ার রাখা হয়।

জেদ্দা টাওয়ার নির্মাণে যুক্ত রয়েছে সৌদি আরবের একটি বড় নির্মাণ প্রতিষ্ঠান, লেবাননভিত্তিক আন্তর্জাতিক প্রকৌশল ও স্থাপত্য সংস্থা এবং যুক্তরাষ্ট্রের একটি নির্মাণ কোম্পানি। যৌথভাবে তারা এই মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব পালন করছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী ভবনটিতে মোট ১৫৭টি তলা থাকবে, যেখানে আবাসিক ইউনিট, বাণিজ্যিক স্পেস, হোটেল এবং পর্যবেক্ষণ ডেকসহ নানা সুবিধা যুক্ত করার কথা রয়েছে।

তবে এই প্রকল্পের পথচলা একেবারেই মসৃণ ছিল না। শুরুর দিকে নিরাপত্তা ঝুঁকি নিয়ে মতবিরোধ দেখা দেয়, যার ফলে নির্মাণকাজে গতি কমে যায়। এর পর বৈশ্বিক কোভিড-১৯ মহামারির প্রভাব প্রকল্পটিকে আরও দীর্ঘ সময়ের জন্য স্থবির করে দেয়। এসব কারণে কয়েক বছর নির্মাণকাজ পুরোপুরি বন্ধ ছিল। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর নতুন করে পরিকল্পনা ও সময়সূচি নির্ধারণ করে আবার কাজ শুরু করা হয়।

জেদ্দা টাওয়ার ছাড়াও সৌদি আরব আরও একটি সুউচ্চ ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। রাজধানী রিয়াদে নির্মাণের পরিকল্পনা থাকা এই ভবনের নাম নির্ধারণ করা হয়েছে রাইজ টাওয়ার। যদিও এটি এখনো পরিকল্পনা ও নকশা প্রণয়নের পর্যায়ে রয়েছে, তবুও দেশটির ভবিষ্যৎ নগর উন্নয়ন ও স্থাপত্য ভাবনার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

বিশ্লেষকদের মতে, এসব প্রকল্পের মাধ্যমে সৌদি আরব শুধু অবকাঠামোগত উন্নয়নই নয়, বরং বৈশ্বিক পর্যায়ে আধুনিক স্থাপত্য ও প্রকৌশলের প্রতিযোগিতায় নিজেদের অবস্থান আরও শক্ত করতে চাইছে। জেদ্দা টাওয়ারের নির্মাণ অগ্রগতি সেই লক্ষ্য বাস্তবায়নেরই একটি দৃশ্যমান উদাহরণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments