Sunday, December 21, 2025
spot_img
Homeআন্তর্জাতিকট্রাম্পের ভাষণে আট যুদ্ধ থামানোর দাবি

ট্রাম্পের ভাষণে আট যুদ্ধ থামানোর দাবি

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর দ্বিতীয় মেয়াদের প্রথম দশ মাসে বিশ্বজুড়ে অন্তত আটটি যুদ্ধ বন্ধ করতে পেরেছেন বলে আবারও দাবি করেছেন। জনপ্রিয়তা নিয়ে চাপের মধ্যেই তিনি আগামী ২০২৬ সালের প্রশাসনিক কর্মসূচির রূপরেখা তুলে ধরতে মার্কিন জনগণের উদ্দেশে ভাষণ দেন। সেই ভাষণেই নিজের প্রশাসনের সাফল্য হিসেবে আন্তর্জাতিক সংঘাত নিরসনের এই দাবি সামনে আনেন তিনি।

হোয়াইট হাউসে বুধবার সন্ধ্যায় দেওয়া ভাষণে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, তাঁর শাসনামলে যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক প্রভাব ও শক্তি পুনরুদ্ধার হয়েছে। তিনি জানান, মাত্র দশ মাসের মধ্যে আটটি যুদ্ধ থামানো সম্ভব হয়েছে এবং একই সঙ্গে ইরানের পারমাণবিক হুমকি ও গাজার যুদ্ধের অবসান ঘটানো হয়েছে। তাঁর ভাষ্য অনুযায়ী, প্রায় তিন হাজার বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো মধ্যপ্রাচ্যে টেকসই শান্তির পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।

ভাষণে বাণিজ্যনীতি নিয়ে কথা বলতে গিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, তাঁর সবচেয়ে প্রিয় শব্দ হলো ‘ট্যারিফ’। তাঁর দাবি, শুল্কনীতির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র বৈশ্বিক বাণিজ্য ব্যবস্থায় বড় পরিবর্তন এনেছে। এই নীতির ফলেই দেশটিতে বিপুল বিনিয়োগ এসেছে এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড জোরদার হয়েছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে ১৮ ট্রিলিয়ন ডলারের রেকর্ড বিনিয়োগ নিশ্চিত করা হয়েছে। এর মাধ্যমে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি, বেতন বৃদ্ধি, শিল্প উৎপাদন সম্প্রসারণ, নতুন কারখানা স্থাপন এবং জাতীয় নিরাপত্তা আরও শক্তিশালী হয়েছে। তাঁর মতে, এই অগ্রগতির বড় অংশই শুল্কনীতির ফল। তিনি দাবি করেন, বহু দশক ধরে অন্য দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ট্যারিফ ব্যবহার করলেও এখন পরিস্থিতি বদলে গেছে।

ভাষণে তিনি বলেন, এখন প্রতিষ্ঠানগুলো জানে যে যুক্তরাষ্ট্রে বিনিয়োগ করলে শুল্ক দিতে হয় না। এর ফলেই তারা রেকর্ডসংখ্যক বিনিয়োগ নিয়ে দেশে ফিরছে এবং এমন সব শিল্প কারখানা ও প্ল্যান্ট স্থাপন করছে, যা আগে কখনো দেখা যায়নি।

তবে আন্তর্জাতিক সংঘাত নিরসনের ক্ষেত্রে তাঁর প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্নও রয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, কিছু ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র সক্রিয় মধ্যস্থতার মাধ্যমে সমাধানের পথে এগোলেও ‘আটটি যুদ্ধ বন্ধ’ করার দাবি অনেক সময় অতিরঞ্জিত বলে মনে হয়। এর আগেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট মিসর ও ইথিওপিয়ার মধ্যকার বিরোধ মেটানোর কৃতিত্ব নিয়েছিলেন, যদিও সেটি মূলত নীল নদের পানি বণ্টন নিয়ে দীর্ঘদিনের কূটনৈতিক দ্বন্দ্ব, সরাসরি যুদ্ধ নয়। একইভাবে তাঁর তালিকায় কঙ্গো প্রজাতন্ত্র ও রুয়ান্ডার মধ্যকার সংঘাত বন্ধের কথাও রয়েছে। যদিও তাঁর মধ্যস্থতায় একটি শান্তিচুক্তি হয়েছে, বাস্তবে ওই অঞ্চলে উত্তেজনা পুরোপুরি শেষ হয়নি।

ভাষণে মার্কিন প্রেসিডেন্ট তাঁর পূর্বসূরি প্রশাসনের কঠোর সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, দায়িত্ব নেওয়ার সময় তিনি একটি ‘অরাজক পরিস্থিতি’ পেয়েছিলেন, যা এখন ধীরে ধীরে ঠিক করা হচ্ছে। তাঁর অভিযোগ অনুযায়ী, আগের সরকারের সময়ে উন্মুক্ত সীমান্ত, অপরাধ বৃদ্ধি, নারীদের খেলাধুলায় ট্রান্সজেন্ডার পুরুষদের অংশগ্রহণ, দুর্বল বাণিজ্যচুক্তি এবং দুর্নীতিগ্রস্ত কেন্দ্রীয় প্রশাসনের মতো নানা সমস্যা তৈরি হয়েছিল।

অবৈধ অভিবাসন ইস্যুতে নিজের প্রশাসনের কঠোর অবস্থানের কথাও তুলে ধরেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তিনি দাবি করেন, দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব নেওয়ার পর দক্ষিণ সীমান্তে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তাঁর ভাষ্য অনুযায়ী, টানা সাত মাস ধরে কোনো অবৈধ অভিবাসী যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে পারেনি, যা আগে অনেকেই অসম্ভব বলে মনে করতেন।

এ ছাড়া তিনি বলেন, গত চার বছরে যুক্তরাষ্ট্র এমন রাজনীতিবিদদের দ্বারা শাসিত হয়েছে, যারা দেশের স্বার্থের বদলে বিভিন্ন গোষ্ঠী, অবৈধ অভিবাসী, পেশাদার অপরাধী, করপোরেট লবি এবং বিদেশি স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়েছে। তবে হোয়াইট হাউসে ফেরার পর কয়েক মাসের মধ্যেই পরিস্থিতি সবচেয়ে খারাপ অবস্থা থেকে সেরা অবস্থার দিকে এগিয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।

ভাষণের শেষভাগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট সামরিক বাহিনীর সদস্যদের জন্য একটি বিশেষ আর্থিক প্রণোদনার ঘোষণা দেন। তিনি জানান, ১৪ লাখ ৫০ হাজারের বেশি সেনাসদস্যকে ‘ওয়ারিয়র ডিভিডেন্ড’ হিসেবে এককালীন অর্থ দেওয়া হবে। তাঁর ঘোষণা অনুযায়ী, প্রতিটি সেনাকে ১ হাজার ৭৭৬ ডলার করে প্রদান করা হবে, যা বড়দিনের আগাম উপহার হিসেবে বিবেচিত হবে।

সব মিলিয়ে ভাষণে মার্কিন প্রেসিডেন্ট তাঁর প্রশাসনের সাফল্য, বিতর্কিত দাবি এবং ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা তুলে ধরেন, যা দেশটির অভ্যন্তরীণ রাজনীতি ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নতুন করে আলোচনা সৃষ্টি করেছে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments