Monday, December 22, 2025
spot_img
Homeআন্তর্জাতিকসিডনি হামলায় নেতানিয়াহুর কড়া বার্তা

সিডনি হামলায় নেতানিয়াহুর কড়া বার্তা

সিডনির বন্ডাই সমুদ্রসৈকতে ইহুদি সম্প্রদায়ের একটি উৎসবকে লক্ষ্য করে বন্দুকধারীদের হামলার ঘটনায় অস্ট্রেলিয়া ও ইসরায়েলের সম্পর্ক নতুন করে চাপের মুখে পড়েছে। এই হামলার পর দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক টানাপোড়েন আরও তীব্র হয়েছে। ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী অস্ট্রেলিয়ার উদ্দেশে কঠোর ভাষায় বক্তব্য দিয়েছেন। একই সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার ভেতরেও ইহুদিবিদ্বেষ মোকাবিলায় কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জোরালো হচ্ছে।

হামলার পর সোমবার অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানান। ২০২৩ সাল থেকে দেশটিতে ইহুদিবিদ্বেষ বাড়লেও সরকার কার্যকর উদ্যোগ নেয়নি, এমন অভিযোগ তোলেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী। এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতেই অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী বলেন, সামাজিক সম্প্রীতি রক্ষায় এবং ঘৃণাভিত্তিক অপরাধ ঠেকাতে তাঁর সরকার প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত।

এক সংবাদ সম্মেলনে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী ইহুদিবিদ্বেষ প্রতিরোধে সরকারের ইতোমধ্যে নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন। তাঁর ভাষ্য অনুযায়ী, সহিংসতায় উসকানি দেওয়া বা ঘৃণামূলক বক্তব্য ছড়ানোকে অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। পাশাপাশি নাৎসি আদর্শ সংশ্লিষ্ট প্রতীক ও ভাস্কর্য নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ইহুদি সম্প্রদায়ের উপাসনালয় ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা জোরদারে বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। তিনি আরও জানান, বন্দুক ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিদ্যমান আইন আরও কঠোর করার বিষয়েও সরকার সক্রিয়ভাবে কাজ করছে।

অস্ট্রেলিয়ার ২০২১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, দেশটিতে ইহুদি পরিচয়ে বসবাস করেন প্রায় এক লাখ ষোল হাজার নয়শো সাতষট্টি জন। আড়াই কোটির বেশি জনসংখ্যার এই দেশে ইহুদিরা মোট জনসংখ্যার শূন্য দশমিক ছেচল্লিশ শতাংশ। তাঁদের বড় একটি অংশ সিডনি ও মেলবোর্নে বসবাস করেন। বন্ডাই সৈকতের হামলার পর এসব এলাকায় বসবাসরত অনেক ইহুদি পরিবার নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

গাজায় ইসরায়েলের চলমান সামরিক অভিযানের প্রেক্ষাপটে গত সেপ্টেম্বর অস্ট্রেলিয়া ফিলিস্তিনকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়। এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে ইসরায়েল সরকার তখন তীব্র আপত্তি জানায়। একই সময়ে গাজায় বেসামরিক হতাহতের প্রতিবাদে ২০২৩ সাল থেকে অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলস প্রদেশে নিয়মিত বিক্ষোভ সমাবেশের অনুমতি দেয় স্থানীয় পুলিশ। এসব ঘটনাও দুই দেশের সম্পর্কে দূরত্ব বাড়িয়েছে।

দ্বিপক্ষীয় উত্তেজনা সবচেয়ে স্পষ্ট হয়ে ওঠে গত আগস্টে। সে সময় ইসরায়েলের দখল করা ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে কর্মরত অস্ট্রেলীয় কূটনীতিকদের ভিসা বাতিল করা হয়। এই সিদ্ধান্তকে অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী অন্যায্য ও অপ্রত্যাশিত প্রতিক্রিয়া বলে আখ্যা দেন। তাঁর বক্তব্য ছিল, ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্তের কারণেই ইসরায়েল এমন পদক্ষেপ নিয়েছে।

অস্ট্রেলিয়ার ক্ষমতাসীন লেবার পার্টি দীর্ঘদিন ধরেই বহুজাতীয় সহাবস্থান ও অভিবাসনবান্ধব নীতির পক্ষে। বিভিন্ন দেশ থেকে অভিবাসীদের গ্রহণে তুলনামূলক শিথিল নীতি অনুসরণ করে তারা। তবে বিরোধী রক্ষণশীল দলগুলোর দাবি, এই নীতির সুযোগ নিয়েই বন্ডাই সৈকতের মতো সহিংস ঘটনা ঘটছে। তারা সীমান্ত ও অভিবাসন ব্যবস্থাপনা আরও কঠোর করার আহ্বান জানাচ্ছে এবং বড়দিনের আগেই নতুন অভিবাসননীতি ঘোষণার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে।

তবে এই অভিযোগ মানতে নারাজ অস্ট্রেলিয়ার অভিবাসনবিষয়ক মন্ত্রী। তিনি জানান, হামলায় জড়িত বন্দুকধারীদের একজন অস্ট্রেলিয়াতেই জন্মগ্রহণ করা ২৪ বছর বয়সী তরুণ। অপর বন্দুকধারীর বাবা ১৯৯৮ সালে অস্ট্রেলিয়ায় অভিবাসী হিসেবে এসেছিলেন। একই সঙ্গে তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, হামলার সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে একজন বন্দুকধারীকে আটকাতে সহায়তাকারী ব্যক্তি নিজেও একজন অভিবাসী। সিরিয়া থেকে আসা ওই মুসলমান ব্যক্তি সাহসিকতার সঙ্গে পরিস্থিতি সামাল দিতে ভূমিকা রাখেন, যা অভিবাসীদের ইতিবাচক অবদানকেও সামনে আনে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments