Monday, December 22, 2025
spot_img
Homeবাংলাদেশবিজয় দিবসে ইউনূসের শ্রদ্ধার্ঘ্য স্মৃতিসৌধে

বিজয় দিবসে ইউনূসের শ্রদ্ধার্ঘ্য স্মৃতিসৌধে

মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাতে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে উপস্থিত হন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে জীবন উৎসর্গকারী বীর শহীদদের স্মৃতির প্রতি সম্মান জানাতে আজ মঙ্গলবার ভোরের আলো ফোটার আগেই এই শ্রদ্ধা নিবেদন সম্পন্ন হয়।

সকাল ৬টা ৫৬ মিনিটে জাতীয় স্মৃতিসৌধের মূল বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শ্রদ্ধা জানান প্রধান উপদেষ্টা। ফুল অর্পণের পর তিনি কিছু সময় নীরবে দাঁড়িয়ে থেকে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের আত্মত্যাগের প্রতি গভীর সম্মান প্রকাশ করেন। সেই নীরব মুহূর্তে স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়, যেখানে স্বাধীনতার জন্য আত্মোৎসর্গ করা লাখো মানুষের স্মৃতি নতুন করে অনুভূত হয়।

শ্রদ্ধা নিবেদনের সময় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর একটি সুসজ্জিত দল রাষ্ট্রীয় সালাম প্রদান করে। বিউগলে করুণ সুর বেজে ওঠে, যা শহীদদের প্রতি সম্মান জানানোর আনুষ্ঠানিকতাকে আরও গম্ভীর ও মর্যাদাপূর্ণ করে তোলে। পরে প্রধান উপদেষ্টা স্মৃতিসৌধে সংরক্ষিত দর্শনার্থী বইয়ে সই করেন, যা রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে মুক্তিযুদ্ধের প্রতি আনুগত্য ও দায়বদ্ধতার প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়।

এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দেশের প্রধান বিচারপতি, অন্তর্বর্তী সরকারের অন্যান্য উপদেষ্টারা, সেনা নৌ ও বিমানবাহিনীর প্রধানেরা, বীর মুক্তিযোদ্ধারা, বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক এবং উচ্চপদস্থ বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তারা। তাঁদের উপস্থিতিতে জাতীয় স্মৃতিসৌধে বিজয় দিবসের প্রথম প্রহরের এই আয়োজন একটি রাষ্ট্রীয় মর্যাদাসম্পন্ন অনুষ্ঠানে রূপ নেয়।

আজকের এই শ্রদ্ধা নিবেদন শুধু একটি আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং এটি জাতির ইতিহাসের সঙ্গে নতুন করে সংযোগ স্থাপনের একটি মুহূর্ত। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে যাঁরা দেশের স্বাধীনতার জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন, তাঁদের আত্মত্যাগের স্মরণেই প্রতি বছর ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস পালিত হয়। এই দিনটি বাঙালি জাতির গৌরব, সংগ্রাম ও আত্মপরিচয়ের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত।

৫৪ বছর আগে, ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর বাংলাদেশ একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্ব মানচিত্রে আত্মপ্রকাশ করে। এই স্বাধীনতা অর্জিত হয় প্রায় ৩০ লাখ শহীদের আত্মত্যাগ এবং প্রায় দুই লাখ নারীর সম্ভ্রমের বিনিময়ে। সেই ইতিহাস আজও জাতির চেতনাকে পথ দেখায় এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধ তুলে ধরার প্রেরণা জোগায়।

বিজয় দিবস উপলক্ষে আজ সারা দেশে নানা কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে। সরকারি কর্মসূচির পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় উদ্‌যাপন করছে। জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদনের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন স্থানে শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে ফুল দেওয়া, আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং বিশেষ দোয়া ও প্রার্থনার আয়োজন করা হয়েছে।

এই দিবসের মূল তাৎপর্য হলো মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করা এবং শহীদদের আদর্শে দেশ গঠনের প্রত্যয় নতুন করে গ্রহণ করা। জাতীয় স্মৃতিসৌধে প্রধান উপদেষ্টার শ্রদ্ধা নিবেদন সেই অঙ্গীকারেরই প্রতিফলন, যা রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে জাতির ইতিহাস ও আত্মত্যাগের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments