Sunday, December 21, 2025
spot_img
Homeবিশেষ প্রতিবেদনট্রাম্পের রাজনীতি গড়ছে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী

ট্রাম্পের রাজনীতি গড়ছে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আক্রমণাত্মক নীতি ও দ্রুত বাস্তবায়ন কর্মসূচি যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি ও অভিবাসনব্যবস্থায় বড় পরিবর্তন আনছে। একই সঙ্গে এসব পদক্ষেপ ডেমোক্রেটিক পার্টির ভেতরে নতুন রাজনৈতিক গতিশীলতা তৈরি করেছে। বিশেষ করে কয়েকজন ডেমোক্র্যাট গভর্নর ট্রাম্প প্রশাসনের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে জাতীয় রাজনীতিতে নিজেদের অবস্থান শক্ত করছেন। এর ফলে ২০২৮ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট দলের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে তাঁদের নাম আলোচনায় আসছে।

ক্যালিফোর্নিয়া, ইলিনয় ও মেরিল্যান্ডের গভর্নররা ট্রাম্পের নীতির বিরুদ্ধে সরব হয়ে দলীয় সমর্থকদের সক্রিয় করছেন। হোয়াইট হাউসের সঙ্গে নীতিগত পার্থক্য স্পষ্ট করে তাঁরা শুধু নিজ নিজ অঙ্গরাজ্যে নয়, বরং সারা দেশজুড়ে রাজনৈতিক নেটওয়ার্ক বিস্তৃত করার সুযোগ পাচ্ছেন। ট্রাম্প প্রশাসনের সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ায় নেওয়া এসব উদ্যোগ ডেমোক্র্যাটদের জন্য এক ধরনের রাজনৈতিক পুঁজি হয়ে উঠেছে।

আগামী বছর যুক্তরাষ্ট্রে মধ্যবর্তী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই নির্বাচন সামনে রেখে প্রেসিডেন্ট রিপাবলিকান-নিয়ন্ত্রিত অঙ্গরাজ্যগুলোকে কংগ্রেশনাল ডিস্ট্রিক্ট পুনর্নির্ধারণের জন্য চাপ দিচ্ছেন, যাতে নির্বাচনী মানচিত্র তাঁর দলের অনুকূলে যায়। একই সময়ে ডেমোক্র্যাট-নিয়ন্ত্রিত শহরগুলোতে সামরিক কায়দায় অভিবাসনবিরোধী অভিযান চালানো হচ্ছে। পাশাপাশি ফেডারেল ব্যয়ে বড় ধরনের কাটছাঁট ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে ক্ষোভ ও প্রতিরোধের পরিবেশ তৈরি করেছে। এই প্রতিরোধের নেতৃত্বে থাকা গভর্নররাই এখন জাতীয় পর্যায়ে পরিচিতি বাড়াচ্ছেন।

ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর ট্রাম্প প্রশাসনের কংগ্রেশনাল ডিস্ট্রিক্ট পুনর্নির্ধারণের প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে সরাসরি পদক্ষেপ নিয়েছেন। তিনি তাঁর অঙ্গরাজ্যে একটি ব্যালট মেজার এগিয়ে নিয়েছেন, যা আগামী কংগ্রেস নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটদের অতিরিক্ত আসন পেতে সহায়ক হতে পারে। এই উদ্যোগকে কেন্দ্র করে তিনি নিজ অঙ্গরাজ্যের বাইরেও সমর্থকদের কাছে পরিচিতি পাচ্ছেন। টেক্সাসের হিউস্টনে ডেমোক্র্যাট সমর্থকদের সামনে বক্তৃতা দিয়ে তিনি এই সাফল্য উদ্‌যাপন করেন, যা তাঁকে জাতীয় রাজনীতির আলোচনায় আরও দৃশ্যমান করেছে। ডেমোক্র্যাটিক দল থেকে ২০২৮ সালের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনাও এই প্রেক্ষাপটে জোরালোভাবে আলোচিত হচ্ছে।

ইলিনয়ের গভর্নর নিজেকে ট্রাম্পের দমনমূলক অভিবাসননীতির বিরুদ্ধে অভিবাসীদের রক্ষক হিসেবে তুলে ধরেছেন। সম্প্রতি তিনি এমন একটি আইনে স্বাক্ষর করেন, যার ফলে তাঁর অঙ্গরাজ্যে স্কুল ও আদালত প্রাঙ্গণ থেকে ফেডারেল কর্মকর্তারা কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারবেন না। এই সিদ্ধান্ত ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে ব্যাপক সমর্থন পেয়েছে। পাশাপাশি তিনি নিউ হ্যাম্পশায়ার ও মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যে দলের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মূল বক্তা হিসেবে উপস্থিত হয়ে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আরও সাহসী অবস্থান নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

মেরিল্যান্ডের গভর্নরও ট্রাম্প প্রশাসনের নীতির কড়া সমালোচক হিসেবে সামনে এসেছেন। যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সর্বশেষ শাটডাউনের সময় তিনি ফেডারেল কর্মী সংখ্যা কমানো এবং নিম্ন আয়ের পরিবারগুলোর জন্য খাদ্য সহায়তা কর্মসূচি এসএনএপি কমানোর উদ্যোগের বিরোধিতা করেন। পরে নিজের অঙ্গরাজ্যে পূর্ণ এসএনএপি সুবিধা পুনঃস্থাপন করে তিনি ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। এই পদক্ষেপকে তিনি সরাসরি প্রতিবাদ হিসেবে তুলে ধরে দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যগুলোতে ডেমোক্র্যাটদের পক্ষে প্রচার চালান।

এই গভর্নরদের সক্রিয় ভূমিকা ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি করেছে। গত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট প্রার্থীর পরাজয় এবং রিপাবলিকানদের কংগ্রেসের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর দলটি কার্যত একটি দিকনির্দেশনা খুঁজছিল। ট্রাম্পের নীতির বিরোধিতা করতে গিয়ে এই গভর্নররা সেই শূন্যতা আংশিকভাবে পূরণ করছেন।

টেক্সাসের হ্যারিস কাউন্টির ডেমোক্র্যাটিক দলের চেয়ারম্যান এক জনসভায় গভর্নরের বক্তৃতা প্রসঙ্গে বলেন, এমন উদ্দীপনা তিনি আগে কখনো দেখেননি। টেক্সাসের মতো অঙ্গরাজ্যে ডেমোক্র্যাটরা মধ্যবর্তী ও ভবিষ্যৎ নির্বাচনে নিজেদের অবস্থান শক্ত করতে চাইছে, আর এই ধরনের সফর সেই কৌশলের অংশ হিসেবেই দেখা হচ্ছে।

ডেমোক্র্যাটিক কৌশলবিদদের মতে, ট্রাম্পের শাসনামলে দলটি নিজেদের পরিচয় ও লক্ষ্য নিয়ে যে হতাশার মুখে পড়েছিল, এই গভর্নররা সেটিকেই রাজনৈতিক শক্তিতে রূপ দিচ্ছেন। এক জন পোলস্টারের ভাষায়, ডেমোক্র্যাট ভোটাররা তাঁদের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছ থেকে সবচেয়ে বেশি যা চান, তা হলো ট্রাম্পের ক্ষমতার ওপর কার্যকর নিয়ন্ত্রণ আরোপ।

এই প্রেক্ষাপটে শুধু ক্যালিফোর্নিয়া, ইলিনয় ও মেরিল্যান্ডের গভর্নরই নন, আরও কয়েকজন ডেমোক্র্যাট গভর্নরের নাম ২০২৮ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সামনে রেখে আলোচনায় আসছে। মিশিগান, পেনসিলভানিয়া ও কেনটাকির গভর্নরদেরও সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে দেখা হচ্ছে। সব মিলিয়ে বলা যায়, ট্রাম্পের রাজনৈতিক কৌশলই এখন ডেমোক্র্যাটদের ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের মঞ্চ তৈরি করে দিচ্ছে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments