সিরিয়ায় সশস্ত্র গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের হামলায় দুই মার্কিন সেনা ও একজন মার্কিন বেসামরিক দোভাষী নিহত হওয়ার ঘটনায় কঠোর প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, এ হামলার জন্য আইএসকে কঠোর মূল্য দিতে হবে এবং যুক্তরাষ্ট্র এর জবাব দিতেই প্রস্তুত।
শনিবার সিরিয়ায় মার্কিন বাহিনীর ওপর এ হামলার ঘটনা ঘটে। সিরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের পতনের পর গত এক বছরে এটি ছিল এমন প্রথম হামলা, যেখানে মার্কিন সেনাদের প্রাণহানি ঘটেছে। ফলে ঘটনাটি ওয়াশিংটনের জন্য নতুন করে উদ্বেগ তৈরি করেছে এবং সিরিয়ায় চলমান নিরাপত্তা পরিস্থিতির নাজুক অবস্থাও সামনে এনেছে।
যুক্তরাষ্ট্র সরকার ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের তথ্যে জানা গেছে, ওই হামলায় আরও তিনজন মার্কিন সেনা আহত হয়েছেন। এ ছাড়া অন্তত দুজন সিরীয় সেনাও আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। আহতদের অবস্থা স্থিতিশীল বলে জানানো হলেও ঘটনার গুরুত্ব কমে যায়নি।
হামলার তথ্য প্রথম প্রকাশ করে মার্কিন প্রতিরক্ষা বাহিনীর কেন্দ্রীয় কমান্ড। তারা এক বিবৃতিতে জানায়, হামলাটি ছিল পরিকল্পিত ও চোরাগোপ্তা ধরনের। কেন্দ্রীয় কমান্ডের ভাষ্য অনুযায়ী, ইসলামিক স্টেটের একজন বন্দুকধারী এ হামলা চালিয়েছে। হামলার ধরন ও স্থান নির্বাচন থেকে বোঝা যায়, সন্ত্রাসী গোষ্ঠীটি এখনো সুযোগের অপেক্ষায় সক্রিয় রয়েছে।
এ ঘটনার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বলেন, আহত মার্কিন সেনারা ভালো আছেন বলে তাঁকে জানানো হয়েছে। তবে তিনি একই সঙ্গে সতর্ক করে দেন, এ হামলার জন্য দায়ীদের কোনোভাবেই ছাড় দেওয়া হবে না। তাঁর ভাষায়, এটি যুক্তরাষ্ট্র ও সিরিয়ার বিরুদ্ধে ইসলামিক স্টেটের একটি সরাসরি হামলা।
ওই পোস্টে তিনি আরও উল্লেখ করেন, হামলাটি সিরিয়ার এমন একটি বিপজ্জনক এলাকায় ঘটেছে, যা পুরোপুরি সরকারের নিয়ন্ত্রণে নেই। ফলে সেখানে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর তৎপরতা চালানোর সুযোগ তৈরি হচ্ছে। তিনি জানান, সিরিয়ার বর্তমান রাষ্ট্রপ্রধান এই হামলার ঘটনায় গভীরভাবে ক্ষুব্ধ ও উদ্বিগ্ন। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এ হামলার জবাব অত্যন্ত কঠোর হবে বলেও তিনি স্পষ্ট করেন।
একই সুরে হুঁশিয়ারি দেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী। তিনি বলেন, মার্কিন সেনা কিংবা নাগরিকদের ওপর হামলা চালানো যে বা যাঁরাই হোক না কেন, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে তিনি লেখেন, বিশ্বের যেকোনো স্থানে মার্কিন নাগরিককে লক্ষ্যবস্তু করলে যুক্তরাষ্ট্র হামলাকারীদের খুঁজে বের করবে এবং নির্মমভাবে শাস্তি দেবে।
পরে প্রতিরক্ষামন্ত্রী আরও জানান, হামলার পর সহযোগী বাহিনীগুলো দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানায় এবং হামলাকারীকে হত্যা করা হয়েছে। যদিও এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য তখনো প্রকাশ করা হয়নি।
পেন্টাগনের মুখপাত্র এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে বলেন, হামলাটি সিরিয়ার কেন্দ্রীয় হোমস অঞ্চলের পালমিরা এলাকার কাছাকাছি সংঘটিত হয়েছে। তবে এতে জড়িত ব্যক্তিদের পরিচয় ও হামলার পেছনের নেটওয়ার্ক সম্পর্কে এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে এবং প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহের কাজ চলছে।
মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর জানিয়েছে, পুরো ঘটনা নিয়ে আনুষ্ঠানিক তদন্ত শুরু হয়েছে। হামলার পরিকল্পনা, বাস্তবায়ন এবং এতে আইএসের কতটা সম্পৃক্ততা রয়েছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। একই সঙ্গে সিরিয়ায় অবস্থানরত মার্কিন বাহিনীর নিরাপত্তা ব্যবস্থাও নতুন করে পর্যালোচনা করা হচ্ছে।
এই হামলার মধ্য দিয়ে আবারও স্পষ্ট হয়েছে যে, সিরিয়ায় ইসলামিক স্টেট পুরোপুরি নির্মূল হয়নি এবং সুযোগ পেলেই তারা হামলা চালাতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে দেওয়া কড়া হুঁশিয়ারির পর পরিস্থিতি কোন দিকে গড়ায়, সেটিই এখন আন্তর্জাতিক মহলের নজরের কেন্দ্রবিন্দু।



