মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অস্ত্রবিরতির ঘোষণা দিলেও থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যকার সীমান্ত সংঘর্ষ থামেনি। অস্ত্রবিরতিতে সম্মতির কথা যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে জানানো হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই কম্বোডিয়া সরকার অভিযোগ করেছে, থাইল্যান্ড তাদের ভূখণ্ডে বোমা হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। এই দাবি নতুন করে পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে এবং দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার এই অঞ্চলে উত্তেজনা প্রশমনের প্রশ্নে অনিশ্চয়তা বাড়িয়েছে।
দীর্ঘদিনের সীমান্ত বিরোধকে কেন্দ্র করে থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে সাম্প্রতিক সময়ে আবারও সংঘর্ষ শুরু হয়। দুই দেশের প্রায় ৮০০ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্তজুড়ে এই বিরোধ বহু বছর ধরে চলমান। নতুন করে শুরু হওয়া এই সংঘাতে এখন পর্যন্ত প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে। সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে বসবাসকারী সাধারণ মানুষ নিরাপত্তাহীনতার মুখে পড়েছে এবং অনেকেই ঘরবাড়ি ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে চলে যেতে বাধ্য হয়েছে।
সংঘর্ষের দায় নিয়ে দুই দেশই একে অপরকে অভিযুক্ত করেছে। কম্বোডিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক বিবৃতিতে জানায়, ২০২৫ সালের ১৩ ডিসেম্বর থাইল্যান্ডের সেনাবাহিনী দুটি এফ-১৬ যুদ্ধবিমান ব্যবহার করে কম্বোডিয়ার বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে সাতটি বোমা নিক্ষেপ করেছে। মন্ত্রণালয়ের দাবি অনুযায়ী, থাই সামরিক বিমানগুলোর হামলা তখনো বন্ধ হয়নি এবং সীমান্ত এলাকায় সামরিক তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।
এই নতুন করে শুরু হওয়া সহিংসতায় অন্তত ২০ জন নিহত হয়েছেন বলে বিভিন্ন প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছে। সীমান্ত অঞ্চলে বসবাসকারী মানুষদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে এবং মানবিক সংকট আরও গভীর হয়েছে।
এমন পরিস্থিতির মধ্যেই গত শুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দেন যে থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়া তাদের সীমান্তে লড়াই বন্ধ করতে সম্মত হয়েছে। তিনি জানান, সাম্প্রতিক উত্তেজনা নিরসনের লক্ষ্যে তিনি থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ও কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেছেন। তাঁর ভাষ্য অনুযায়ী, দুই দেশই শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে সব ধরনের গোলাগুলি বন্ধ করতে এবং গত জুলাই মাসে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর মধ্যস্থতায় হওয়া শান্তিচুক্তিতে ফিরে যেতে সম্মত হয়েছে।
ট্রাম্প আরও বলেন, উভয় দেশই শান্তির পথে এগোতে এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক বজায় রাখতে আগ্রহী। এই প্রক্রিয়ায় সহযোগিতার জন্য তিনি মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান। তবে বাস্তব পরিস্থিতিতে সংঘর্ষ অব্যাহত থাকার অভিযোগ উঠায় তাঁর ঘোষণার কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ফোনালাপের পর থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্ব সম্প্রদায়ের উচিত স্পষ্টভাবে ঘোষণা করা যে কম্বোডিয়া অস্ত্রবিরতির শর্ত মেনে চলবে। তিনি আরও বলেন, যে পক্ষ চুক্তি লঙ্ঘন করেছে, সমস্যার সমাধানের দায়িত্বও সেই পক্ষেরই নেওয়া উচিত, ভুক্তভোগী পক্ষের নয়।
উল্লেখ্য, গত জুলাই মাসে থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে টানা পাঁচ দিনের সহিংসতার পর যুক্তরাষ্ট্র, চীন এবং আঞ্চলিক জোট আসিয়ানের সভাপতিত্বকারী দেশ মালয়েশিয়ার মধ্যস্থতায় একটি অস্ত্রবিরতি চুক্তি হয়। পরে অক্টোবর মাসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট দুই দেশের মধ্যে একটি যৌথ ঘোষণাকে সমর্থন দেন। তবে সীমান্তে মাইন বিস্ফোরণে থাই সেনারা আহত হওয়ার পরের মাসে থাইল্যান্ড সেই চুক্তি স্থগিত করে।
এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ফোনালাপের পর কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে বলেন, কম্বোডিয়া সব সময় বিরোধ নিষ্পত্তিতে শান্তিপূর্ণ পথ অনুসরণ করে এসেছে। তিনি কূটনৈতিক সমাধানের ওপর জোর দেন এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা রক্ষার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেন।
অন্যদিকে, থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী গতকাল দেশটির পার্লামেন্ট ভেঙে দিয়েছেন। এর ফলে আগামী বছরের শুরুতে সাধারণ নির্বাচন আয়োজনের পথ সুগম হলো। চলমান রাজনৈতিক পরিবর্তন এবং সীমান্ত সংঘাত একসঙ্গে দেশটির অভ্যন্তরীণ ও পররাষ্ট্রনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে বলে বিশ্লেষকেরা মনে করছেন।



