Wednesday, December 24, 2025
spot_img
Homeবিশেষ প্রতিবেদনব্রিটিশ জাদুঘরে ৬০০ শিল্পকর্ম চুরি

ব্রিটিশ জাদুঘরে ৬০০ শিল্পকর্ম চুরি

যুক্তরাজ্যের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত একটি প্রখ্যাত জাদুঘর থেকে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য ও কমনওয়েলথ যুগের ৬০০টির বেশি মূল্যবান শিল্পকর্ম চুরি হয়েছে। স্থানীয় পুলিশ এই চুরির বিষয়ে সতর্কতা জারি করেছে এবং চারজন সন্দেহভাজন ব্যক্তির ছবি সাধারণ মানুষের নজরে এনেছে। পুলিশের পক্ষ থেকে যেকোনো তথ্য দিতে নাগরিকদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে, যাতে চোরদের ধরতে সাহায্য পাওয়া যায়।

পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চুরি যাওয়া শিল্পকর্মগুলোর সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক মূল্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এসব নিদর্শন জাদুঘরের সংরক্ষণাগার থেকে ২৫ সেপ্টেম্বর ভোরের দিকে চুরি করা হয়। তবে চুরির দুই মাসেরও বেশি সময় পেরিয়ে কেন পুলিশের পক্ষ থেকে এতদিন ধরে কোনো ছবি প্রকাশ করা হয়নি, তা স্পষ্টভাবে জানানো হয়নি। শুধুমাত্র এটুকুই বলা হয়েছে যে, চুরির সময় ওই এলাকায় কিছু সন্দেহভাজন ব্যক্তি দেখা গিয়েছিল এবং তাদের সঙ্গে কথা বলতে পুলিশ আগ্রহী।

ব্রিস্টল সিটি কাউন্সিল নিশ্চিত করেছে, চুরি যাওয়া শিল্পকর্মের মধ্যে রয়েছে পদক, ব্যাজ, পিন, গয়না, খোদাই করা হাতির দাঁত, রূপার জিনিসপত্র, ব্রোঞ্জের মূর্তি এবং ভূতাত্ত্বিক নমুনা। কাউন্সিলের সংস্কৃতি ও সৃজনশীল শিল্প বিভাগের প্রধান জানিয়েছেন, এই নিদর্শনগুলো ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সঙ্গে বিভিন্ন দেশের দুই শতাব্দীর পুরোনো সম্পর্কের ইতিহাস বহন করে।

জাদুঘরের কর্মকর্তারা আরও জানিয়েছেন, এসব জিনিস সাংস্কৃতিক দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং অনেক দেশের মানুষের কাছে এর বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তা বলেছেন, এসব নিদর্শনের অধিকাংশই সাধারণ মানুষের দানকৃত। এগুলো যুক্তরাজ্যের ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে বিবেচিত। তাই কেউ যদি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়ে সাহায্য করেন, তা চোরদের সনাক্ত ও আটক করতে সহায়ক হবে।

ব্রিস্টল শহরের ইতিহাসের সঙ্গে দাস ব্যবসার সম্পর্ক গভীর। একসময় এখানকার বন্দর থেকে লাখ লাখ আফ্রিকানকে জোর করে যুক্তরাষ্ট্র ও ক্যারিবীয় অঞ্চলে পাঠানো হতো। সেই ব্যবসার আয়ের ফলে শহরের অনেক পুরোনো ভবন নির্মিত হয়েছিল। এই প্রেক্ষাপটে জাদুঘরে আফ্রিকা ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ঐতিহাসিক পোশাক, ছবি ও অন্যান্য সামগ্রী সংরক্ষিত রয়েছে।

এর আগে ২০২০ সালে বর্ণবাদবিরোধী বিক্ষোভের সময় ব্রিস্টলে ১৭ শতাব্দীর দাস ব্যবসায়ী একজনের মূর্তি ভেঙে নদীতে ফেলে দেওয়া হয়েছিল। সেই ঘটনা আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাপক আলোচিত হয়েছিল। এবার জাদুঘরে চুরি নতুন করে শহরটিকে সংবাদ ও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে এসেছে।

চুরি যাওয়া শিল্পকর্মের ঘটনা শুধু দেশের ইতিহাস ও সংস্কৃতিকে প্রভাবিত করছে না, বরং এটি আন্তর্জাতিকভাবে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সম্পর্ক ও ঐতিহ্য সংরক্ষণের গুরুত্বকেও সামনে নিয়ে এসেছে। চুরি হওয়া এই নিদর্শনগুলোর মধ্যে এমন জিনিস রয়েছে যা বহু প্রজন্মের ইতিহাস এবং সাংস্কৃতিক পরিচয়ের অংশ। জাদুঘর ও পুলিশ উভয়েই আশা করছে, সাধারণ মানুষের সহায়তায় চোরদের সনাক্ত করা সম্ভব হবে এবং মূল্যবান শিল্পকর্মগুলো পুনরায় জাদুঘরে ফিরানো যাবে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments