প্রযুক্তি দুনিয়ার আলোচিত ব্যবসায়ী নেতা পৃথিবীতে ভিনগ্রহের প্রাণীর আগমন নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চলা বিতর্কে নতুন মাত্রা যোগ করেছেন। বিভিন্ন সময়ে আকাশে অদ্ভুত বস্তুর উপস্থিতি নিয়ে যেসব দাবি উঠে, সেগুলো সম্পর্কে তাঁর অবস্থান স্পষ্ট। তিনি জানিয়েছেন, ব্যক্তিগতভাবে কিংবা তাঁর প্রতিষ্ঠানের মহাকাশবিষয়ক কর্মকাণ্ডে ভিনগ্রহের প্রাণীর উপস্থিতির কোনো প্রমাণ তাঁরা কখনো পাননি। তাঁর মতে, বেশির ভাগ ইউএফও ঘটনার পেছনে থাকে ভুল ব্যাখ্যা বা সাধারণ উৎসকে ঘিরে সৃষ্ট বিভ্রান্তি।
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া এক ভিডিওতে এই ব্যবসায়ী নেতা বলেন, আকাশে অচেনা বস্তু দেখা যাওয়ার খবর প্রায়ই আলোচনায় আসে ঠিকই, কিন্তু সেসব ঘটনার প্রকৃত ব্যাখ্যা সাধারণত অতটা নাটকীয় নয়। তাঁর মন্তব্য সামনে আসার পর জোরালোভাবে আলোচনায় উঠেছে ইউএফওর অস্তিত্ব কি বাস্তব, নাকি কেবল ভুল উপলব্ধি। এই প্রসঙ্গে তিনি জানান, স্পেসএক্সের শীর্ষস্থানীয় কারিগরি দলও কখনো এমন কোনো ইঙ্গিত পায়নি যা ভিনগ্রহের প্রাণীর আগমনের প্রমাণ হিসেবে ধরা যায়।
মহাকাশ গবেষণা ও প্রযুক্তি উন্নয়নে সক্রিয় এই প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যেই হাজারো স্যাটেলাইট ও রকেট উৎক্ষেপণ করেছে, প্রতিদিন পর্যবেক্ষণ করছে মহাকাশের বিশাল অংশ। তাঁর মতে, প্রকৃতপক্ষে যদি ভিনগ্রহের প্রাণীর উপস্থিতি থাকত, তবে আকাশ পর্যালোচনায় নিয়োজিত এই বিশেষজ্ঞ দলই তা সবার আগে শনাক্ত করতে পারত। এমন কোনো চিহ্ন এখনো না পাওয়াকে তিনি গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ হিসেবে দেখেছেন।
ইউএফও দেখার পেছনে সাধারণ কারণ থাকে বলেই মনে করেন এই উদ্যোক্তা। তাঁর মতে, উন্নত সামরিক বিমান চলাচল, হাইপারসনিক প্রযুক্তির পরীক্ষা কিংবা বিভিন্ন প্রতিরক্ষা প্রকল্পের যান্ত্রিক কার্যক্রম সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করতে পারে। যা অনেকের কাছে রহস্যময় মনে হলেও বাস্তবতা প্রায়ই খুব সাধারণ। তিনি বলেন, মহাকাশ শিল্পে যারা কাজ করেন, তাঁদের কাছে এসব ঘটনার ব্যাখ্যা স্পষ্ট থাকে, ফলে এগুলোকে ভিনগ্রহের প্রাণীর উপস্থিতি ভেবে নেওয়া ঠিক নয়।
মার্কিন সরকারের অনুসন্ধানকারীরাও দীর্ঘ সময় ধরে একই ধরনের বিশ্লেষণ দিয়ে আসছেন। তিনি উল্লেখ করেন, বিভিন্ন ইউএফও রিপোর্টের বেশির ভাগই পরে ড্রোন, বেলুন, আলোর প্রতিফলন কিংবা সেন্সরের ত্রুটি হিসেবে শনাক্ত হয়। সাধারণ মানুষের কাছে যা অসাধারণ মনে হয়, বিশেষজ্ঞদের কাছে তা প্রায়ই স্বাভাবিক এক ঘটনা হিসেবে ধরা পড়ে।
এই মন্তব্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দপ্তরের অল ডোমেইন অ্যানোমালি রেজল্যুশন অফিসের অনুসন্ধানের সঙ্গে মিল রয়েছে। সংস্থাটি ৮০০টির বেশি ঘটনার তদন্ত করেও ভিনগ্রহের প্রাণীর উপস্থিতির কোনো সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পায়নি। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা গেছে, যে অচেনা বস্তুকে ইউএফও মনে করা হয়েছিল, তা ছিল স্বাভাবিক কোনো উৎস বা ব্যাখ্যার সঙ্গে সম্পর্কিত, যা ভিনগ্রহের জীবন ধারণার সঙ্গে সংযুক্ত নয়।
তবে ইউএফওর গল্পগুলোকে ভুল ব্যাখ্যা হিসেবে দেখলেও মহাবিশ্বে জীবনের সম্ভাবনা সম্পর্কে বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানকে তিনি বিশেষ গুরুত্ব দেন। তাঁর মতে, মহাকাশ অভিযানের ভবিষ্যৎ, নতুন প্রজন্মের টেলিস্কোপ কিংবা মঙ্গল গ্রহে পরিচালিত অনুসন্ধান হয়তো একদিন ভিন্ন গ্রহে জীবনের অস্তিত্বের বিষয়ে নতুন সম্ভাবনা উন্মোচন করতে পারে। তিনি মনে করিয়ে দেন, মানব কল্পনা ও বৈজ্ঞানিক প্রমাণকে একসঙ্গে না মিলিয়ে বরং পৃথকভাবে মূল্যায়ন করা প্রয়োজন।



