ভারতের প্রধানমন্ত্রী গতকাল বৃহস্পতিবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে টেলিফোনে কথোপকথন করেছেন বলে নিশ্চিত করেছেন। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য উত্তেজনা চলমান থাকা অবস্থায় এ আলোচনা আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে নতুন আগ্রহ তৈরি করেছে।
রাশিয়া থেকে তেল আমদানি করার জেরে যুক্তরাষ্ট্র ভারতের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ রপ্তানিপণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ আমদানি শুল্ক আরোপ করেছে। নয়াদিল্লি সেই শুল্ক থেকে ছাড় পাওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে এবং এই প্রেক্ষাপটেই দুই নেতার ফোনালাপ অনুষ্ঠিত হয়।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া পোস্টে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী জানান, তাঁরা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অগ্রগতি পর্যালোচনা করেছেন এবং আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে আলোচনা করেছেন। হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা ফোনালাপের বিষয়টি নিশ্চিত করলেও আলোচনার বিস্তারিত তুলে ধরেননি।
যুক্তরাষ্ট্র আমদানি শুল্ক দ্বিগুণ করার পর থেকে দুই দেশের শীর্ষ নেতৃত্বের মধ্যে এ নিয়ে এটি তৃতীয় দফা আলোচনা। শুল্ক বৃদ্ধির কারণে ভারতের টেক্সটাইল, রাসায়নিক, চিংড়ি এবং অন্যান্য খাদ্যপণ্য রপ্তানিতে উল্লেখযোগ্য প্রভাব পড়েছে। ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী আলোচনাকে উষ্ণ ও আন্তরিক বলে বর্ণনা করেন এবং জানান যে দুই দেশ বৈশ্বিক শান্তি, স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধির লক্ষ্যে একসঙ্গে কাজ করে যাবে।
গত জুলাইয়ের শেষ দিকে ভারত যুক্তরাষ্ট্রের কৃষিপণ্যের বাজার উন্মুক্ত করতে অস্বীকৃতি জানানোয় দুই দেশের বাণিজ্য আলোচনা ভেস্তে যায়। সেই সঙ্গে ভারত-পাকিস্তান সংঘাতের সময় মার্কিন মধ্যস্থতার ভূমিকা স্বীকারে নয়াদিল্লির অনীহাও সম্পর্ককে আরও চাপের মুখে ফেলেছিল।
এদিকে দুই পক্ষের আলোচনা এখনো চলমান। রাশিয়ার প্রধান জ্বালানি তেল কোম্পানি রসনেফট এবং লুকঅয়েলের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর ভারতের তেল শোধনাগারগুলো রাশিয়া থেকে আমদানি কমাতে শুরু করেছে বলেও ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। ওয়াশিংটন মনে করছে, ইউক্রেন যুদ্ধের পর মস্কোর ওপর চাপ বাড়াতে এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর ভূমিকা রাখবে।
চলতি সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের উপবাণিজ্য প্রতিনিধির ভারত সফরের মধ্য দিয়ে আলোচনার তৎপরতা আরও জোরালো হয়েছে। রাশিয়া থেকে তেল কেনার কারণে যুক্তরাষ্ট্র যে শুল্ক আরোপ করেছে, তা থেকে ছাড় পাওয়ার বিষয়টি ভারত গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনায় তুলেছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধির দপ্তর এখনো বৈঠক নিয়ে অবস্থান জানায়নি।
মার্কিন প্রশাসনের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, চলতি বছর শেষ হওয়ার আগেই দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যচুক্তি চূড়ান্ত করা সম্ভব হবে কি না, তা এখনো অনিশ্চিত। যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য দপ্তরের সাবেক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা এবং পরবর্তী সময়ে একটি আইনি প্রতিষ্ঠানের সদস্য হিসেবে কর্মরত এক বিশেষজ্ঞও মনে করেন, বৈশ্বিক অর্থনীতিতে ভারতের ক্রমবর্ধমান গুরুত্ব বিবেচনায় শেষ পর্যন্ত একটি সমঝোতায় পৌঁছানো সম্ভব হবে।
এদিকে গত সপ্তাহে রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের রাষ্ট্রীয় সফরও নয়াদিল্লি-ওয়াশিংটন সম্পর্কের আলোচনায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে। তিনি ভারতকে অব্যাহত জ্বালানি সরবরাহের আশ্বাস দিয়েছেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের চাপ উপেক্ষা করার সংকেত দিয়েছেন।
ভারত সরকারের তথ্যমতে, চলতি বছরের অক্টোবর মাসে যুক্তরাষ্ট্রে ভারতীয় পণ্য রপ্তানি আগের বছরের তুলনায় প্রায় ৯ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৬৩১ কোটি ডলারে। গত বছর একই সময়ে রপ্তানি ছিল ৬৯১ কোটি ডলার। যদিও সেপ্টেম্বরের তুলনায় অক্টোবরে রপ্তানি কিছুটা বেড়েছে।
ওয়াশিংটন চাইছে ভারত মার্কিন পণ্যের ওপর আরোপিত শুল্ক কমাবে এবং সয়াবিনসহ মার্কিন কৃষিপণ্যের জন্য বাজার উন্মুক্ত করবে। দুই দেশের চলমান আলোচনা এই লক্ষ্য পূরণের সম্ভাবনা তৈরির দিকেই ইঙ্গিত দিচ্ছে।



