যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের বাফেলো এলাকায় অবস্থিত তাকওয়া মসজিদের সামনে দীর্ঘ সময় অবস্থান করেছে অভিবাসন পুলিশ আইস। দুটো গাড়ি নিয়ে তারা দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এলাকাটিতে টহল দেয় এবং জোহর নামাজ শেষে বের হওয়া মুসল্লিদের থামিয়ে ধারাবাহিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করে। এ সময় ষাটোর্ধ্ব এক বাংলাদেশি গ্রিনকার্ডধারীকেও প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়। তবে কাউকে আটক করার ঘটনা ঘটেনি।
৭ ডিসেম্বরের ওই দিন মসজিদের আশপাশে আইস পুলিশের উপস্থিতি স্থানীয়দের মধ্যে কৌতূহল এবং উদ্বেগের সৃষ্টি করে। তাকওয়া মসজিদের সামনে অবস্থান করলেও পুলিশ কোনো ব্যক্তিকে জোরপূর্বক আটক বা গাড়িতে তোলার চেষ্টা করেনি। তবুও তাদের দীর্ঘ সময়ের অবস্থান মুসল্লিদের দৃষ্টি এড়ায়নি।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে পরিচিত যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী প্রথম আলোকে জানান, তিনি তার এক আত্মীয়ের সঙ্গে তুষারপাত উপভোগ করতে বাইরে বের হলে দেখেন, মসজিদের সামনে কয়েকজন কর্মকর্তা এক বৃদ্ধ বাংলাদেশিকে ঘিরে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন। তাঁদের মধ্যে একজনের পোশাকে পুলিশ লেখা ছিল বলে জানান তিনি। তার ভাষ্য, আইস সাধারণত নির্দিষ্ট ধরনের গাড়ি ব্যবহার করে এবং ঘটনাস্থলে থাকা গাড়িগুলো সেই বর্ণনার সঙ্গেই মিলে যায়।
তিনি আরও বলেন, তিনি পরিস্থিতিটি মোবাইলে ধারণ করতে শুরু করলে কর্মকর্তারা দ্রুত জিজ্ঞাসাবাদ শেষ করে স্থান ত্যাগ করেন। পরে তার এক আত্মীয় গাড়িগুলোকে দূর থেকে অনুসরণ করলে দেখা যায়, সেগুলো বাফেলোর একই অঞ্চলে বারবার ঘুরে অবস্থান করছে।
ঘটনার শিকার বাংলাদেশি গ্রিনকার্ডধারী ব্যক্তি জানান, মসজিদে যাওয়ার সময় তিনি দুটি গাড়িকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেন। জোহর নামাজ শেষে তাকে এবং অন্য কিছু বিদেশি মুসলিমকে আইস কর্মকর্তারা থামিয়ে প্রশ্ন করেন। তবে গ্রিনকার্ড সঙ্গে থাকায় তাকে আর কিছু বলা হয়নি। তিনি জানান, ভয় না পেলেও পরিস্থিতি অস্বস্তিকর ছিল।
ইউনিভার্সিটি অব বাফেলোর এক শিক্ষার্থী, যিনি নিয়মিত ওই মসজিদে জোহর ও মাগরিবের নামাজ আদায় করেন, বলেন যে সন্ধ্যার সময়ও আইসের গাড়িগুলো মসজিদের আশপাশে দেখা গেছে। তার মতে, মাগরিবের সময় মুসল্লির সংখ্যা বেশি হওয়ার কারণে হয়তো কর্মকর্তারা আর কাউকে জিজ্ঞাসাবাদ করেননি। সন্ধ্যার পর এলাকায় ওই গাড়িগুলো আর দেখা যায়নি বলেও তিনি জানান।
বাফেলো এলাকার মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে এই ঘটনাটি নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। যদিও কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি পাওয়া যায়নি, তবুও আইস পুলিশের হঠাৎ উপস্থিতি এবং তাদের ঘন ঘন টহল স্থানীয়দের মনে শঙ্কা তৈরি করেছে। এ ধরনের তৎপরতা কি কোনো বিশেষ অভিযানের অংশ, নাকি সাধারণ নজরদারি, তা এখনো পরিষ্কার নয়। তবে স্থানীয় মুসলমানরা মনে করেন, ধর্মীয় উপাসনালয়ের সামনে এ ধরনের কার্যক্রম সংবেদনশীলতা বিবেচনায় আরও সতর্কতার সঙ্গে হওয়া উচিত ছিল।



