ভেনেজুয়েলার বিরোধীদলীয় নেতা ও চলতি বছরের শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী মারিয়া কোরিনা মাচাদো প্রায় ১১ মাস আত্মগোপনে থাকার পর গতকাল বুধবার দিবাগত রাতে নরওয়ের রাজধানী অসলোতে পৌঁছান। তাঁর আগমনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নোবেল কমিটির প্রধান। তবে দীর্ঘ সময় আত্মগোপনে থাকা এই নেত্রী আনুষ্ঠানিক অনুষ্ঠানে সশরীরে পুরস্কার গ্রহণ করতে পারেননি।
গতকাল অসলোর সিটি হলে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার প্রদানের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়। মাচাদোর হয়ে পুরস্কার গ্রহণ করেন তাঁর মেয়ে, যিনি অনুষ্ঠানে উপস্থিত অতিথিদের সামনে পুরস্কার গ্রহণের দায়িত্ব পালন করেন। অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর জানা যায় যে মাচাদো ইতিমধ্যে অসলোতে পৌঁছে গেছেন এবং শহরের একটি হোটেলে অবস্থান করছেন।
২০২৪ সালে ভেনেজুয়েলায় অনুষ্ঠিত বিতর্কিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ক্ষমতাসীন প্রার্থী জয়ী হওয়ার পর বিরোধীদলীয় এই নেত্রী আত্মগোপনে চলে যান। তাঁর বিরুদ্ধে ২০১৪ সাল থেকেই আরোপিত ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর আছে, যা নির্বাচনের পর আরও কঠোরভাবে বহাল থাকে। নির্বাচনের পর তাঁকে জনসমক্ষে খুব একটা দেখা যায়নি। গোপনীয়ভাবে চলাফেরা করতে বাধ্য হওয়ায় তাঁকে সর্বশেষ প্রকাশ্যে দেখা গিয়েছিল গত জানুয়ারি মাসে।
গতকাল দিবাগত রাতে অসলো শহরের গ্র্যান্ড হোটেলের বারান্দায় তাঁকে দেখা যায় দৃশ্যমান উচ্ছ্বাস নিয়ে। সমর্থকদের উদ্দেশে তিনি হাসিমুখে হাত নাড়েন, শুভেচ্ছা জানান এবং নিরাপত্তার অনুমতি মিলে নিচে নেমে তাঁদের সঙ্গে কথাও বলেন। সমর্থকদের সঙ্গে ছবি তোলেন এবং দীর্ঘদিন পর প্রকাশ্যে এসে তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করেন।
৫৮ বছর বয়সী এই প্রকৌশলী দীর্ঘদিন ধরে ভেনেজুয়েলার রাজনীতিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখে আসছেন। তিনি আত্মগোপনে থাকলেও রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় ছিলেন বলে জানা গেছে। তাঁর অসলো আগমনের কিছুক্ষণ আগে নোবেল কমিটির প্রধান হোটেলের লবিতে উপস্থিত জনগণকে জানান যে মাচাদো নিরাপদে শহরে পৌঁছেছেন এবং তিনি প্রথমেই পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করবেন।
নোবেল পুরস্কার অনুষ্ঠানে সাধারণত বিজয়ীরা অসলোর বিখ্যাত গ্র্যান্ড হোটেলেই অবস্থান করে থাকেন। মাচাদোও সেখানে অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে। তবে আত্মগোপনে থাকার দীর্ঘ সময় এবং দেশে বিরাজমান সংকটপূর্ণ পরিস্থিতির কারণে তিনি সরাসরি মঞ্চে পুরস্কার নিতে না পারলেও তাঁর উপস্থিতি সমর্থকদের মধ্যে নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি করেছে।
ভেনেজুয়েলার সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং বিতর্কিত নির্বাচন মাচাদোকে গোপনে চলাফেরা করতে বাধ্য করেছিল। নির্বাচনের পর তিনি কোথায় আছেন তা নিয়েও নানা ধরনের জল্পনা ছিল। তাঁর অসলোতে উপস্থিত হওয়া শুধু নোবেল পুরস্কার গ্রহণের আনুষ্ঠানিকতার জন্যই নয়, বরং তাঁর রাজনৈতিক অবস্থান এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তার প্রভাবের প্রতীক হিসেবেও দেখা হচ্ছে।
অসলোতে সমর্থকদের সামনে দাঁড়িয়ে তিনি যে দৃশ্যমান আত্মবিশ্বাস প্রদর্শন করেছেন, তা তাঁর ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক ভূমিকা নিয়ে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা থাকায় তাঁর দেশে ফেরা এখনো অনিশ্চিত, তবে নোবেল শান্তি পুরস্কার প্রাপ্তি তাঁর প্রতি আন্তর্জাতিক মনোযোগ আরও বাড়িয়ে তুলেছে বলেই মনে করা হচ্ছে।



