আটলান্টিক মহাসাগরের স্কটল্যান্ডের উপকূলীয় জলসীমায় সম্প্রতি একটি ছোট সাবমেরিন আকৃতির ড্রোন ছুঁড়ে দেওয়া হয়েছে। প্রথম নজরে এটি দেখতে পানির নিচ দিয়ে চলা ক্ষেপণাস্ত্রের মতো, কিন্তু এর প্রকৃত কার্যকারিতা সম্পূর্ণ আলাদা। এই ড্রোনের নাম ‘এসজি–১ ফ্যাথম’, যা গভীর সাগরে চলতে সক্ষম এবং সেখানকার যেকোনো শত্রু উপস্থিতি শনাক্ত করতে পারে।
ফ্যাথম প্রকল্পের ব্যবস্থাপক জানিয়েছেন, ড্রোনগুলো বিশেষভাবে সাগরের নিচে টহল দিতে এবং সম্ভাব্য হুমকি সনাক্ত করতে তৈরি করা হয়েছে। এর প্রধান লক্ষ্য রাশিয়ার সাবমেরিনগুলো, যেগুলো মাঝে মাঝে যুক্তরাজ্যের জলসীমার কাছে এসে গুপ্তচরবৃত্তিমূলক অভিযান চালায়। সন্দেহ করা হয়, এসব সাবমেরিন গুরুত্বপূর্ণ সাবমেরিন কেবল এবং পাইপলাইনের তথ্য সংগ্রহের জন্য নৌযান ও গোয়েন্দা কার্যক্রমের সঙ্গে সমন্বয় করে।
গত মাসে রাশিয়ার মহাসাগর গবেষণার নৌযান ইয়ানতার উপর সন্দেহ করা হয়েছিল, এটি যুক্তরাজ্যের সাগরের তলায় থাকা তার ও পাইপলাইনের তথ্য সংগ্রহ করছিল। ওই নৌযান থেকে যুক্তরাজ্যের এয়ারফোর্সের যুদ্ধবিমানের পাইলটদের ওপর লেজার রশ্মি নিক্ষেপ করা হয়েছিল। এমন পরিস্থিতিতে ফ্যাথম ড্রোন নিঃশব্দে সাগরের নিচ দিয়ে টহল দিতে পারে এবং নানা সেন্সরের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করতে সক্ষম।
ড্রোনগুলো একসাথে কাজ করে দীর্ঘ সময় পর্যন্ত সাগরের তলার বিভিন্ন অঞ্চলে নজরদারি করতে পারে। এর সফটওয়্যার এবং নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা দশকের তথ্যভাণ্ডারের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে, যা আগের যেকোনো প্রযুক্তির তুলনায় দ্রুত হুমকি শনাক্ত করতে পারে। ফ্যাথম যদি পরীক্ষায় কার্যকর প্রমাণিত হয়, তাহলে এটি রয়্যাল নেভির ‘আটলান্টিক ব্যাস্টিয়ন’ প্রকল্পের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হতে পারে। এই নেটওয়ার্কে ড্রোন, নজরদারি বিমান এবং যুদ্ধজাহাজ একত্রে কাজ করে আটলান্টিক মহাসাগরের গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোর সুরক্ষা নিশ্চিত করে।
যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, রাশিয়ার সাবমেরিন এবং পানির নিচে অন্যান্য কার্যক্রমে নতুন তৎপরতা শুরু হওয়ায় এই নেটওয়ার্ক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। সরকার জানিয়েছে, গত দুই বছরে রাশিয়ার নৌযানের কারণে হুমকির মাত্রা ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
রাশিয়ার নৌযানের এমন কর্মকাণ্ডকে ‘অত্যন্ত বিপজ্জনক’ উল্লেখ করেছেন যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষামন্ত্রী। তিনি পোর্টসমাউথ সফরের সময় বলেন, নতুন প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ হুমকি মোকাবিলার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। রয়্যাল নেভির জাহাজে নতুন প্রযুক্তি পরীক্ষার সময় প্রদর্শিত হয়েছিল দূরনিয়ন্ত্রিত স্পিডবোট, পাইলটবিহীন হেলিকপ্টার, এবং একটি ১২ মিটার দীর্ঘ ওজনের সাবমেরিন যা মানুষ ছাড়া পরিচালনা করা যায়।
গবেষকরা মনে করছেন, কাগজে এই নতুন কৌশল সুরক্ষিত মনে হলেও বাস্তবে এটি সমস্যার সমাধান আড়াল করার মতো। রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউটের বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক জানিয়েছেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পশ্চিম আটলান্টিকের দায়িত্বে যুক্তরাজ্য যথাযথ মনোযোগ দেয়নি। বর্তমানে রয়্যাল নেভির কাছে পর্যাপ্ত জাহাজ নেই, তাই ড্রোনের মাধ্যমে সীমিত এলাকায় নজরদারি করা হচ্ছে। এই কৌশল খরচ কমাতে সহায়ক হলেও সম্পূর্ণ জলসীমা রাশিয়ার কার্যক্রম থেকে রক্ষা করতে যথেষ্ট নয়।
সারসংক্ষেপে বলা যায়, এসজি–১ ফ্যাথম ড্রোন যুক্তরাজ্যের জলসীমা রক্ষা এবং রাশিয়ার সাবমেরিন নজরদারির জন্য একটি নতুন প্রযুক্তিগত হাতিয়ার। যদিও এটি পুরোপুরি সমাধান নয়, তবুও বর্তমান প্রতিরক্ষা কৌশলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।



