প্রায় এক শতাব্দী আগে উপস্থাপিত একটি তাত্ত্বিক পরীক্ষাকে আধুনিক প্রযুক্তির সহায়তায় পুনরায় বাস্তবায়ন করে কোয়ান্টাম মেকানিকসের একটি মৌলিক নীতি নিশ্চিত করেছেন চীনের গবেষকেরা। তাদের সাম্প্রতিক এই পরীক্ষার ফলাফলে স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে কোনো কণার পথ এবং তার তরঙ্গসদৃশ আচরণ একসঙ্গে পরিমাপ করা সম্ভব নয়। বিজ্ঞানীদের মতে, এ নতুন প্রমাণ কোয়ান্টাম বস্তুর প্রকৃতি সম্পর্কে এক বিশিষ্ট তাত্ত্বিকের উপস্থাপিত ধারণাকেই সমর্থন করে।
১৯২৭ সালে ব্রাসেলসের সলভে কনফারেন্সে কোয়ান্টাম তত্ত্বের ভিত্তি নিয়ে বিজ্ঞানীদের মধ্যে তীব্র বিতর্ক শুরু হয়। ওই সময় এক প্রখ্যাত পদার্থবিদ কোয়ান্টাম মডেল নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন এবং অপর এক বিশিষ্ট গবেষকের সম্পূরকতার নীতিকে চ্যালেঞ্জ জানান। সম্পূরকতার ধারণা অনুযায়ী, ফোটনের মতো কণা একই সঙ্গে তরঙ্গ ও কণার বৈশিষ্ট্য প্রদর্শন করতে পারে, কিন্তু দুটি বৈশিষ্ট্য একই সঙ্গে মাপা যায় না।
ব্যবহারিক সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও ওই পদার্থবিদ তাঁর চিন্তামূলক ডাবল–স্লিট পরীক্ষার একটি সংশোধিত রূপ প্রস্তাব করেন। তাঁর ধারণা ছিল, বিশেষ ব্যবস্থায় দুটি বৈশিষ্ট্যেরই পরিমাপ সম্ভব হতে পারে এবং সেটি ঘটলে সম্পূরকতার নীতি প্রশ্নের মুখে পড়বে। কয়েক দশক ধরে তাঁর এই যুক্তি ছিল কেবল তত্ত্বের স্তরে। তবে চীনের ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি অব চায়নার গবেষকদের একটি দল আধুনিক উপকরণ ও নির্ভুল যন্ত্রপাতির সাহায্যে ওই ধারণাকে পরীক্ষায় রূপ দিয়েছে। দলটির নেতৃত্বে ছিলেন এক খ্যাতিমান চীনা বিজ্ঞানী।
গবেষকেরা এমন অতিসংবেদনশীল যন্ত্রাংশ তৈরি করেন, যা একক ফোটনের ক্ষুদ্রতম গতি শনাক্ত করতে সক্ষম। পরীক্ষায় দেখা যায়, কণার পথ পরিমাপের চেষ্টা শুরু হলেই ব্যতিচার প্যাটার্ন ধ্বংস হয়ে যায়। আবার ব্যতিচার প্যাটার্ন পর্যবেক্ষণ করা হলে কণার পথ নির্ণয় করা সম্পূর্ণ অসম্ভব হয়ে পড়ে। ফলাফলটি নিশ্চিত করেছে যে কণার দুটি বৈশিষ্ট্য পরস্পর সম্পূরক, এবং একটির পরিমাপের প্রচেষ্টা অন্যটিকে অদৃশ্য করে দেয়। এভাবে নতুন পরীক্ষা কোয়ান্টাম তত্ত্বের মূল ভিত্তিকে আরও দৃঢ় করে তুলেছে।
এ পরীক্ষার গুরুত্ব শুধু একটি তাত্ত্বিক বিতর্কের নিষ্পত্তিতেই সীমাবদ্ধ নয়। বরং এটি প্রমাণ করে, কোয়ান্টাম কণার এমন অস্বাভাবিক আচরণ বাস্তবতার অন্তর্নিহিত বৈশিষ্ট্য, কোনো পরীক্ষাগত ভুল বা যন্ত্রপাতির ত্রুটি নয়। গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন জার্নাল ফিজিক্যাল রিভিউ লেটারসে। পদার্থবিদদের মতে, পরীক্ষাটি বহু পুরোনো বিতর্কের ইতি টেনে কোয়ান্টাম মেকানিকসের কোপেনহেগেন ব্যাখ্যাকে শক্তিশালী বৈজ্ঞানিক ভিত্তি প্রদান করেছে।
নতুন এই অর্জনকে বিজ্ঞানমহল পদার্থবিজ্ঞানের এক বড় অগ্রগতি হিসেবে দেখছে। কারণ এটি শুধু অতীতের প্রশ্নের উত্তরই দেয়নি, বরং কোয়ান্টাম জগতের মৌলিক প্রকৃতি বোঝার পথকে আরও সুস্পষ্ট করেছে।



